আমার কাকু


গতকাল আমার কাকুর জন্মদিন ছিল, কাকু মানে দ্বিজেন শর্মার। কাকু আমাকে আমার বিজন বলতেন (এটা অবশ্য উনি সবাইকেই বলতেন), তাই আমিও আমার কাকু বলেই লিখি। আমার খুব অল্প ব্যক্তিগত সম্পদের মধ্যে এটাও একটা। জন্মদিন ব্যাপারটা একান্তই ব্যাক্তিগত। সবার জীবনেই এরকম কিছু কিছু দিন থাকে, একান্ত ব্যাক্তিগত। হোক সে জন্মদিন, প্রথম বারের মত স্কুলে যাওয়ার দিন, প্রথম ভালবাসি বলার দিন, বিয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যক্তিগত এ জন্যেই – এসব দিন সাধারণত অন্য কারো জীবনে প্রভাব ফেলে না, অনেকের ক্ষেত্রে নিজের জীবনেও নয়। এসব দিন অন্য দশটা বা ৩৬৪ দিনের মতই। তবে যারা ৩৬৪ দিনই নিজের কাজকর্ম দিয়ে বিশেষ করে তুলতে পারেন, তাদের জন্মদিন আর ব্যাক্তিগত থাকে না, অনেকের কাছেই বিশেষ দিন হয়ে ওঠে। কাকু সেটা পেরেছেন, তাই আমাদের অনেকের কাছেই দিনটা ফিরে আসে, স্মৃতি হয়ে, ভালোলাগা হয়ে, ভালোবাসা হয়ে।
গতকাল ঘুম থেকে উঠেই মনে পড়ল কাকুর কথা। গত বেশ কয়েক বছর এই দিনটায় আমি কাকুকে ফোন করতাম। সাধারণত কাকী ধরতেন ফোনটা, পরে কাকুকে দিতেন।
-   ও বিজন, তুমি কোথায়? কবে এলে?  
-   কাকু আমি দুবনা থেকে বলছি, আজ আপনার জন্মদিন, ভাবলাম দেখা করি আপনার সাথে। এখন তো আর আগের মত দেখা সাক্ষাৎ হয় না।       
আমি কখনও ফর্মালিটি পছন্দ করি না। মুখ খুলে আর শুভ জন্মদিন বলা হয় না। এভাবেই প্রতি বছর আমাদের কথা শেষ হয়। কথা আসলে শেষ হয় না, সেটা থেকেই যায়, মনে গভীরে। যেটা বলা, সেটা আসলে মনে করিয়ে দেয়া, আমি আছি, বরাবরেই মতই আপনার পাশে হাঁটছি, কথা বলছি – তবে কল্পনায়। এই প্রথম তাঁকে ফোন করা হল না। কাকু গত বছর ঠিকানা বদলিয়েছেন। জানি সেটা মহাবিশ্বের অন্য কোন কোণে। তবে এত বড় মহাবিশ্বে সঠিক ঠিকানা জানা না থাকলে যোগাযোগ করা অসম্ভব। মনে কত প্রশ্ন জাগে, আচ্ছা কাকুর যেসব বন্ধুরা ইতিমধ্যে সেই জগতের বাসিন্দা হয়েছেন, তাঁদের সাথে দেখা হল কিনা? হলে আজ তাঁরা একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছেন কিনা? কানে ভেসে এল কাকুর প্রাণখোলা হাসি। সেই হাসি যা আমাদেরকে তাঁর কাছে টানত, আমাদেরকে আপন করে নিত। কে বলল আপনি নেই, এইতো দিব্যি আছেন আমাদের সাথে, আমাদের কল্পনায়, আমাদের ভালবাসায়, আমাদের পথচলার সাথী হয়ে।  
দুবনা, ৩০ মে ২০১৮



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি