প্রিয় ট্রাম্প ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
প্রিয়া
সাহার দুঃখটা যেন তুষের আগুনের মত, নিভে যেতে যেতেও ধুক ধুক করে করে জ্বলছে। আসলে অনেক দিন হয়ে গেল ব্যাপারটা,
ভেবেছিলাম ল্যাঠা চুকে গেছে। তারপরও
ফেসবুকে এ নিয়ে মাঝে মধ্যে পোস্ট দেখি, তাই এই লেখা। যদিও মনে করি এসব ঘটনা যত ইগ্নোর করা যায় ততই ভাল। কিন্তু
ইগ্নোর করার মত ঘটনা কি এটা?
আমি প্রথম ঘটনাটা জানি টিটোর পোস্ট থেকে, যদিও বিস্তারিত কিছুই সেখানে ছিল না। পরে বিভিন্ন কাজেকর্মে ভুলে যাই, কিন্তু পরের দিন ফেসবুক যখন সয়লাব প্রিয়া সাহাকে নিয়ে, যখন ফেসবুকের বাংলাদেশ ডোমেনে প্রিয়া নামটা সবচেয়ে অপ্রিয় হয়ে ওঠে তখন ইউটিউবে ঢুকে ভিডিওটা দেখি। সাথে সাথে মনে কিছু প্রশ্ন জাগে, যদিও তখন লেখার তেমন কোন প্রয়োজন মনে করিনি।
মানুষ মাত্রেই তার সুখ দুঃখের কথা অন্যদের কাছে বলে হালকা হতে চায়। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের সাফল্যের কথা যেমন অন্যদের বলে গর্ব বোধ করি, তাদের ব্যর্থতার কথা বলেও অন্যদের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করি। এটা মানুষের স্বভাব। এসব আমরা করি যখন নিজেদের মধ্যে সমঝোতা না থাকে। যতদিন সম্ভব ঘরের ঝগড়া মানুষ চেপে রাখে, তবে একটা সময় আসে যখন সে আর চেপে রাখতে পারে না, পাড়ার লোককে জানায়, কোর্ট কাছারি, মামলা মকাদ্দমা অনেক কিছুই করে। করে, কারণ সে ন্যায়বিচার খোঁজে। ন্যায় বিচার খোঁজে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।
আমি প্রথম ঘটনাটা জানি টিটোর পোস্ট থেকে, যদিও বিস্তারিত কিছুই সেখানে ছিল না। পরে বিভিন্ন কাজেকর্মে ভুলে যাই, কিন্তু পরের দিন ফেসবুক যখন সয়লাব প্রিয়া সাহাকে নিয়ে, যখন ফেসবুকের বাংলাদেশ ডোমেনে প্রিয়া নামটা সবচেয়ে অপ্রিয় হয়ে ওঠে তখন ইউটিউবে ঢুকে ভিডিওটা দেখি। সাথে সাথে মনে কিছু প্রশ্ন জাগে, যদিও তখন লেখার তেমন কোন প্রয়োজন মনে করিনি।
মানুষ মাত্রেই তার সুখ দুঃখের কথা অন্যদের কাছে বলে হালকা হতে চায়। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের সাফল্যের কথা যেমন অন্যদের বলে গর্ব বোধ করি, তাদের ব্যর্থতার কথা বলেও অন্যদের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করি। এটা মানুষের স্বভাব। এসব আমরা করি যখন নিজেদের মধ্যে সমঝোতা না থাকে। যতদিন সম্ভব ঘরের ঝগড়া মানুষ চেপে রাখে, তবে একটা সময় আসে যখন সে আর চেপে রাখতে পারে না, পাড়ার লোককে জানায়, কোর্ট কাছারি, মামলা মকাদ্দমা অনেক কিছুই করে। করে, কারণ সে ন্যায়বিচার খোঁজে। ন্যায় বিচার খোঁজে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।
প্রিয়া সাহার বক্ত্যব্যে মানুষের কতগুলো আপত্তি আমি দেখেছি। প্রথমটা হল সংখ্যা, মানে ৩৭ মিলিয়ন। আমার প্রথমে ধারণা হয়েছিল, যেহেতু দেশে আমরা মূলত লক্ষ আর কোটি নিয়ে কাজ করতে অভ্যস্ত, তাই এটা মনে হয় এটা বলার ভুল। কিন্তু পরে দেখলাম ব্যাপারটা যত সহজ বলে মনে হয় তত সহজ নয়। অনেক যদি আর কিন্তুতে ঘেরা এ রহস্য। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এসব কাজে স্ট্রেট ফরোয়ার্ড হিসাব করা হয়। যেমন যদি ৪৭ এর দেশ ভাগের সময় পূর্ববাংলায় হিন্দু মুসলিমের অনুপাত ধরা হয় তাহলে আমরা পাব এক রেজাল্ট আর ১৯৭১ সালের অনুপাতকে বেজ হিসেবে নিলে পাব অন্য রেজাল্ট। আমরা ধরে নিতে পারি যে দেশ ভাগ না হলে বা দেশভাগের ফলে দেশান্তরী না হলে এ অঞ্চলের হিন্দু ও মুসলিম জনসংখ্যা একই ভাবে বাড়ত। কিন্তু যদি আমরা পশ্চিম বঙ্গের দিকে তাকাই তাহলে বুঝতে পারব এই এলাকায় হিন্দুদের মধ্যে জন্মের হার মুসলিমদের চেয়ে কম। তারপরেও এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় এ অঞ্চল থেকে প্রচুর হিন্দু দেশ ত্যাগ করেছে, করছে। এবং অনেক ক্ষেত্রেই করতে বাধ্য হচ্ছে। এটা শুধু মনে করার ব্যাপার নয়, এ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণাও হয়েছে। অধ্যাপক আবুল বারকাত যুক্তি প্রমান দিয়ে দেখিয়েছেন এভাবে চলছে থাকলে আগামী কয়েক দশকে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় থাকবে না। এটা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের ব্যাপার। কেননা একটি জাতি গড়ে ওঠে বিভিন্ন উপাদান নিয়ে। হিন্দু সম্প্রদায়ও বাঙ্গালী জাতির ভাষা, সংস্কৃতি, আচার আচরণ, শিল্প, সাহিত্য, ইতিহাস ইত্যাদির একটি অন্যতম প্রধান উপাদান। বাঙ্গালী জাতির উৎপত্তি এদেশে ইসলামের প্রসার তো বটেই এমন কি ইসলামের আবির্ভাবের অনেক আগে। সেদিক থেকে বিচার করলে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায় বাঙ্গালীর জাতিস্বত্তার সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। সংখ্যা নিয়ে সমস্যার প্রধান কারণ আমাদের দেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি। শুধু মাত্র অধ্যাপক আবুল বারকাত ছাড়া আর কেউ তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু করেছেন কি? আমি নিজেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংখ্যা দেখেছি। অথচ বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান পরিষদ বা পূজা কমিটি, যা কিনা প্রতিটি এলাকাতেই আছে, চাইলে নিজেদের উদ্যোগে দেশে সংখ্যালঘুদের বা হিন্দুদের সংখ্যা নির্ণয় করতে পারে। সেক্ষেত্রে সংখ্যা নিয়ে যে বিভিন্ন মতামত আছে সেটা কমবে। কেননা তথ্য বর্তমান যুগে এক বিশাল সম্পদ। সঠিক তথ্য না থাকলে বা তথ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকতে ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত হবেন কি করে?
রাশিয়ানরা একটা কথা বলে। যদি এ বল
তাহলে বি-ও বল। এর মানে হচ্ছে কোন কথা বা কাজ মাঝপথে ছেড়ে না দেওয়া। ভারত বিভাগ হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ফসল ছিল সেই বিভাগ। ফলে দেশ বিভাগের সময় ব্যাপক পরিমাণ মানুষ যে দেশান্তরী হবে সেটা না বোঝার কথা
ছিল না। কিন্তু যে সব রাজনীতিবিদ বা দল এটা করেছে তারা কী সমস্ত
ছিন্নমূল মানুষদের দায়িত্ব নিয়েছে? তাদের তো দায়িত্ব ছিল শুধু সীমান্তের ওপার থেকে
আসা লোকদের আশ্রয় দেওয়া নয়, যারা সীমান্ত পেরিয়ে যেতে চায় তাদেরও ঠিকঠাক ভাবে
ওপারে পৌঁছে দেওয়া। সেটা যে হয়নি তা সেই সময়ে দাঙ্গায় মৃত মানুষের
সংখ্যাই বলে দেয়। দেশ ভাগের পর দেখা যায় ভারতে মুসলিম জনগোষ্ঠী
পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। কংগ্রেস বরাবরই দ্বিজাতি তত্ত্বকে অস্বীকার করেছে,
তাই স্বাধীনতার পরে ভারত সরকার মুসলিম বিতাড়নে আগ্রহী ছিল না। অন্যদিকে
জিন্নাহ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত নাগরিকদের সমান অধিকারের কথা ঘোষণা করলেও
সাধারণ মানুষ সেটা গ্রহন করেছিল বলে মনে হয় না। ফলে ৪৭
থেকে ৭১ সমস্ত সময়টাই পূর্ব পাকিস্তান থেকে হিন্দুরা ভারতে চলে গেছে। কারণ একটাই। ৪৭ পরবর্তী বাংলার মুসলমান ধরে নিয়েছে এটা শুধু
তাদেরই দেশ। হিন্দুরা এ দেশে অবাঞ্ছিত। কী তখন, কী
এখন সুযোগ পেলেই হিন্দুদের জানিয়ে দেওয়া হয় তাদের দেশ ভারত, এ দেশে তারা
অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত। আর এর ফলেই সৃষ্টি হয় এক ধরণের মানসিক চাপ। যার ফলে যে হিন্দুরা এক সময় এ দেশের ব্যবসা, বানিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতির একটা
বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করত, আজ তারা শুধু সংখ্যায় নয়, জাতীয় জীবনের মূল স্রোত থেকেও
ক্রমশই ছিটকে পড়ছে। সরকার নিজেও বিভিন্ন সময়ে সেটাকে উস্কে দিয়েছে
রাজনৈতিক স্বার্থে। শত্রু সম্পত্তি আইন যেটা বর্তমানে অর্পিত সম্পত্তি
আইন হিসেবে খ্যাত সেটা তার প্রমান। আমি এ ব্যাপারে
বিশেষজ্ঞ নই, তবে সাধারণ বুদ্ধি বলে এই আইন সংবিধানের পরিপন্থী। কেননা সব নাগরিকের যদি অধিকার সমান হয় এই আইন তাহলে অনেক নাগরিকের অধিকার
খর্ব করে।
প্রিয়া সাহার বক্তব্য নিয়ে ফেসবুকের লেখালেখি থেকে জানলাম অনেকেই
মনে করেন এদেশে হিন্দুরা জামাই আদরে আছে। আমার মনে হয় জামাই আদর
না বলে এ দেশে হিন্দুদের অবস্থাকে বলা যায় বিত্তশালী শ্বশুর বাড়িতে গরীবের সংসার
থেকে আনা বউয়ের মত। সেই বউকে প্রতিদিন যৌতুকের টাকার
জন্য লাঞ্ছিত হতে হয়, ন্যায় বিচার চাইলে কিলটা ঘুসিটা খেতে হয়, একটু এদিক সেদিক
হলেই বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ভাল বউয়ের যেমন একটাই কাজ সব অত্যাচার সহ্য করে
স্বামীর সেবা করে যাওয়া, ঘরের দুঃখ ঘরে রেখে হাসিমুখে অন্যদের নিজের সুখের কথা
বলা, অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এদেশের হিন্দুদেরও সেটাই করতে হবে। কেননা নালিশ বা প্রতিবাদ করলেই তারা খারাপ বউ বা
দেশদ্রোহী বলে চিহ্নিত হবে।
এক বন্ধু
প্রশ্ন তুলেছে যে দেখা দরকার কতজন মানুষ চাপে পড়ে দেশ ত্যাগ করেছেন আর কত জন
উন্নতির আশায় সেটা করেছেন, যেমন কিনা এখন এদেশের হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সুন্দর
জীবনের আশায় ইউরোপ, অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছে। উত্তরটা বিভিন্ন রকমের। এদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা এখন যখন বাইরে
যায় তারা কিন্তু একেবারে চলে যায় না, এমন কী ফিরে আসার প্ল্যান না থাকলেও
ভিটে-মাটি রেখে যায়। বিভিন্ন গবেষণা
বলে ৪৭ পরবর্তী সময়ে এদেশের ব্যবসা বানিজ্যের একটা বড় অংশ হিন্দুদের হাতে ছিল। চাপের মুখে পড়ে না হলে তাদের তো
অন্তত সব ফেলে এভাবে যাওয়ার কথা ছিল না। তবে সবাই
এভাবে গেছে তাও নয়। আমার নিজের গ্রাম
থেকে কয়েক শ’ পরিবার পঁচাত্তর পরবর্তী কালে দেশ ছেড়ে চলে গেছে। তার একটাই কারণ – নিরাপত্তার অভাব। এক্ষেত্রে আমার নব্বই দশকের রাশিয়ার
কথা মনে পড়ছে। সোভিয়েত আমলে আমরা
রাত-বিরাতে এদিক সেদিক ঘুরতাম। মনেই হয়নি
কেউ আমাদের কিছু বলবে। নব্বইয়ের দশকে
সেটা বদলে যায়। সব দিন সবাইকে যে হেনস্তা করত তা নয়,
তবে আমাদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক ছিল। একই ঘটনা
শুনেছি ঘটেছে আমাদের বন্ধুদের সাথে ২০০১ সালে টুইন টাওয়ার আক্রমনের পরে অ্যামেরিকায়। আজ তো বাংলাদেশ আগের মত নেই। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুযোগ সবিধা
অনেক বেড়েছে। রাস্তা ঘাট উন্নত
হয়েছে। তারপরেও একটু অবস্থাপন্ন মানুষ
তাদের ছেলেমেয়েদের বাইরে পাঠাতে চাইছে। সেটা কী
হিন্দু, কী মুসলিম – সবাই। কারণ?
নিরাপত্তার অভাব। হাজার সুযোগ,
হাজার ভাল চাকরি মানুষকে ধরে রাখতে পারছে না শুধুই নিরাপত্তার অভাবে। হিন্দুদের ক্ষেত্রে সেটা ঘটছে আরও
বেশি। জনগণের একটা বিরাট অংশ স্বীকারই
করতে চাইছে না যে হিন্দুরাও তাদের মতই এ দেশের নাগরিক, তাদের মতই হিন্দুরাও এ
দেশকে ভালবাসে, এ দেশকে ঘিরেই তাদের ভবিষ্যতের কথা ভাবে। দ্বিজাতি তত্ত্বকে অস্বীকার করে রক্তের বিনিময়ে
বাংলাদেশ নামে এ ভূখণ্ডকে স্বাধীন করলেও এদেশ শুধুই মুসলমানের দেশ এ বিশ্বাসও তারা
মনের গভীরে পোষণ করে। শত্রু সম্পত্তি বা অর্পিত সম্পত্তি আইন
সেটাই প্রমান করে, কেননা এই আইনের যাঁতাকলে পড়ে অনেকেই বাধ্য হচ্ছে দেশ ছাড়তে। অবাক লাগে এজন্যে যে এই জনগণই প্যালেস্টাইনের
জনগণ বা রোহিঙ্গাদের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত, অথচ পাশের বাড়ির লোকের সাথেও যে
অনেকটা একই ধরণের আচরণ তারা করছে সেটা তাদের চোখে পড়ে না।
বিভিন্ন লোকের বক্তব্য শুনে আমার এরকমও মনে হয়েছে যে যদি ট্রাম্পের কাছে না বলে প্রিয়া সাহা ওবামার কাছে কথাগুলো বলত তাহলে অন্যায়টা একটু কম হত। কিন্তু অন্যদের কাছে নালিশ করা তো আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি। কাগজেই তো কতবার পড়েছি আমাদের দেশের নেতারা সুযোগ পেলেই ইউরোপ, অ্যামেরিকা বা ইন্ডিয়ার নেতাদের কাছে গিয়ে প্রতিপক্ষের নামে তাদের কান ভারী করে। শুধু কি তারাই?
১৯৯৬ সাল। আমি দুবনা থেকে আইসিটিপিতে গেছি দু’ মাসের জন্য। কয়েক জন বাংলাদেশী ছেলে তখন সেখানে ডিপ্লোমা কোর্স করছিল। একদিন লাঞ্চের পরে অফিসে ফিরে দেখি চিরকুট, “ডঃ সাহা সী মী প্লিজ”। ওটা রেখেছিলেন হাই এনার্জি সেকশনের সেক্রেটারি। দেখা করতেই বললেন বাংলাদেশের এক ছেলে পুলিশের হাতে ধরা পরে হাসপাতালে আছে। হিউম্যান রাইটস গ্রুপ ওকে সাহায্য করতে চায়। ও যেহেতু বাংলা ছাড়া আর কোন ভাষা জানে না, আমি ওর সাথে কথা বলে সমস্যা জানতে পারি কি না? গিয়ে দেখি ১৫ – ১৬ বছরের এক ছেলে শুয়ে আছে। ইটালিতে ঢুকেই পাসপোর্ট ফেলে দিয়েছে। ফ্রান্সে ঢোকার সময় ধরা পড়েছে। তারপর শুরু হোল তার গল্প। দেশে তখন বিএনপি সরকার। তার উপরে নাকি পুলিশি অত্যাচার হয়েছে সে আওয়ামী লীগ করে বলে। তাই সে দেশ থেকে পালিয়ে এসেছে এ দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার আশায়। যেহেতু তাকে দেখে মনে হচ্ছিল স্কুলের ছাত্র তাই এটা বিশ্বাস করতে চাইছিলাম না। শেষ পর্যন্ত বললাম, ঠিক আছে তুমি যেটা বলছ তাই লিখে দেব। আমি সেটাই ইংরেজিতে লিখে অফিসে জমা দিই, পরের দিন শুনি সে হাসপাতাল থেকে পালিয়েছে। আমি এমনও শুনেছি দেশে অনেকে পুলিশকে টাকা দিত তাদের মারার জন্য। পরে ওই ছবি দেখিয়ে তারা বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইত। তাই বিদেশে দেশের বিশেষ করে সরকারের নামে নালিশ করা আমাদের জন্য বলতে গেলে ডাল ভাত। শুধু নালিশ কেন, অনেক মিটিং মিছিল হয়। এমন কী বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি অবমাননার ঘটনার কথা শুনেছি। সে খবর দেশি বিদেশি বিভিন্ন মিডিয়ায় আসে। এ নিয়ে কী এত হৈচৈ হয়? নাকি মামলা মকাদ্দমা হয়? নাকি মন্ত্রীরা কথা বলেন। সবচেয়ে বড় কথা প্রিয়া সাহা যে কথাগুলো বলেছে সেটা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এসব ঘটে, ঘটছে। বিচারের আশায় বসে থেকে থেকে মানুষ হতাশ হয়ে বাইরে গিয়ে বিচার চায়। মন্ত্রীদের কাছে জানতে ইচ্ছে করে, আচ্ছা এই যে অ্যামেরিকা সরকার আমাদের দেশের লোকজন ডেকে দেশের অবস্থা জানতে চাইল আর এতে করে পরোক্ষ ভাবে দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করল তার কি কোন প্রতিবাদ তারা করেছেন? বিদেশে কর্মরত যে শ্রমিকদের টাকায় আজ দেশে উন্নয়নের বান বইছে সেখানে যখন এই শ্রমিকরাই অত্যাচারিত বা ধর্ষিত হয় আমাদের মন্ত্রীরা কি তার প্রতিবাদ করেন? কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করেন? অনেকে প্রশ্ন করেছেন বর্তমান সরকার তো হিন্দু বান্ধব। এদের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ?
ভারতে বিভিন্ন সময়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। এখন হয়। পাকিস্তান বা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন বিধায় সাম্প্রদায়িক মারামারি হয় না, হয় মার। ভারতে বড় বড় সব দাঙ্গা হয়েছে কংগ্রেস বা অন্য জামানায়। কিন্তু তখন কিন্তু ভারতীয় মুসলিম এতটা অসহায় অনুভব করেনি যতটা সে এখন করে। কারণ সে জানতো রাষ্ট্র তাদের পাশে দাঁড়াবে, বিচার হবে। এখন যেহেতু ভক্ষক এসেছে রক্ষকের ভূমিকায় মানুষ তাই বিশ্বাস হারাচ্ছে, নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। আমাদের দেশে সে অবস্থা সব সময়ই কমবেশি বিদ্যমান। তাই নিরাপত্তাহীনতা এদেশের সংখ্যালঘুর নিত্যদিনের সঙ্গী। অনেকেই বলবেন অন্য আমলে তো অবস্থা আরও খারাপ ছিল। সেটা ঠিক। তবে আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে থাকে, সে তখন এসব সমস্যা নিয়ে সোচ্চার হয়। বামপন্থী অনেক দল এ নিয়ে কথা বললেও সেটা ততটা ভারী নয়, যেটা আওয়ামী লীগের বলায় হয়। যার ফলে মানুষ তখন ভয় পেলেও নিজেদের একাকী মনে করে না। তারা আওয়ামী লীগকে পাশে পায়। আশায় থাকে যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এর অবসান ঘটবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন কিছু ঘটলে সে পাশে আর কাউকে পায় না। বরং যখন দেখে আওয়ামী লীগেরই অনেক স্থানীয় নেতা এসবে সাথে জড়িত সে তার শেষ বিশ্বাসের, শেষ আস্থার জায়গাটুকু হারায়। ফলে বর্তমান সরকারের সময় অনেক ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ সুবিধা পেলেও নিরাপত্তার অভাব তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তাই মন্ত্রী মহোদয়গণ যদি প্রিয়া সাহাকে না ধমকিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন সেটা কী দেশ কী জাতি সবার জন্য ভাল হত না? আপনারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন না আর সেটা বললে লোকজন দেশদ্রোহী হবে সেটা তো হয় না।
প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে এত লেখালেখি দেখে আমার কেন যেন মনে হয়েছে এটা যেন রাজপথে নারী নির্যাতন বিরোধী সভায় জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে ঘরে ফিরে বউ পেটানো। আমি ৯৯.৯৯% গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আমাদের দেশের যে সব রাজনৈতিক দল ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারায় অ্যামেরিকা, চীন, ভারত এসব দেশকে এক বিশাল ফ্যাক্টর বলে মনে করে তাদের যে কেউ বিরোধী দলে থাকাকালীন ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পেলে সরকার যে কতটা স্বৈরাচারী, কতটা অগণতান্ত্রিক - এসব কথা বলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করত না। সমস্যা হল সরকারি দল তাদের সব কাজকেই গণতান্ত্রিক মনে করে, বিরোধী দল সেটা স্বৈরাচার বলে আখ্যায়িত করে। আজ আমাদের দেশে মূল রাজনৈতিক দলগুলোর গণতন্ত্রের সংজ্ঞা বদলায় ক্ষমতার সাথে তাদের সম্পর্কের উপর। ক্ষমতা