স্বাধীনতা ও মুক্তি

“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”
বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণার পর লাখ লাখ মানুষের “জয় বাংলা” ধ্বনিতে
কেঁপে উঠল স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল বাংলার ইতিহাসে সূচনা হল এক নতুন অধ্যায়ের দিনটি ছিল ৭ই মার্চ, ১৯৭০ এরপর দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত, দু লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত আর কোটি কোটি  মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশার বিনিময়ে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের হল কিন্তু প্রশ্ন হল আমরা কি মুক্তি পেয়েছি? মুক্তি বলতে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন নেতা!  
স্বাধীনতা পরবর্তী যে তিন বছর তিনি জীবিত ছিলেন,
তাঁর সমস্ত কাজকর্ম এটাই প্রমাণ করে যে তিনি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি চেয়েছিলেন তিনি চেয়েছিলেন শ্রমিক তার কাজের ন্যায্য মজুরি পাক, কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দাম পাক তাই তো তিনি সমাজতন্ত্রকে সংবিধানের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন সেই সাথে গণতন্ত্রের কথাও ভলেননি পাকিস্তান সরকার বারবার তাঁর কণ্ঠ রোধ করতে চেয়েছে তিনি জানতেন দেশ গঠনে বিরোধী দলের ভূমিকার মূল্য, তিনি জানতেন বাক স্বাধীনতার মূল্য গণতন্ত্র তাই ছিল দেশের মূল নীতির আরেক স্তম্ভ ধর্ম যে জাতির সমার্থক নয় আর বাংলাদেশ যে জাতীয় রাষ্ট্র, ধর্মীয় নয় সেটাও তিনি দেশ বিভাগের পরেই উপলব্ধি করেছিলেন আর তাই তো জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বকে ত্যাগ করেছিলেন আর সেই মুক্তি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতায় ধর্মনিরপেক্ষতা – এটা ধর্মহীনতা নয়, এটা সব ধর্মের সমান অধিকার তিনি সাম্প্রদায়িকতার কালো থাবা থেকে মুক্তির পথ দেখেছেন ধর্মনিরপেক্ষতায় আর তাই ধর্মনিরপেক্ষতা হয়েছে সংবিধানের তৃতীয় স্তম্ভ আর ছিল সার্বভৌমত্ব তিনি জানতেন কোন জোটে যোগ দেওয়া মানেই নিজেদের সার্বভৌমত্ব কিছুটা হলেও বিসর্জন দেওয়াএকমাত্র জোটনিরপেক্ষতাসমাজতান্ত্রিক বা ধনতান্ত্রিক কোন নির্দিষ্ট শিবিরে না গিয়ে দেশকে স্বাধীনভাবে বিকাশের সুযোগ দেবে  সে থেকেই সার্বভৌমত্ব হয় সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভ তাই বঙ্গবন্ধু যখন মুক্তির কথা বলেন, তিনি গণতন্ত্রের কথা বলেন, তিনি সমাজতন্ত্রের কথা বলেন, তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন, তিনি সার্বভৌমত্বের কথা বলেন আজ দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে গেছে কিন্তু শ্রমিক কি তার ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে? কৃষক কি ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছে? দেশের সম্পদের বন্টন কি সুষম হচ্ছে? দেশে বাক-স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তার পরিবেশ কতটুকু বিরাজ করছে? আমরা কি আবারও ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ছুটছি না? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কি আবার ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে না? আমাদের রাজনীতি আমাদের পররাষ্ট্রনীতি কি বিদেশী শক্তি দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে না? ৭ই মার্চের ভাষণ এটা শুধু পাকিস্তানের হাত থেকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের ডক্ট্রিন নয়, এটা আমাদের বাঙালি জাতির অস্তিত্বের দলিল স্বাধীনতার সংগ্রামে আমরা জিতেছি, কিন্তু মুক্তির সংগ্রামে আমরা প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়ছি যতক্ষণ না আমরা মুক্তির প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারব আর সেই মুক্তির জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাব, উন্নয়নের গড্ডালিকা প্রবাহে একদিন স্বাধীনতাটাও হাতছাড়া হয়ে গেলে অবাক হবার কিছু থাকবে না
দুবনা, ৭ মার্চ ২০১৯               

     

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা