ক্রাইস্টচার্চে আক্রমণ


“কালো স্কার্ফ মাথায় দিয়ে শোকাহত মুসলিমদের দেখতে যান নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী“; “মৃত্যুদন্ডই তার প্রাপ্যঃ নিউ জিল্যান্ডে হামলাকারীর বোন”; “নিজের জন্য জমা হওয়া পুরো অর্থ মসজিদে নিহত মুসল্লিদের পরিবারকে দান করবেন সেই ‘ডিম-বালক’”; “এই পৃথিবীতে ইসলাম বিদ্বেষ ও ঘৃণার কোন স্থান নেইঃ কানাডার প্রধানমন্ত্রী”; “কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে নিউ জিল্যান্ডের পার্লামেন্টে আধিবেশন শুরু”; “এবার সংসদের ভেতরেই নামাযের ব্যবস্থা করে দিলেন নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী”; “মসজিদে হামলার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ট্রেন্ড সৃষ্টি হয়েছে, ৩৫০ জনের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ”; “নিউ জিল্যান্ডের টিভি ও বেতার থেকে আগামী শুক্রবার একযোগে জুম’আর আযান প্রচার করা হবে”, “নিউ জিল্যান্ডে এবার সব নারীর হিজাব পরার ঘোষণা”; “যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদ পাহারা দিচ্ছে অমুসলিমরা”;
এ সবই বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকার খবরের শিরোনাম। এর আগেও দু একবার দেখেছি “হিন্দু যুবকদের ঈদগাহ মাঠ পাহারা” বা “মসজিদে জায়গা না হওয়ায় মুসুল্লিদের হিন্দু মন্দিরে নামায আদায়” এ জাতীয় শিরোনাম।
হিংসা, দ্বেষ আর সন্ত্রাসে পরিপূর্ণ এই পৃথিবীতে এ রকম খবর নিঃসন্দেহে আশায় আলো জ্বালায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ঈশ্বরে বিশ্বাস যেমন এক ধরণের বিশ্বাস, তাঁকে বিশ্বাস না করাও সেরকমই এক ধরণের বিশ্বাস। তাই এ ধরণের খবর আমাকে পুলকিত করে এ কারণে যে মানবিকতা এখনও বিদায় নেয়নি এ পৃথিবী থেকে।
নিউ জিলান্ডের ট্র্যাজেডির দুটো দিক আছে। এটা মর্মান্তিক একটা ঘটনা সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এতে আর যে দুটো ঘটনা ঘটলো, তা হল সাময়িক ভাবে হলেও (আশা করি সেটা চিরস্থায়ী হবে) মুসলিম মানেই যে সন্ত্রাসবাদী নয় উন্নত বিশ্বের ব্যাপক মানুষের মাঝে সেই উপলব্ধির জন্ম, দ্বিতীয়ত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া। তাঁরা যদি একই ভাবে সব ধরণের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পারতেন, তাহলে পৃথিবী অনেক শান্তিপূর্ণ হত।            
এখন ফিরে যাই বাংলাদেশে বা পত্র পত্রিকার শিরোনামে। কী লেখা আছে তার চেয়েও বড় কথা সঠিক ভাবে সেটা পড়া।
ফাঁসি দিও না দিলে সেটা মানবতার জন্য ক্ষতিকর হবে।
কোথায় কে কমা দেবে তার উপর নির্ভর করবে তার পরবর্তী পদক্ষেপ।
যদি পড়ি  “ফাঁসি দিও, না দিলে সেটা মানবতার জন্য ক্ষতিকর হবে।“ তাহলে সেটা কতটুকু মানবিক সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ, তবে “ফাঁসি দিও না, দিলে সেটা মানবতার জন্য ক্ষতিকর হবে।“ এ ইন্টারপ্রিটেশন অনেক বেশি মানবিক। আজ যে নিউ জিলান্ডসহ বিভিন্ন দেশে মুসল্লিদের  পাশে দাঁড়াচ্ছে মানুষ তার অর্থ যদি মনে করি ইসলাম হঠাৎ করেই বদলে গেছে তাদের চোখে সেটা হবে নিজেকে ধোঁকা দেওয়া। এটা তাঁরা করছেন আক্রান্ত মুসল্লিদের প্রতি সহমর্মিতা থেকে। তাঁরা দেখাচ্ছেন তাঁদের সমাজ, তাঁদের ধর্মে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস অনেক বেশি মানবিক। এটা তাঁদের মানবিকতারই বহিঃপ্রকাশ। এই আবেগে যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন তাঁরা যে মানবিকতাবোধ, যে সহমর্মিতাবোধ থেকে সেটা করছেন সেই আদর্শের মুল্য তাঁরা কিভাবে এবং কতটুকু পাবেন সেটাই দেখার বিষয়। মুক্তমনা এসব মানুষ যদি মুক্ত চিন্তার সুযোগ না পান সেটা গতি বদলাতে পারে। আর সেটা হবে কি না তা নির্ভর করবে মুসল্লিদের উপর। নির্ভর করবে তার উপর তাঁরা কতটা মানবিক হতে পারবেন, কতটা সহমর্মিতা দেখাতে পারবেন অমুসলিমদের প্রতি। তাঁরাও কি পারবেন অন্য ধর্মের মানুষের উপাসনালয় পাহারা দিতে? আজ বিশ্ব একযোগে যেভাবে এই আক্রমনের নিন্দা করছে, দেশ বিদেশে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে, তাঁরাও কি বিভিন্ন দেশে অমুসলিমরা আক্রান্ত হলে সে ঘটনার নিন্দা করবেন, তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন? বিশ্ব আজ আপনাদের প্রতি অগ্রিম ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, প্রতিদান হিসেবে আপনারা ভালোবাসা দেবেন না ঘৃণা সেটার উপর নির্ভর করবে ইসলামের ভাবমূর্তি আর বিশ্বশান্তি। অন্তত সামাজিক ক্ষেত্রে।  

দুবনা, ২০ মার্চ ২০১৯     



       

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা