দেশে ফেরা


বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবের দেশে ফেরার মতই গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা। ১৯৭২ সালে এক জাতি অপেক্ষা করেছিলো তার নেতার জন্য যিনি শক্ত হাতে সামনে নিয়ে যাবেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে। ১৯৮১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সেই মানুষগুলোই অপেক্ষা করেছিলেন শেখ হাসিনার জন্য যিনি হাল ধরবেন আওয়ামী লীগের আর পিতার মতই দেশীয় স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ইতিমধ্যে হারিয়ে যেতে শুরু করা একাত্তরের মূল্যবোধগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন। নিজে রাজনীতিতে অপরিপক্ক হলেও পাশে পেয়েছিলেন তিনি একাত্তরের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ নেতা কর্মীদের, পেয়েছিলেন বাহাত্তরের সংবিধানে বিশ্বাসী একদল সহযাত্রী যারা তাকে সামনে রেখে লড়ে গেছেন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আর শেখ হাসিনা নিজেও ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা করেছেন একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে। পঁচাত্তর পূর্ববর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিব ছিলেন পরস্পরের পরিপূরক – এক ও অভিন্ন লক্ষ্যে পৌঁছান ছিল তাঁদের জীবনের ব্রত। তখন শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ দুটোই ছিল নক্ষত্রের মত, নিজের আলোয় আলোকিত। ফলে একাত্তরে শেখ মুজিব পাকিস্তানে জেলবন্দী থাকলেও আওয়ামী লীগ লড়াইয়ের মাঠ ছাড়েনি, ছিনিয়ে এনেছে দেশের স্বাধীনতা। কিন্তু বর্তমানে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সেটা বলা যাবে না। এখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিশেষ করে আওয়ামী ঘরানার রাজনৈতিক আকাশে একমাত্র নক্ষত্র আর আওয়ামী লীগ তাঁর চারপাশে ঘূর্ণিয়মান উল্কার মত যারা মানুষের কথা ভাববে কি, তাঁর আলোকে নিজেরা একটু হলেও আলোকিত হতে ব্যস্ত। এর ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি আওয়ামী লীগের না হয়ে শেখ হাসিনার কৃতিত্ব হিসেবেই গণ্য হচ্ছে, দেশ এগোলেও সমাজ এগুচ্ছে না, বরং দল আদর্শগত ভাবে দুর্বল, উপদলীয় কোন্দলে জর্জরিত  হওয়ার কারণে শেখ হাসিনাকে অনেক ক্ষেত্রেই একাত্তরের পরাজিত শক্তির সাথেও আপোষ করতে হয়েছে, হচ্ছে। এর ফলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের পরেও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির এক উল্লেখযোগ্য অংশ তাঁর সমালোচনায় মুখর, পারত পক্ষে তারা দুটো ভিন্ন শিবিরের বাসিন্দা আজ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় দুর্বলতাকে পুঁজি করে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়ছে যারা সময় বুঝে ট্রয়ের ঘোড়ার কাজ করতে দ্বিধা করবে না। ইতিহাস বলে যুদ্ধে জয়ের জন্য দল ভারী করা আবশ্যক কিছু নয়, যেটা দরকার সেটা ডাইনামিক নেতৃত্ব ও সংগঠনের ভেতরে আদর্শগত ঐক্য, দরকার সেই সব কর্মী যারা কোন অবস্থাতেই দলত্যাগ করবে না, যেকোনো বিপদে জীবনের বিনিময়ে হলেও ঊর্ধ্বে তুলে ধরবে আদর্শের পতাকা। শেখ হাসিনার সাফল্যগুলোকে সার্থক করতে হলে এখন দরকার দলীয় ভাবে আওয়ামী লীগকে একাত্তরের চেতনায় উজ্জীবিত করা। অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে, অনেক অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ শেখ হাসিনা সেটা পারবেন বলেই বিশ্বাস।   

দুবনা, ১৭ মে ২০১৮                 


    

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি