একুশ আজ
আজ
একুশে ফেব্রুয়ারী, মহান ভাষা দিবস| ছোটবেলায়, যখন বাংলাদেশের জন্ম হয়নি তখনো, আমি
যখন একেবারেই ছোট, দেখতাম সাত সকালে আমাদের বাড়ির আমগাছের মাথায় বাঁশের ডগায় পতপত
করতে উড়তো কালো পতাকা| তখন আমরা একুশকে বলতাম শোক দিবস| তারপর একদিন সেই শোক আর
কান্না এক হয়ে পরিণত হলো ক্রোধে, গর্জে উঠলো বাঙ্গালী তার অধিকার চেয়ে – জন্ম নিলো
নতুন এক দেশ – বাংলাদেশ| এবার বাড়িতে উড়লো লাল-সবুজ পতাকা| দ্বিজাতি তত্বকে পেছনে
ফেলে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আর ধর্ম
নিরপেক্ষতার অঙ্গীকার নিয়ে জন্ম নেয়া এ দেশকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখলো এদেশের
মানুষ| আজ স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরে দেশ অনেক এগিয়ে গেছে, উন্নত হয়েছে রাস্তা ঘাট,
সার্বিক জীবন যাত্রার মান, সেই সাথে বেড়েছে অসহিষ্ণুতা – কবির ভাষায় পশ্চিমের
হাঙ্গর সংস্কৃতি গ্রাস করছে পদ্মার রূপালী ইলিশ| তবে সেই মধ্য যুগের মতই আমাদের
পশ্চিমের রাস্তাটা আরব দেশ হয়ে যাবার ফলে হাঙ্গরটা হয়েছে আরো বেশি হিংস্র|আর এই
হিংস্রতার শিকার হচ্ছে মুক্ত চিন্তার মানুষ – যাদের ভাবনা একদিন একুশের জন্ম
দিয়েছিলো, যাদের রক্ত একদিন স্বাধীনতার সূর্যকে লাল করেছিলো – আজ তারাই এদেশে
সবচেয়ে অবহেলিত| যার ফলে ২১শের গুরুত্ব আজ অনেক বেশি| একুশ আজ শুধু আমাদেরই গর্বের
দিন নয়, একুশ আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস| আজো অনেক দেশেই বিশেষ করে পূর্ব
ইউরোপের অনেক দেশেই প্রচুর লোক তাদের মাতৃভাষার অধিকার থেকে বঞ্চিত| একুশ শুধু
তাদেরই নয়, ক্ষমতাসীন শাসক শ্রেণীকে ৫২ র শিক্ষা থেকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছুতে
সাহায্য করবে সে আশাই করি| আগে, যখন আমরা মূলত কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করতাম, আর
বই এ পরতাম নামীদামী লেখকদের লেখা তখন এটা খেয়াল করিনি – তবে আজকাল সামাজিক নেট
ওয়ার্ক এর কল্যানে অনেকের লেখাই পড়ি বা পড়তে হয়, আর তাতে আমাদের ভাষা জ্ঞানের
দুরাবস্থা দেখে বুঝি বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, সুন্দর ভাবে আমাদের পরবর্তী
প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে হলে আরো অনেক অনেক একুশের প্রয়োজন| একুশ দীর্ঘজীবি হোক|
Comments
Post a Comment