কাশ্মীর
ছোটবেলায় অনেকগুলো প্রিয় নামের
একটা ছিল কাশ্মীর। শীতের সকালে আর সন্ধ্যায় কাশ্মীরি শাল ছিল একান্ত বন্ধু। বাড়ির সবারই
কাশ্মীরি শাল ছিল। এখানে যদিও গায়ে দিই না, তবুএ একখানা শাল ঠিকই আছে। মা কখনও
কাশ্মীর বলতেন না, বলতেন ভূস্বর্গ কাশ্মীর। আর সেটা শুনে শুনে কাশ্মীর সম্পর্কে
কল্পনায় কত কিছু গড়তাম মনে মনে। রামায়ণ মহাভারতের যুগে দেবতারা এই
ভূখণ্ডে মানুষের সাথে ঘুরে বেড়াতেন, প্রেম করতেন, কাউকে বর দিতেন, কাউকে বা অভিশাপ। দেবতারা তখন
ছিলেন ঘরের মানুষ, আপন জন, সুখ দুঃখের ভাগীদার। পরে মানুষের অত্যাচারে দেবতারা পালিয়ে
গেছে, সাথে নিয়ে গেছে স্বর্গটাকেও। তাই কাশ্মীর আর ভূস্বর্গ নেই। সেও আজ পৃথিবীর অন্যান্য জায়গার মতই ভালোমন্দ সব রকমের
মানুষ দিয়ে ভরা।
ফেসবুকের বাংলাদেশ ডোমেন দেশের
মানুষের মতই হুজুগী। কয়েকদিন আগে ডেঙ্গুকে তাড়িয়ে কাশ্মীর এলো স্ক্রীনে। আর কিছু হোক
না হোক মন্ত্রী-মেয়র আর সেই সাথে মশারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচল। প্রথম পোস্টগুলো দেখে তো মনেই হয়েছিল পাক ভারত যুদ্ধ বেধে
গেছে। পরে দেখলাম, না – ৩৭০ ধারা বাতিল হয়েছে। যদিও তখন ৩৭০ ধারা সম্পর্কে কোন
ধারনাই ছিল না, মনে মনে ভাবলাম, এই হুজুগে যদি আমাদের সরকারও ৫৭ ধারা বাতিল করে
দেয় সেটা হবে সোনায় সোহাগা।
যাই হোক, ধীরে ধীরে ফেসবুকের পাতায় বিভিন্ন পোস্ট আসতে শুরু করল। তাই নিজের উদ্যোগেই বিবিসি, হিন্দু এসব ঘেটে বোঝার চেষ্টা করলাম অবস্থা। শুনলাম সিপিএম এর এক নেতার ভাষণ। দেশের বাম দলগুলোর বিবৃতি দেখলাম। মনে মনে ভাবলাম যে সব দল পারলে আজই দেশে বিপ্লব করে ফেলে তারা কাশ্মীরের এই পরিবর্তনে এতো ভয় পাচ্ছে কেন? এরমধ্যে এক বন্ধুর পোস্ট দেখলাম। আমরা একসাথে দেশে রাজনীতি করতাম। পোস্টে ও বন্ধুদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ৩৭০ ধারা বাতিল নিয়ে তাড়াহুড়ো কোন সিদ্ধান্তে না আসতে। এরপর মেসেজ পেলাম আরেক বন্ধুর কাছ থেকে যে রাজনীতি থেকে অনেক দূরে। বিশেষ করে বিজেপির রাজনীতি থেকে
যাই হোক, ধীরে ধীরে ফেসবুকের পাতায় বিভিন্ন পোস্ট আসতে শুরু করল। তাই নিজের উদ্যোগেই বিবিসি, হিন্দু এসব ঘেটে বোঝার চেষ্টা করলাম অবস্থা। শুনলাম সিপিএম এর এক নেতার ভাষণ। দেশের বাম দলগুলোর বিবৃতি দেখলাম। মনে মনে ভাবলাম যে সব দল পারলে আজই দেশে বিপ্লব করে ফেলে তারা কাশ্মীরের এই পরিবর্তনে এতো ভয় পাচ্ছে কেন? এরমধ্যে এক বন্ধুর পোস্ট দেখলাম। আমরা একসাথে দেশে রাজনীতি করতাম। পোস্টে ও বন্ধুদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ৩৭০ ধারা বাতিল নিয়ে তাড়াহুড়ো কোন সিদ্ধান্তে না আসতে। এরপর মেসেজ পেলাম আরেক বন্ধুর কাছ থেকে যে রাজনীতি থেকে অনেক দূরে। বিশেষ করে বিজেপির রাজনীতি থেকে
-
গতকাল আমাদের
দেশে এক ইতিহাস ঘটে গেল। জান নিশ্চয়ই।
-
হুম। তবে ৩৭০ ধারা
ঠিক কি বলে সেটা জানি না।
ও এ বিষয়ে একটা পেপার কাট পাঠাল। সেটা দেখে
লিখলাম
- পরিনাম কি হবে সেটা বলা কষ্ট।
- পরিনাম কি হবে সেটা বলা কষ্ট।
-
ভেজাল তো কিছু
হবেই। এক দেশে ৭০ বছর ভিন্ন আইন, ভিন্ন নিয়ম চলছে। এর তো শেষ একদিন হতেই হত।
বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর বুঝলাম
রাজনীতির বাইরের প্রচুর লোক ৩৭০ ধারা নিয়ে খুব যে খুশি বা সুখী ছিল তা নয়। তাই আবার ৩৭০
ধারার যে মূল কথাগুলো আমাকে পাঠানো হল সেটা পড়লাম।
আমাদের সমস্যা হল আমরা বহুরূপী। আমরা একই
সাথে কারো সন্তান, কারো ভাই, কারো বোন, কারা স্বামী, কারো স্ত্রী, কারো বাবা, কারো
মা। এর বাইরেও আমরা কোন না কোন পেশাজীবী, আমরা কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান,
কেউ বৌদ্ধ, কেউ খৃস্টান, কেউ আওয়ামী লীগ, কেউ বিএনপি, কেউ সাম্যবাদী কেউ বা
মৌলবাদী। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষ একই সাথে অনেক পরিচয়ের অধিকারী। হাই স্কুলে আমাদের
ক্লাস খেলাধুলায় বেশ ভালো ছিল, তবে আমাদের দুই বছরের সিনিয়র ক্লাস ফুটবলে সব সময়
জিতত। নিজেদের মধ্যে খেলার সময় আমি ছিলাম ক্লাসের সমর্থক, অন্য স্কুলের সময়
খেলার সময় কিন্ত সেই ক্লাস ভেদ ছিল না, আমরা সবাই ছিলাম স্কুলের সমর্থক। একই ভাবে
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের প্রায়োরিটি বদলায়। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপ
ধরে একই ঘটনা দেখি। তাই কাশ্মীরিদের কথা উঠলে আমরা কেউ কেউ চীন ও পাকিস্তানের
কাশ্মীরিদের কথা ভুলে শুধুমাত্র ভারতীয় কাশ্মীরিদের কথা বলি বা ভাবি। আমাদের এই
ভাবনা যতটা না কাশ্মীরিদের জন্য, তার চেয়ে বেশি ওদের নিয়ে আমাদের প্রত্যেকের যে
নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তার প্রকাশ। সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের কোন এক
বিশেষ অবস্থার প্রকাশ, খুব কম ক্ষেত্রেই সেটা মানবিকতার দ্বারা পরিচালিত। কেননা আমরা
বিভিন্ন পক্ষ নিই আবেগ থেকে, মানবিকতার জন্য আবেগের সাথে দরকার র্যাশনাল চিন্তা। আর র্যাশনাল
ভাবনা অনেক ক্ষেত্রেই আবেগের বিপরীতে চলে, সেটা লাইক বলেন আর ভোট বলেন এসব
ডিভিডেন্ট বয়ে আনে না। কাশ্মীরের
সবচেয়ে বড় সমস্যা হল তাদের ভালোমন্দ তাদের চেয়ে অন্য লোকেরা ভালো বোঝে বলে ভাবে,
অন্যেরা সবাই নিজের নিজের ধারণা অনুযায়ী তাদের সমাধানের কাশ্মীরি শাল দিয়ে ধেকে
দেয় যা কিনা অনেক ক্ষেত্রেই কাফনের কাপড়ে রূপ নেয়। তাদের অবস্থা এখন সিয়ামিজ
ট্যুইনের মত এমন কী তার চেয়েও খারাপ – কেননা সেখানে দুই নয় তিন তিনটি প্রাণ। তাই
প্রশ্নটা খুবই স্পর্শকাতর।
কী ছিল সেই ৩৭০ ধারায়?
জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য বিশেষ ক্ষমতা (এখন কোন বিশেষ ক্ষমতা থাকবে না);
দ্বৈত নাগরিকত্ব (এখন একটাই নাগরিকত্ব);
জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য আলাদা পতাকা (এখন তেরঙ্গা পতাকাই হবে একমাত্র পতাকা);
রাজ্যের ক্ষমতা কেন্দ্রের ক্ষমতার উপরে, অর্থাৎ রাজ্য সরকার অনুমোদন না করলে কেন্দ্রীয় কোন আইন সেখানে কাজ করত না। এখন কেন্দ্রীয় আইন প্রাধান্য পাবে;
৩৬০ ধারা মানে অর্থনৈতিক জরুরী অবস্থা জারী চলবে না (এখন চলবে);
সংখ্যালঘুদের জন্য কোন সংরক্ষিত কোটা থাকবে না (এখন সেটা সম্ভব);
অন্যান্য রাজ্যের মানুষেরা জম্মু ও কাশ্মীরে ভূমি কিনতে পারবে না (এখন পারবে);
আরটিআই (রাইট তো ইনফরম বা তথ্যের অধিকার) প্রযোজ্য নয় (এখন প্রযোজ্য);
রাজ্য সভার মেয়াদ ৬ বছর (এখন ভারতের যে কোন রাজ্যের মতই এর মেয়াদ ৫ বছর)।
জম্মু ও কাশ্মীরের এই বিশেষ
ক্ষমতা নীচের অধিকারগুলোর বাইরে আরও কিছু কিনা জানি না, তবে নীচের প্রতিটি ক্ষমতাই
বিশেষ।
যতদূর জানি ইউক্রাইনের বিদ্রোহী দানিয়েতস্ক এবং লুগান্সকের নিজস্ব পাসপোর্ট আছে, কিন্তু সেটা ব্যবহার করে তারা কি কোথাও যেতে পারে। আমার বিশ্বাস কাশ্মীরের নাগরিকত্ব বা পাসপোর্ট দিয়ে তারাও কোথাও যেতে পারে না। বর্তমান অবস্থায় এটা নিতান্তই একটা অচল পয়সা। সেক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্বের কোন প্র্যাক্টিক্যাল ভ্যালু বলে মনে হয়না।
পৃথিবীতে প্রচুর ফেডারেটিভ দেশ আছে। অনেক দেশেরই প্রতিটি প্রদেশের নিজস্ব পতাকা আছে। রাশিয়ার কথা আমি জানি। এখানে প্রতিটি রিপাব্লিক, বিভাগ এমন কি শহরের নিজস্ব পাতাকা আছে। প্রাসাশনিক বিল্ডিঙের সামনে সেসব পতাকা শোভা পায়, কিন্তু তেরঙ্গা রাশিয়ান পতাকা থাকে সবার উপরে। সোভিয়েত আমলে সব রিপাব্লিকের আলাদা পতাকা ছিল, সবার উপরে ছিল সোভিয়েত দেশের কাস্তে হাতুড়িসহ লাল পতাকা। যদি ভারতের অন্যান্য প্রদেশে আলাদা পতাকা না থাকে কাশ্মীরের আলাদা পতাকা অন্যদের কাছ থেকে তির্যক দৃষ্টি ছাড়া আর কিছু দেয় বলে মনে হয় না।
যেকোনো সংগঠনেই কেন্দ্র সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষ সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলেও দেশ বা সংগঠন পরিচালনার জন্য এই মানুষই তাদের ক্ষমতা কেন্দ্রের কাছে ন্যাস্ত করে। এটা যুগ যুগ ধরে পরীক্ষিত একটা ব্যবস্থা। এর ব্যতিক্রম দেশ বা সংগঠনকে দুর্বল করতে বাধ্য।
অর্থনৈতিক জরুরী অবস্থার কথা বলতে পারব না, তবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় সেটা ঘোষণা করা হয় বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে।
কোটা ব্যাপারটা বরাবরই অসাম্যের প্রতীক, তবুও বিভিন্ন দেশে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশকে উপরে তুলে আনতে কটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ভারতে এরকম বহু কোটা আছে। তবে কোটা হতে হবে এমন এক মাধ্যম যা সমাজের সবাইকে একটা নির্দিষ্ট লেবেলে নিয়ে আসবে। সত্য বলতে কী কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা এটাও এক ধরণের কোটা।
যদি কাশ্মীর ভারতের অংশ হয় আর ভারত একটা দেশ হয় তবে তার যেকোনো নাগরিক দেশের যেকোনো জায়গায় ভূমি কেনার সাংবিধানিক অধিকার রাখবে সেটাই স্বাভাবিক। কাশ্মীরিরা যাতে নিজেদের আইডেন্টিটি, নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারে এ জন্যেই হয়তো এ নিয়ম। কিন্তু কথা হোল বর্তমানে যেভাবে বিশ্বায়ন চলছে তাতে কতদিন আর নিজেদের আলাদা করে রাখা যায়। যতদূর জানি লেনিনের আমলেই ইতালীর ফিয়াত কোম্পানি এদেশে গাড়ি তৈরি করতে শুরু করে, তবে নিজেরা নয়, সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজে সেটা করে। তাতে কিন্তু এদের মোটর ইন্ডাস্ট্রি তেমন বেড়ে উথতে পারেনি। অ্যামেরিকা যখন চীনে বিনিয়োগ শুরু করে তারা নিজেরাই এখানে বিভিন্ন কলকারখানা তৈরি করে উৎপাদন শুরু করে। যদি কোন শিল্পপতি তার ইনভেস্টের গ্যারান্টি না পায় সে সেটা করবে বলে মনে হয়না। কাশ্মীরের শিল্পায়নের জন্য, এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য জমি বিক্রি প্রয়োজন। বাইরের বিনিয়োগ ছাড়া এখন কোন দেশই উন্নত হতে পারে না। কিন্তু কথা হোল এই যে জমি বিক্রি – সেটা কিভাবে হবে। যদি বিজেপি সরকার মনে মনে করে এই নতুন আইন ব্যবহার করে তারা কাশ্মীরে অমুসলিম জনতার সংখ্যা বাড়িয়ে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করবে সেটা হবে ভুল পদক্ষেপ। কিন্তু তারা যদি এই আইনের মাধ্যমে কাশ্মীরে শিল্পায়ন ঘটাতে পারে, এখানকার মানুষদের কর্মসংস্থান করতে পারে সেটা নিঃসন্দেহে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে হবে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। শুধু সময়ই বলতে পারে কোন দিকে ঘটনা মোড় নেবে। সমস্যা হোল, কাশ্মীরিদের সমস্যার স্থায়ী সমস্যা কজন চায়? পাকিস্তান মুখে যতই বলুক, কাশ্মীর সমস্যা যতদিন থাকবে ততদিন পাক আর্মি নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবে। তাই আর যাই হোক, তারা এই সমস্যার সমাধান চায় বলে মনে হয় না। তাছাড়া ভারত যদি কাশ্মীরিদের কর্মসংস্থান করতে পারে, তাদের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে পারে সেটা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ক্ষোভের সৃষ্টি করবে। অ্যামেরিকা পশ্চিম জার্মানিকে ঢেলে সাজাতে পেরেছিল বলেই পূর্ব জার্মানির মানুষ সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি এত বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে। অ্যামেরিকা, ব্রিটেন – এরা কী এই সমস্যার সমাধান চায়? কাশ্মীর সমস্যা এখন এ দুই দেশকে, একই সাথে সারা দক্ষিণ এশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার হাতে গনা দু চারটে মাধ্যমের একটা। তারা যেখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে সারা বিশ্বকে নিজেদের কব্জিতে রাখতে ব্যস্ত, সেখানে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করে তারা শান্তিতে ঘুমুতে যাবে সেটা ভাবার কারণ নেই। সবচেয়ে বড় কথা গত কয়েক দশক ধরে কাশ্মীরে এক ধরণের অচলাবস্থা বিরাজ করছিল। এটা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরী ছিল। ভাল হোক আর মন্দ হোক এই অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এটাও একটা পদক্ষেপ। সরকার ও কাশ্মীরের মানুষ দুপক্ষই উদ্যোগী হলে তারা ভাল ভাবেই এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। জনগণের চাওয়াটা এখানে বিশেষ ভাবে দরকার। কেননা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শান্তির বিকল্প নেই।
যতদূর জানি ইউক্রাইনের বিদ্রোহী দানিয়েতস্ক এবং লুগান্সকের নিজস্ব পাসপোর্ট আছে, কিন্তু সেটা ব্যবহার করে তারা কি কোথাও যেতে পারে। আমার বিশ্বাস কাশ্মীরের নাগরিকত্ব বা পাসপোর্ট দিয়ে তারাও কোথাও যেতে পারে না। বর্তমান অবস্থায় এটা নিতান্তই একটা অচল পয়সা। সেক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্বের কোন প্র্যাক্টিক্যাল ভ্যালু বলে মনে হয়না।
পৃথিবীতে প্রচুর ফেডারেটিভ দেশ আছে। অনেক দেশেরই প্রতিটি প্রদেশের নিজস্ব পতাকা আছে। রাশিয়ার কথা আমি জানি। এখানে প্রতিটি রিপাব্লিক, বিভাগ এমন কি শহরের নিজস্ব পাতাকা আছে। প্রাসাশনিক বিল্ডিঙের সামনে সেসব পতাকা শোভা পায়, কিন্তু তেরঙ্গা রাশিয়ান পতাকা থাকে সবার উপরে। সোভিয়েত আমলে সব রিপাব্লিকের আলাদা পতাকা ছিল, সবার উপরে ছিল সোভিয়েত দেশের কাস্তে হাতুড়িসহ লাল পতাকা। যদি ভারতের অন্যান্য প্রদেশে আলাদা পতাকা না থাকে কাশ্মীরের আলাদা পতাকা অন্যদের কাছ থেকে তির্যক দৃষ্টি ছাড়া আর কিছু দেয় বলে মনে হয় না।
যেকোনো সংগঠনেই কেন্দ্র সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষ সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলেও দেশ বা সংগঠন পরিচালনার জন্য এই মানুষই তাদের ক্ষমতা কেন্দ্রের কাছে ন্যাস্ত করে। এটা যুগ যুগ ধরে পরীক্ষিত একটা ব্যবস্থা। এর ব্যতিক্রম দেশ বা সংগঠনকে দুর্বল করতে বাধ্য।
অর্থনৈতিক জরুরী অবস্থার কথা বলতে পারব না, তবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় সেটা ঘোষণা করা হয় বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে।
কোটা ব্যাপারটা বরাবরই অসাম্যের প্রতীক, তবুও বিভিন্ন দেশে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশকে উপরে তুলে আনতে কটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ভারতে এরকম বহু কোটা আছে। তবে কোটা হতে হবে এমন এক মাধ্যম যা সমাজের সবাইকে একটা নির্দিষ্ট লেবেলে নিয়ে আসবে। সত্য বলতে কী কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা এটাও এক ধরণের কোটা।
যদি কাশ্মীর ভারতের অংশ হয় আর ভারত একটা দেশ হয় তবে তার যেকোনো নাগরিক দেশের যেকোনো জায়গায় ভূমি কেনার সাংবিধানিক অধিকার রাখবে সেটাই স্বাভাবিক। কাশ্মীরিরা যাতে নিজেদের আইডেন্টিটি, নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারে এ জন্যেই হয়তো এ নিয়ম। কিন্তু কথা হোল বর্তমানে যেভাবে বিশ্বায়ন চলছে তাতে কতদিন আর নিজেদের আলাদা করে রাখা যায়। যতদূর জানি লেনিনের আমলেই ইতালীর ফিয়াত কোম্পানি এদেশে গাড়ি তৈরি করতে শুরু করে, তবে নিজেরা নয়, সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজে সেটা করে। তাতে কিন্তু এদের মোটর ইন্ডাস্ট্রি তেমন বেড়ে উথতে পারেনি। অ্যামেরিকা যখন চীনে বিনিয়োগ শুরু করে তারা নিজেরাই এখানে বিভিন্ন কলকারখানা তৈরি করে উৎপাদন শুরু করে। যদি কোন শিল্পপতি তার ইনভেস্টের গ্যারান্টি না পায় সে সেটা করবে বলে মনে হয়না। কাশ্মীরের শিল্পায়নের জন্য, এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য জমি বিক্রি প্রয়োজন। বাইরের বিনিয়োগ ছাড়া এখন কোন দেশই উন্নত হতে পারে না। কিন্তু কথা হোল এই যে জমি বিক্রি – সেটা কিভাবে হবে। যদি বিজেপি সরকার মনে মনে করে এই নতুন আইন ব্যবহার করে তারা কাশ্মীরে অমুসলিম জনতার সংখ্যা বাড়িয়ে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করবে সেটা হবে ভুল পদক্ষেপ। কিন্তু তারা যদি এই আইনের মাধ্যমে কাশ্মীরে শিল্পায়ন ঘটাতে পারে, এখানকার মানুষদের কর্মসংস্থান করতে পারে সেটা নিঃসন্দেহে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে হবে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। শুধু সময়ই বলতে পারে কোন দিকে ঘটনা মোড় নেবে। সমস্যা হোল, কাশ্মীরিদের সমস্যার স্থায়ী সমস্যা কজন চায়? পাকিস্তান মুখে যতই বলুক, কাশ্মীর সমস্যা যতদিন থাকবে ততদিন পাক আর্মি নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবে। তাই আর যাই হোক, তারা এই সমস্যার সমাধান চায় বলে মনে হয় না। তাছাড়া ভারত যদি কাশ্মীরিদের কর্মসংস্থান করতে পারে, তাদের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে পারে সেটা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ক্ষোভের সৃষ্টি করবে। অ্যামেরিকা পশ্চিম জার্মানিকে ঢেলে সাজাতে পেরেছিল বলেই পূর্ব জার্মানির মানুষ সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি এত বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে। অ্যামেরিকা, ব্রিটেন – এরা কী এই সমস্যার সমাধান চায়? কাশ্মীর সমস্যা এখন এ দুই দেশকে, একই সাথে সারা দক্ষিণ এশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার হাতে গনা দু চারটে মাধ্যমের একটা। তারা যেখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে সারা বিশ্বকে নিজেদের কব্জিতে রাখতে ব্যস্ত, সেখানে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করে তারা শান্তিতে ঘুমুতে যাবে সেটা ভাবার কারণ নেই। সবচেয়ে বড় কথা গত কয়েক দশক ধরে কাশ্মীরে এক ধরণের অচলাবস্থা বিরাজ করছিল। এটা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরী ছিল। ভাল হোক আর মন্দ হোক এই অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এটাও একটা পদক্ষেপ। সরকার ও কাশ্মীরের মানুষ দুপক্ষই উদ্যোগী হলে তারা ভাল ভাবেই এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। জনগণের চাওয়াটা এখানে বিশেষ ভাবে দরকার। কেননা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শান্তির বিকল্প নেই।
প্রশ্ন আসতে পারে কাশ্মীরকে
স্বাধীনতা দিয়ে সেটা সম্ভব কি না? মাত্র ৪৫ বছর আলাদা থেকে দুই জার্মানির মানুষেরা এক হতে হিমশিম খাচ্ছে
বলে শুনেছি জার্মানি বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর অর্থনীতি হয়ার পরেও। কাশ্মীরের
তিন অংশে প্রায় পঁচাত্তর বছর ধরে তিন ভিন্ন ব্যবস্থায় একের পর এক প্রজন্ম গড়ে
উঠেছে। স্বাধীনতার প্রশ্নে এক হলেও দেশ গঠনে তারা একই মতামত পোষণ করবে তার
কোন মানে নেই। তাছাড়া স্বাধীন হলে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা অধিকাংশই
যুদ্ধ ছাড়া জীবনে কিছু দেখেনি। এই লেখাটা যখন সেভ করতে যাই কাশ্মীর
নামে দেখি এ নামে একটি ফাইল অলরেডি আছে। ভুলেই গেছিলাম। ওপেন করে দেখি ওটা মার্চে লেখা
যা কিনা পোস্ট করা হয়নি। যদিও পরিস্থিতি বদলেছে, তবুও সেদিনের লেখা অনেক কথাই
বর্তমানের জন্য প্রযোজ্য, তাই সেটাই সেখানে পেস্ট করে দিচ্ছি।
*********************************************************************
কাশ্মীর
কাশ্মীর
কাশ্মীর অশান্ত অনেক যুগ ধরেই,
এখন কাশ্মীরকে নিয়ে ভারত পাকিস্তানে অশান্তি। অশান্তি সারা বিশ্বে। কিন্তু যাদের জন্য এত সাজ সাজ
রব, তারাই উপেক্ষিত। সবাই বসে আছে
ভারত জিতবে না পাকিস্তান জিতবে সেটা দেখতে, কিন্তু কাশ্মীরীরা জিতবে না হারবে সে নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। যদি ভুল না করি কাশ্মীরের শেষ রাজা হরি সিংহের কোন এক পূর্বপুরুষ ইংরেজদের কাছ থেকে কাশ্মীর কিনে
নিয়েছিলেন। ব্রিটিশদের কাছ
থেকে সেই স্বাধীনতা কোন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আসেনি। যতদিন ব্রিটিশ ভারত ছিল, সেই
হিন্দু রাজার শাসন নিয়ে খুব বেশি প্রতিবাদ হয়েছে বলে জানা নেই, যদিও শেখ আবদুল্লাহ
তার বিরোধী ছিলেন। সমস্যা হল দেশ
স্বাধীন হওয়ার পরে। হরি
সিংহ ভারতে ব্রিটিশ শাসন অবসানের বিপক্ষে ছিলেন। ব্রিটিশরা চলে গেলে তার সামনে
তিনটি পথ খোলা ছিল – (১) জনগণের সিংহভাগ মুসলিম হওয়ায় পাকিস্তানে যোগ দেওয়া, (২)
নিজে হিন্দু বিধায় ভারতে যোগ দেওয়া আর (৩) কাশ্মীরকে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা
দেওয়া। তিনি তৃতীয় পথ বেছে নিলে শুরু হয় প্রজা বিদ্রোহ। পাকিস্তান এতে সক্রিয় অংশগ্রহণ
করে দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ দখল করে নেয়। বেগতিক দেখে হরি সিংহ ভারতের শরণাপন্ন
হন। কিন্তু কাশ্মীর ভারতে যোগ দেবে শুধু
এই শর্তেই নেহেরু তাঁকে সাহায্য করার আশ্বাস দেন। তাছাড়া কাশ্মীরের জনপ্রিয় নেতা
শেখ আবদুল্লাহও ভারতের পক্ষে মত দেন বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে। এরপর থেকে কাশ্মীর নিয়ে শুরু
হল ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতা যা ছিল দু দেশের মধ্যে চার চারটি যুদ্ধের কারণ। কিন্তু সেসব অতীতের ব্যাপার। ভবিষ্যৎ কি? কাশ্মীরের মুসলিম
জনগণের অধিকাংশই ভারতের শাসন মানতে চায়না, তবে তারা সবাই যে পাকিস্তানের সাথে যেতে
চায় সেটাও নয়। কাশ্মীর আজ
ভারত, পাকিস্তান আর চীন – এই তিন দেশের দখলে। ইচ্ছে অনিচ্ছায় সেখানকার মানুষ
তিনটে ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। আজ চাইলেই যে তারা একসাথে একটা দেশ গড়তে পারবে সে সম্ভাবনা কম। যতদূর জানি জার্মানির জনগণ যারা
মাত্র ৪৫ বছর দুটো ভিন্ন দেশে ছিল তারা দুই জার্মানি এক হওয়ার তিরিশ বছর পরেও এক জাতি হিসেবে চলতে বিভিন্ন
সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এটা পশ্চিম
জার্মানি সব দিক থেকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অন্যতম একটা হওয়ার পরেও। অনেকেই বলতে পারেন বাংলাদেশ যদি
শূন্য থেকে শুরু করে আজ এই পর্যায়ে আসতে পারে, ওরা পারবে না কেন? প্রথমত
বাংলাদেশের মানুষ কখনই দুটো ভিন্ন দেশে বাস করেনি, দুটো পরস্পর বিরোধী শিক্ষা
দ্বারা শিক্ষিত হয়নি। বাংলাদেশের আরও একটা সুবিধা ছিল তার
দক্ষিণ দিক ছিল খোলা, মানে সমুদ্র সৈকত। কিন্তু যদি কেউ বলেন দুই বাংলার লোকেরা মিলে আজ একটা
দেশ গড়ে তুলতে পারবে, সেটা বিশ্বাস করতে বেশ কষ্ট হবে। যদিও আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি এক। বলতে পারেন ধর্মের কথা। সেক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ আরব
বিশ্বকে ধরতে পারি, যাদের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি এক। তারপরেও মনে হয় না সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত আর আমিরাতের সব মানুষ
চাইলেই একটা দেশে গড়তে পারবে। প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিছু
রীতিনীতি থাকে – কিছু লোক তা মানে, কিছু লোক মানে না, কিন্তু পুরুষানুক্রমে থাকতে
থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। একই কারণে অনেক দিন যারা বাইরে দেশের বাইরে থাকে তারা দেশে ফিরে অনেক দিন পর্যন্ত বিভিন্ন অসুবিধার
সম্মুখীন হয়। আর সে অসুবিধাগুলো নিত্যদিনের জীবন চলার। তাই কাশ্মীরের তিন অংশকে এক
করলেই যে তারা এক হয়ে যাবে, তাদের নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নে বিরোধের সৃষ্টি
হবে না সেই গ্যারান্টি কোথায়? আবার ভারতেরও সেটা ভাবার সুযোগ নেই যে পুরো কাশ্মীর
পাকিস্তানে যোগ দেবে না। আর তাই যদি হয়
তাহলে যারা এতদিন ভারতের অংশ হিসেবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের অবস্থা কি
হবে? তারা কি নিরাপদে থাকবেন নতুন দেশে নাকি দেশদ্রোহী বলে বিচারের সম্মুখীন হবেন?
তাছাড়া দু দেশেই আছে জনতার চাপ। সেক্ষেত্রে যেটা হতে পারে তা হল ভারত ও পাকিস্তানের কোন চুক্তিতে আসা,
বর্তমান লাইন অফ কন্ট্রোলকে আন্তর্জাতিক সীমানা করা, এমন সব রাজনৈতিক পদক্ষেপ
নেওয়া যাতে কাশ্মীরে ভারত ও পাকিস্তানের সেনার উপস্থিতি নগন্য হয়। কাশ্মীরের জনগণ নিজেদের
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিজেদের হাতেই তুলে নিতে পারে, যদিও আন্তর্জাতিক বর্ডারে ভারত ও পাকিস্তানি সেনা থাকবে
যাদের দায়িত্ব থাকবে অনুপ্রবেশ, বিশেষ করে সশস্ত্র গ্রুপের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। একমাত্র এটাই পারে কাশ্মীরে
শান্তি ফিরিয়ে আনতে, সেখানকার ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতি স্বাভাবিক করতে। মনে রাখা দরকার, যদি অর্থনীতি
শক্তিশালী না হয়, সাধারণ মানুষের জীবনের কোনই পরিবর্তন হবে না। যারা কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য
লড়াই করেছে তারা কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে উন্নত স্বাবলম্বী কাশ্মীরের জন্যই সেটা
করেছেন। আরও মনে রাখতে হবে
কাশ্মীর সব দিক থেকেই ভারত, পাকিস্তান ও
চীনের দ্বারা ঘেরা। এই তিন দেশই যদি বৈরী অবস্থানে যায়
কাশ্মীরের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন। বর্তমানে
কাশ্মীরের ভারতীয় অংশের অর্থনীতি ভারতের সাথে ইন্টিগ্রেটেড। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর যারাই রাশিয়াকে মাইনাস করে তাদের
অর্থনীতি গড়ে তুলতে চেয়েছে সবাই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, এমন কি প্রিবাল্টিকের
দেশগুলোও। তাছাড়া মনে রাখতে হবে পাকিস্তান
কাশ্মীরের যে ৩৭% দখল করেছে তার খুব ছোট্ট একটা অংশই আজাদ কাশ্মীর। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের সিংহভাগই গিলগিট বাল্টিস্তান নামে পরিচিত। চীনের অংশের নাম আক্সার চীন। যেখানে বালুচিস্তানের মানুষ এখনও সংগ্রাম
চালিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতার জন্য সেই পাকিস্তান কাশ্মীরকে স্বাধীন হতে দেবে সেটা কে
বলল? আজ তারা কাশ্মীরীদের ভারত বিরোধিতাকে সমর্থন দিচ্ছে, কিন্তু তারা যে সেই
কাশ্মীরীদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে (যা হল গিয়ে পাকিস্তান বিরোধিতা) সমর্থন দেবে না
সেটা বোঝার জন্য খুব বেশি গবেষণার দরকার হয় না। পূর্ব বাংলার মুসলমানদের কাঁধে চেপে জিন্নাহসহ মুসলিম লীগের নেতারা স্বাধীন
পাকিস্তান লাভ করার পর বছর না ঘুরতেই উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা
হিসেবে ঘোষণা করে আর ১৯৭১ সালে তিরিশ লাখ বাঙ্গালীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাই আমার কেন যেন মনে হয় এমন কি কাশ্মীর যদি
স্বাধীন হয়ও, তাদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হবে। ইউরোপে এমন অনেক দেশই আছে যারা টিকে আছে ইউরপীয়ান ইউনিয়ন আর
অ্যামেরিকার সাহায্যে। সেটা কি আদৌ স্বাধীনতা। এখানে সেই সম্ভাবনা কম। আফগানিস্তান এর
উজ্জ্বল উদাহরণ। তাই এমন একটা ফর্মুলা দরকার যাতে
কাশ্মীরের মানুষ আরও বেশি স্বায়ত্বশাসন পায়, তাদের অর্থনীতি ভেঙ্গে না পড়ে আবার
তাদের নিজেদের মধ্যেও ক্ষমতার রূপরেখা কি হবে এ প্রশ্নে বিভেদ তৈরি না হয়। এই প্রশ্নেই ভারত বিভাগের সময় শেখ আবদুল্লাহ পাকিস্তানের সাথে যাননি, যদিও ভারতের সাথে থেকেও
তিনি সুখী ছিলেন না।
আমি জানি, রাজনীতি নিয়ে লেখাটা আমার সাজে না। এর উপর পড়াশুনা বা ডিগ্রী নেই। তবুও লিখি, কারণ কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে। ১৯৭১ চোখের সামনেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। এর পরেও দেখেছি সোভিয়েত রিপাবলিকগুলো কীভাবে স্বাধীন হল, দেখেছি চেচনিয়া, কসোবাসহ অনেক দেশ। যদিও টিভিতে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন অস্ত্রের ঝনঝনানি এমন ছিল না। এখন মুক্তিসেনা মানেই অস্ত্রের ভাণ্ডার। এদের অধিকাংশই যখন যুদ্ধ ছাড়া জীবনের আর কোন অভিজ্ঞতা বঞ্চিত আর অস্ত্রের জোরে মানুষের জান মালের মালিক, স্বাধীনতা পেয়ে খুব কম ক্ষেত্রেই এরা তার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চায় বা পারে। চেচনিয়ায় আমরা সেটা দেখেছি, কসোবায় দেখছি। এমনকি আই এস বিভিন্ন এলাকা নিজেদের দখলে এনেও সেখানকার জনগণের জন্য কিছু না করে সন্ত্রাসের রাজ্য কায়েম করেছে। অন্তত দেশ বিদেশের টিভি ফুটেজ তাই বলে। আজ স্বাধীনতা সংগ্রাম আর মানুষ মুক্তির আন্দোলন নয়, কিছু মানুষের বড়োলোক হওয়ার রাস্তা। এখন আর আদর্শের জন্য বড় দেশগুলো কাউকে সমর্থন করে না, করে নিজেদের অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক লাভের জন্য। ইরাক, লিবিয়া, ইউক্রাইন এটাই প্রমাণ করে। কাশ্মীর বা অন্য কোন দেশের ক্ষেত্রে অন্য রকম হবে সেটা ভাবার কোন কারণ নেই।
আমি জানি, রাজনীতি নিয়ে লেখাটা আমার সাজে না। এর উপর পড়াশুনা বা ডিগ্রী নেই। তবুও লিখি, কারণ কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে। ১৯৭১ চোখের সামনেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। এর পরেও দেখেছি সোভিয়েত রিপাবলিকগুলো কীভাবে স্বাধীন হল, দেখেছি চেচনিয়া, কসোবাসহ অনেক দেশ। যদিও টিভিতে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন অস্ত্রের ঝনঝনানি এমন ছিল না। এখন মুক্তিসেনা মানেই অস্ত্রের ভাণ্ডার। এদের অধিকাংশই যখন যুদ্ধ ছাড়া জীবনের আর কোন অভিজ্ঞতা বঞ্চিত আর অস্ত্রের জোরে মানুষের জান মালের মালিক, স্বাধীনতা পেয়ে খুব কম ক্ষেত্রেই এরা তার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চায় বা পারে। চেচনিয়ায় আমরা সেটা দেখেছি, কসোবায় দেখছি। এমনকি আই এস বিভিন্ন এলাকা নিজেদের দখলে এনেও সেখানকার জনগণের জন্য কিছু না করে সন্ত্রাসের রাজ্য কায়েম করেছে। অন্তত দেশ বিদেশের টিভি ফুটেজ তাই বলে। আজ স্বাধীনতা সংগ্রাম আর মানুষ মুক্তির আন্দোলন নয়, কিছু মানুষের বড়োলোক হওয়ার রাস্তা। এখন আর আদর্শের জন্য বড় দেশগুলো কাউকে সমর্থন করে না, করে নিজেদের অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক লাভের জন্য। ইরাক, লিবিয়া, ইউক্রাইন এটাই প্রমাণ করে। কাশ্মীর বা অন্য কোন দেশের ক্ষেত্রে অন্য রকম হবে সেটা ভাবার কোন কারণ নেই।
