ই আর ঈ এর গল্প


বছর ঘুরে আবার ঈদ এলো ইদ-এর ছদ্মবেশে ছদ্মবেশে এ কারণেই যে বাঁকা চাঁদের সাথে মনের কোণে গেঁথে যাওয়া ঈদ শব্দটা তো আর বাংলা একাডেমীর এক নোটিশেই মুছে যায় না! এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে অনেক কথা লিখেছে, লিখছে, আরও লিখবে হয়তো দেশের পত্রপত্রিকায়ও এ নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে অনেকেই বলছেন ঈদ হোক আর ইদ হোক, তাতে তো আনন্দের আর ঘাটতি পড়ছে না, তাহলে এত কথা কেন? কেউ বলছে আমাদের দুটো ণ, ন, তিনটে স, শ, ষ, তিনটে র, ড়, ঢ় জানি এগুলো লেখা হছে অনেকটা মস্করা করে তবে একদিন যদি বাংলা একাডেমী এখানেও হাত দেয় অবাক হবার কিছুই থাকবে না কিন্তু ভাষা তো শুধু ভাব প্রকাশের মাধ্যমই নয়, এটা একটা ঐতিহ্যও বটে শুনেছি আরবী ভাষায় প নেই বলে পাকিস্তানে এখন অনেকেই প বর্জন করেছে ব এর সমর্থনে, ফলে পাকিস্তান হয়েছে বাকিস্তান আমাদের দেশেও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেভাবে আরবী ভাষা আর সংস্কৃতি প্রবেশ করছে, তাতে এই বাংলা একাডেমীই যদি ভাষা সংস্কারের নামে  আরবী হরফে বাংলা লেখা শুরু করতে ফতোয়া দেয়, তাতে কি অবাক হবার কিছু থাকবে? জীবনের পরিবর্তে জিবন লিখলেই মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি বা অবনতি ঘটবে না, তাই এ ধরনের পরিবর্তন মনে হয় অর্থহীন বাংলাভাষার বর্ণমালা যারা তৈরি করেছিলেন, তাঁরা শধু মাত্র ভাষার দিকটা চিন্তা করেই সেটা করেছিলেন, কোন রকম রাজনৈতিক কনটেক্সট ছাড়াই, তাই ই-কার ঈ-কারের বিতর্কে জড়িয়ে না পড়াই ভালো
ঈদের কথা মনে পড়লেই প্রথম মনে পড়ে মার্বেল বা চারা খেলার কথা ঐ একটা দিন আমাদের মুসলমান বন্ধুরা কারো ভয় না করে সারাদিন আমাদের সাথে মার্বেল আর চারা খেলতে পারতো আমরা অপেক্ষা করতাম কখন ওরা ঈদগাহ থেকে নামাজ শেষ করে খেলতে আসবে আর ছিল ঈদের আগের ইফতারি বিকেলে মাঠে ফুটবল খেলা শেষে সবাই মিলে মুড়ি, চানাচুর, সিঙ্গারা এসব খাওয়া তখন গ্রাম এলাকায় ইফতার পার্টি এখনকার মত এমন আড়ম্বরপূর্ণ ছিল না, তবে তাতে আন্তরিকতার অভাব ছিল না কোনদিন এই  সময়ে আর যে জিনিষের অপেক্ষায় থাকতাম, তা হোল বিভিন্ন পত্রিকার ঈদ সংখ্যা – বিচিত্রা, সন্ধানী, শিশু, ঠিক যেমন করে দেশ, আনন্দমেলা এ সবের পুজো সংখ্যার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকতাম
১৯৮৩ সালে মস্কো আসার পর অনেক দিন এসব আর করা হয় নি, যদিও বাংলাদেশ প্রবাসী পরিষদ রাশিয়ার সাথে জড়িত হবার পর থেকে ইদানীং বিভিন্ন ইফতার পার্টিতে যাই, সেই আগের মতই বন্ধুদের সাথে দেখা করতে, ইফতারি খেতে অনেক কিছুর মতই রমজানের মাসে সবাই মিলে ইফতারি করাও আমাদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে এখানেই ঈদের সার্বজনীনতা, যেমনটা সার্বজনীন দুর্গা পুজা পুজার মতই ঈদের আগেও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনেরা কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তারপর শুরু হয় শহর থেকে গ্রামে ফেরার পালা, বাস ট্রেন ভর্তি করে মানুষ ফেরে দেশে – শুধু ঈদ বা পুজা করতেই নয়, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সাথে দেখা করতে মিলনের আনন্দে হারিয়ে যায় বানানের রকমফের 
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।


মস্কো, ২৪ জুন ২০১৭             


Comments

Popular posts from this blog

রাজনীতি

২৪ জুনের দিনলিপি

স্মৃতি