আমার রবিবাবু
রবীন্দ্রনাথ আমার জীবনে
আসেন আমাদের কালিগঙ্গা নদীর তীরে সাদা শুভ্র কাশবনের পথ ধরে।
আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে
বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল
থাকে ......
জানি না কেন, ঐ লাইনগুলো পড়েই
মনে হয়েছিলো তিনি আমাদের খুব আপনজন, কাছের মানুষ। তখন ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের
ছবি থাকত বর্ষপঞ্জীতে। রবীন্দ্রনাথকে দেখতে লাগতো আমাদের জ্যাঠামশায়ের মত। ঠিক সেই
রকম শুভ্র দাঁড়ি। জ্যাঠামশাইয়ের সাথে মিল অবশ্য এখানেই শেষ। তবে ছোট বেলায় আমরা
চেষ্টা করতাম রবীন্দ্রনাথের ছবির সাথে জ্যাঠামশাইয়ের মিল খুঁজে পেতে, এ নিয়ে একআধটু
গর্ব বোধও করতাম। একটু বড় হলে বড় ভাইবোনদের সাথে আমারও গানের হাতেখড়ি হয়
রবীন্দ্রনাথের সেই গান দিয়ে
ওগো নদী আপন বেগে পাগল-পারা
আমি স্তব্ধ চাঁপার তরু
গন্ধভরে তন্দ্রাহারা
...............
পরে অবশ্য গান শেখা বাদ
হয়ে যায়। নিজে যে রবীন্দ্র সাহিত্য নিয়ে খুব পড়াশুনা করেছি সেটাও নয়। কিছু কবিতা,
কিছু গল্প পড়া আর গান শোনার মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ। দস্তয়েভস্কি, কাম্যু, সারত্রে,
তলস্তয়, কাফকাসহ অনেকের লেখা যতখানি সিস্টেম্যাটিক্যালি পড়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে
সেভাবে কখনই পড়া হয়নি। তারপরেও চিন্ময়, হেমন্ত, সাগর, দেবব্রত, সুবিনয়, কনিকা,
সুচিত্রাসহ আরও অনেকের কণ্ঠে কবির গান শুনে শুনেই কখন যে ওঁনাকে আপন করে নিয়েছি
নিজেই জানি না। নিজের অজান্তেই উনি রবীন্দ্রনাথ থেকে আমার রবিবাবুতে পরিণত হয়েছেন।
গত পরশু ৭ মে মস্কোর
ভারতীয় দুতাবাসের পক্ষ থেকে বরাবরের মত রবি ঠাকুরের মূর্তিতে ফুল দিয়ে তাঁর
জন্মদিন পালন করা হয়। কাজে ব্যস্ত থাকায় যেতে পারিনি। গতকাল বাংলাদেশে পালিত হয়েছে
তাঁর জন্মদিন আর আজ পালিত হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গে। ক্যালেন্ডার বিভ্রাটে নববর্ষের মতই রবীন্দ্র
জন্মদিনও বহুবচনে পরিণত হয়েছে। আজ ৯ মে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোভিয়েত জনগণের মহান
বিজয় দিবস। আজকে যখন ওদিকে যাচ্ছিলাম, রবিবাবুও আমার সঙ্গ নিলেন। ভেবে দেখলাম,
আজকাল এটা প্রায়ই হচ্ছে। এখন বাবামাকেও আর প্রতিদিন মনে করা হয়না। তবে কোন না কোন
উছিলায় রবিবাবু ঠিক চলে আসেন আমার কাছে। অফিসে যাচ্ছি কিছু একটা ভাবতে ভাবতে, হঠাৎই
মনের মধ্যে গুনগুন করে কোন সুর বেজে উঠলো। অনেক সময় কথা মনে পড়ে না, আমি সুর করে
এক দুই তিন চার ... গাইতে গাইতে হাঁটতে থাকি। হঠাৎ করেই রবিবাবু বইয়ের পাতা থেকে,
গানের সুর থেকে, নাটকের মঞ্চ থেকে বেরিয়ে আমার মহাবিশ্বের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছেন,
মিলিয়ে গেছেন গ্রহ তারায়, নীহারিকায়। রবির আলোয় ভরিয়ে দিয়েছেন আমার ভুবন। আমার
সমস্ত শরীর, সমস্ত মনপ্রান অপেক্ষায় থাকে
কবে কবি কবে কথা রবির রবে
ভরবে এ পরাণ
তাঁর বিশালত্ব কবে আমাদেরও
করবে মহান?
শুভ জন্মদিন!
দুবনা, ৯ মে ২০১৮
Comments
Post a Comment