বাবা



ঘুম ভেঙ্গে দেখি ফেসবুক মেতে উঠেছে বাবা দিবসের উৎসবে। হঠাৎ করেই আমি চলে গেলাম ছোটবেলার সেই দিনগুলোয় যখন বাবা ছিলেন, কিন্তু বাবা দিবস ছিল না, অথবা বেতার তরঙ্গে ভাসতে ভাসতে সেটা তখনও কালীগঙ্গার তীরে এসে পৌঁছেনি। মনে পড়লো সেই সন্ধ্যাগুলোর কথা, যখন দিনের শেষে বাবা আমাকে কোলে নিয়ে রংখোলা যেতেন হাঁটতে হাঁটতে। আমি বাবার কাঁধে মাথা রেখে কখনোবা ঘুমের ভান করতাম, আবার কখনো রাস্তার পাশের কদম, গাব, জাম্বুরা, বিলেতি গাব, কতবেল আর আমগাছের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কখনও সময় কাটতো চুপ করে, কখনও বাবাকে জিজ্ঞেস করতাম এ কথা সে কথা।  এরপর আমি দেশ ছেড়ে রাশিয়া চলে আসি। ১৯৮৯ সালে মাস্টার্স শেষ করে যখন দেশে যাই – দু’জনে গেলাম কোলকাতা বেড়াতে। এ অনেকটা অন্ধ আর খোঁড়ার মত। বাবার ছাত্রজীবন কোলকাতায় কেটেছে, তাই তিনি ও শহর চিনতেন হাতের পাঁচ আঙ্গুলের মত, তবে আশি পার করে একা চলার শক্তি তেমন ছিল না। আর আমি কলকাতার পথঘাট চিনি না, তবে পঁচিশ  বছরের যৌবনে আমার মধ্যে শক্তি তখন অফুরান। এরপরে ১৯৯১ সালে যখন দেশে গেলাম, বাবা তার তিন সপ্তাহ আগেই চলে গেছেন তারার দেশে। এরপর থেকে আর বাবার সাথে আমার ছাড়াছাড়ি হয়নি। যখন কাজে যাই দু’ধারে সারিসারি গাছপালার ভেতর দিয়ে, বাবা প্রায় প্রতিদিনই নেমে আসেন তারার দেশ থেকে,  হাঁটতে থাকেন আমার পাশে, কখনও কথা বলি আমরা, কখনও হাঁটি কোন কথা না বলে। রাশিয়ায় বলে – “একটা পেশা আছে – দেশ রক্ষা করা”, আমি আমার ছেলেমেয়েদের বলি “একটা পেশা আছে – বাবা হওয়া”। সৈনিক যেমন দেশ রক্ষা করে শত্রুর হাত থেকে, বাবাও তেমনি জীবনে মরণে আমাদের পাশে থাকেন পথ দেখাতে, বিপদ-আপদ থেকে আমাদের রক্ষা করতে।

মস্কো, ১৮ জুন ২০১৭        




  

Comments

Popular posts from this blog

রাজনীতি

২৪ জুনের দিনলিপি

স্মৃতি