অবাক ভোট
অসমাপ্ত
আত্মজীবনীতে শেখ মুজিবুর রহমান এক বৃদ্ধার কথা লিখেছেন, যিনি এক নির্বাচনী
প্রচারণার সময় তাঁকে নিজের বাড়িতে খাইয়ে তাঁর হাতে শেষ সম্বল কিছু টাকা তুলে দেন।
জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে এই বৃদ্ধা এভাবেই দেশের সেবা করতে চেয়েছিলেন যা কিনা
এই মহান নেতা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছেন। যেকোনো দেশেই, যেখানে বিভিন্ন ধরণের
সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন তাদের জন্য ভোট মানেই জীবন বাজি। ভোটের
মাধ্যমে তারা আসলে তাদের জীবন মরণের সমস্যারই সামাধান করে। তারা তাদের ভবিষ্যৎ,
তাদের নিরাপত্তা, তাদের অস্তিত্বের সংগ্রামে শেষ আশাটুকু তুলে দেয় কোন না কোন
রাজনৈতিক দলের হাতে। সে হিসেবে সংখ্যায় কম হলেও যেকোনো জাতির জন্য, বিশ্বমানবতার
জন্য এসব ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম। সমস্যা হল আগে যদি পরিমাণটা সময়ের সাথে মানে পরিণত হত এখন আর সেটা হয় না, বা মানুষ মানের চেয়ে পরিমাণকেই আজকাল বেশি গুরুত্ব
দেয়। ফলে সংখ্যালঘুর ভোট আজকাল শুধুই সংখ্যা, এর পেছনে না থাকে মানুষের কান্না, না
থাকে অস্তিত্বের লড়াই। আর সংখ্যাই যখন আসল, বাকি সব গুরুত্ব হারায়। অনেক সময় ভাবি,
আচ্ছা কী হত, যদি সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার না থাকতো, অন্তত আমাদের মত দেশে, যেখানে
ভোট দিয়ে নিজের ভাগ্য বদলান যায় না, অথচ দুর্ভাগ্য ডেকে আনা যায়? সবাই বলবে, সে কী
করে হয়। এটা যে নাগরিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা। কিন্তু যারা নাগরিক অধিকার,
গণতান্ত্রিক অধিকার বলে চায়ের কাপে তুফান তোলেন, তারা কিন্তু ভোটপূর্ব বা ভোট
পরবর্তী সময়ে এসব সংখ্যালঘু ভোটারদের পাশে এসে দাঁড়ান না এই নাগরিক অধিকার রক্ষা
করার জন্য। আসলে আমাদের দেশে সংখ্যালঘুরা হচ্ছে যেকোনো ধরণের অন্যায় জায়েজ করার
জন্য এক একটা অজুহাত, যাদের চলন-বলন, কথাবার্তা, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, ভোট
দেওয়া বা না দেওয়া সবকিছুকেই প্রশ্নবিদ্ধ
করা যায় আর এই উছিলায় নিজেদের রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করে নেওয়া যায়।
সেই প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আজও পর্যন্ত মানুষ শুধু অস্তিত্বের জন্যই লড়েছে,
লড়ছে। সেটা ভাত-কাপড়ের লড়াই হোক, আর প্রকৃতির সাথে লড়াই হোক। সে সব সময়ই চেয়েছে
নিরাপত্তা। এই যে আমরা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক
অধিকারের কথা বলি সেগুলো সবই তাঁর নিরাপত্তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তার সমস্ত অধিকারের
আন্দোলনও এই নিরাপত্তারই বিভিন্ন সোপান। নিরাপত্তাহীনতা মানুষের অস্তিত্বকে
প্রশ্নের সম্মুখীন করে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন সরকার মানুষের নিরাপত্তার গ্যারান্টি
দিতে পারছে হাজার উন্নয়নও মানুষকে সেই সরকারের প্রতি আস্থাবান করতে পারবে না।
এবারের নির্বাচনী প্রচারণা এখনও পর্যন্ত অনেকটা শান্তিপূর্ণ ভাবেই চলছে। আসন্ন
নির্বাচনে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের জান-মালের নিরাপত্তার
গ্যারান্টি দিয়েই শুধু বর্তমান সরকার দেশবাসীর আস্থা অর্জন করতে পারবে।
Comments
Post a Comment