শুভ নববর্ষ ১৪৩১
না মহাবিশ্ব, না প্রকৃতি - এদের কারো কোন বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ নেই, নেই জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি বা অন্য কোন মাস বা পঞ্জিকা। টিকে থাকার জন্যই সবাইকে গতিশীল থাকতে হয়, ঘুরতে হয় নিজের অক্ষকে কেন্দ্র করে, বড় পরিবারের কেন্দ্রের চারিদিকে। সৌর পরিবারের সদস্যরা সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে, আবার সৌর জগৎ ঘুরে মিল্কি ওয়ের কেন্দ্রের চারিদিকে। এক কথায় এই গতিই জীবন। আর ঘুর্ণনের কারণেই প্রকৃতিতে ঘটনাবলীর পুনরাবৃত্তি। এ থেকেই জন্ম বিভিন্ন পঞ্জিকার। সেটা ধর্ম নির্ভর নয়, ভূগোল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ধর্মের নিয়মে চলে না, বরং এদের চলাচল ধর্মের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ নির্ধারণ করে। তাই পয়লা বৈশাখ বা বাংলা পঞ্জিকাকে ধর্মের সাথে জড়ানোর চেষ্টা আসলে এক ধরনের অজ্ঞতা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ঠিক যেমনটা অন্য যেকোনো পঞ্জিকা কোন ধর্মের সাথে গুলিয়ে ফেলা। চন্দ্র ও সূর্য পৃথিবীর আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল আলোক বর্তিকা হবার কারণে বহু আগে, এমনকি ধর্মের উৎপত্তি হবার আগেই সৌর ও চান্দ্র দু ধরনের পঞ্জিকার জন্ম। বিভিন্ন সময়ে মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক, কখনো ধর্মীয় কারণে বিভিন্ন দেশের স্থানীয় পঞ্জিকার গুরুত্ব কমে গেলেও সাংস্কৃতিক জীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। হাতে গোনা যে কয়েকটি জাতির পঞ্জিকা আজ টিকে আছে, মহাসমারোহে উদযাপিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ তাদের অন্যতম। বর্তমানে সাংস্কৃতিক ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের যুগে নববর্ষের উৎসব শুধু গর্বের নয়, অস্তিত্ব রক্ষার জন্যও খুব জরুরি। বাঙালি জাতির সংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রা সহ নববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠান হতে পারে এক ধরণের ব্র্যান্ড। আর সেই ব্র্যান্ডকে প্রমোট করার দায়িত্ব সরকারের। ধর্মীয় চাপের কাছে মাথা নত না করে সরকার সেই দায়িত্ব পালন করবে ও বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতিকে দেশে দেশে প্রমোট করবে সেই আশাই ব্যক্ত করি।
সবাইকে শুভ নববর্ষ আর ১৪৩১ কে শুভ জন্মদিন!
দুবনা, ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ০১ বৈশাখ ১৪৩১
Comments
Post a Comment