দুবনা, ০৩ মার্চ ২০১৯
******************************************************************
তাহলে এখন কী করা? আমি আপাদমস্তক
একজন পদার্থবিদ, আর সেখান থেকেই এসব ঘটনার বিচার করি। এ নিয়ে একটি চুটকি আছে,
এখানে বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
এক পদার্থবিদ ও গণিতবিদকে
ইলেকট্রিক কেটলি ব্যবহারের উপায় বলা হচ্ছে।
এই যে খালি কেটলিটা দেখছ, তাতে মিনিমাম এতটুকু জল ভরে প্লাগ লাগিয়ে সুইচ অন করতে হবে।
এই যে খালি কেটলিটা দেখছ, তাতে মিনিমাম এতটুকু জল ভরে প্লাগ লাগিয়ে সুইচ অন করতে হবে।
এরপর তাদের দুজনের হাতেই জল ভর্তি
কেটলি দিয়ে বলা হল চায়ের জন্য জল ফুটাতে।
গণিতবিদ কেটলি থেকে জল ফেলে নতুন
করে জল ভরে বাকি কাজ শেষ করল। ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী
ইনিশিয়াল কন্ডিশনে ফিরে যেতেই সে এটা করল।
পদার্থবিদ কেটলিটা প্লাগে লাগিয়ে সুইচ অন করে দিলো। সে জানে প্রতিটি মুহূর্তই নতুন নতুন ইনিশিয়াল কন্ডিশনের জন্ম দেয়।
পদার্থবিদ কেটলিটা প্লাগে লাগিয়ে সুইচ অন করে দিলো। সে জানে প্রতিটি মুহূর্তই নতুন নতুন ইনিশিয়াল কন্ডিশনের জন্ম দেয়।
জীবন ফুটবল বা ক্রিকেট ম্যাচ নয়
যে রেফারি বা আম্পায়ার টস করে খেলা শুরু করবে। জীবন প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তনশীল।
এই পরিবর্তিত অবস্থাকে মেনে নিয়েই সামনে এগোতে হবে। ৩৭০ ধারা আজ আর নেই কিন্তু
সমসস্যা, কাশ্মীরের জনগণ সবই রয়ে গেছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি মাথায় নিয়ে দেখতে
হবে কী করলে তারা লাভবান হয়। এই সুযোগে যাতে কাশ্মীরিরা তাদের ভূখণ্ডে সংখ্যালঘুতে
পরিণত না হয় সেটা যেমন দেখতে হবে, একই ভাবে দেখতে হবে নতুন পরিস্থিতে সেখানে যাতে
শিল্পের বিকাশ ঘটে, মানুষের কর্মসংস্থান হয়। আমরা যেন সেই ছেলের মত না হই যে পাশে
দাঁড়িয়ে দেখে কীভাবে সদ্য হাঁটতে শেখা বাচ্চাটা পড়ে ব্যাথা পাচ্ছে আর পরে বলে আমি
ওকে মানা করেছিলাম ওখানে না যেতে। বিজেপি ফসল ঘরে তুলবে ভেবে যদি আমরা বর্তমান
বাস্তবতায় যতটুকু সম্ভব এই ভূমির উন্নয়নে নিজেদের সম্পৃক্ত না করি, তাহলে প্রশ্ন
জাগা অসম্ভব নয় আমরা আসলে কী চাই – সমস্যার সমাধান নাকি আমাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণীর
সত্যতা। আমরা মানুষেরা বড়ই স্বার্থপর। নিজেদের গবেষণার যথার্থতা প্রমাণ করতে শত শত
মানুষের জীবন উৎসর্গ করতে কখনোই দ্বিধা বোধ করিনা।
বিঃদ্রঃ এখন আমরা প্রায়ই কাশ্মীরের স্বাধীনতার কথা বলি। হরি সিং কিন্তু স্বাধীন কাশ্মীরের পক্ষেই বলেছিলেন। তখন যদি পাকিস্তান কাশ্মীর দখলের চেষ্টা না করত হরি সিংহকে ভারতের সাহায্য নিতে হত না আর আজকের এই পরিস্থিতির উদ্ভব না। পাকিস্তান কাশ্মীর না পাক, একটা বন্ধু রাষ্ট্র পেত। কাশ্মীর সমস্যা বলে কিছু থাকতো না। আর কাশ্মীর সমস্যা না থাকলে ভারত ও পাকিস্তান দুটো বন্ধু দেশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে পারত, ঠিক যেমনটা জিন্নাহ বলেছিলেন “স্বাধীনতার পরে ভারত আর পাকিস্তান হবে ভ্রাতৃপ্রতিম দুটো দেশ।“
বিঃদ্রঃ এখন আমরা প্রায়ই কাশ্মীরের স্বাধীনতার কথা বলি। হরি সিং কিন্তু স্বাধীন কাশ্মীরের পক্ষেই বলেছিলেন। তখন যদি পাকিস্তান কাশ্মীর দখলের চেষ্টা না করত হরি সিংহকে ভারতের সাহায্য নিতে হত না আর আজকের এই পরিস্থিতির উদ্ভব না। পাকিস্তান কাশ্মীর না পাক, একটা বন্ধু রাষ্ট্র পেত। কাশ্মীর সমস্যা বলে কিছু থাকতো না। আর কাশ্মীর সমস্যা না থাকলে ভারত ও পাকিস্তান দুটো বন্ধু দেশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে পারত, ঠিক যেমনটা জিন্নাহ বলেছিলেন “স্বাধীনতার পরে ভারত আর পাকিস্তান হবে ভ্রাতৃপ্রতিম দুটো দেশ।“
দুবনা, ১০ আগস্ট ২০১৯
Comments
Post a Comment