সবারই আজন্ম প্রেমিকা, তবে যখন যে দল তাকে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ করতে পারে সে দলের অন্যতম কাজই হয় অন্যান্য প্রেমিকদের বাড়ির ত্রিসীমানায় আসতে না দেওয়া। অনেকের লেখা পড়ে মনে হয়েছে প্রিয়া সাহা কি বলল সেটা বড় কথা নয় কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসার মত সে কীভাবে ট্রাম্পের সাথে দেখা করল এটাই তাদের বড় প্রশ্ন। এটা কতটুকু দেশপ্রেম আর টুকুটুকু ঈর্ষা থেকে সেটাও ভাবার বিষয়।
তবে যে যাই বলুক আমার মনে হয় এসব সমস্যার সমাধান ট্রাম্পের কাছে নেই, সেটা আমাদের কাছে। প্রিয়া সাহা বলেছে দেশে হিন্দুর সংখ্যা ১৮ মিলিয়ন মানে ১ কোটি ৮০ লক্ষ। তবে এটা জোর দিয়েই বলা যায় সংখ্যাটা ১ কোটির বেশি। আর পৃথিবীর প্রায় দু শ’ দেশের অর্ধেকের বেশির জনসংখ্যা এক কোটির কম। তার মানে ৭%, ৮% বা ১০% - যাই হোকনা কেন সংখ্যাটা ফেলনা নয়। এর চেয়ে কত ছোট ছোট জন সমষ্টির সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে কথা বার্তা হয়, তাহলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের কথা উঠলে দোষের কি আছে? আসল কথা – সমস্যার সমাধান, তাই নয় কি? তবে আবার বলছি, যে কোন সমস্যার সমাধান করতে হলে আগে তার উপস্থিতি স্বীকার করতে হবে। আমরা যদি নিজেরা সেটা স্বীকার করি, প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে এককাট্টা না হয়ে নিজেরাই এই সমস্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, তাহলে খুব অল্প সময়েই সেটা সমাধান করা সম্ভব। ডেঙ্গুর হাত থেকে রক্ষা পেতে আমাদের যেমন বাড়ির পাশের ডোবাটা পরিষ্কার রাখা দরকার, ঠিক একই ভাবে পাশের বাড়ির ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন মতের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, তার নাগরিক অধিকার রক্ষা করার লড়াইয়ে নিজেকে সম্পৃক্ত করে আমরা আমাদের সমাজটাকে সুস্থ করতে পারি। মনে রাখবেন শরীরের যে কোন অঙ্গের সামান্য ব্যাথাও যেমন অসুস্থতার লক্ষণ, ঠিক তেমনি সমাজের যেকোনো অংশের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে সেটা সমাজের, জাতির অসুস্থতার কথাই বলে দেয়। সচেতনতা – এটা নিজের পাশাপাশি অন্যের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া, অন্যের প্রতি নিজের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
বিভিন্ন লোকের বক্তব্য শুনে আমার এরকমও মনে হয়েছে যে যদি ট্রাম্পের কাছে না বলে প্রিয়া সাহা ওবামার কাছে কথাগুলো বলত তাহলে অন্যায়টা একটু কম হত। কিন্তু অন্যদের কাছে নালিশ করা তো আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি। কাগজেই তো কতবার পড়েছি আমাদের দেশের নেতারা সুযোগ পেলেই ইউরোপ, অ্যামেরিকা বা ইন্ডিয়ার নেতাদের কাছে গিয়ে প্রতিপক্ষের নামে তাদের কান ভারী করে। শুধু কি তারাই?
১৯৯৬ সাল। আমি দুবনা থেকে আইসিটিপিতে গেছি দু’ মাসের জন্য। কয়েক জন বাংলাদেশী ছেলে তখন সেখানে ডিপ্লোমা কোর্স করছিল। একদিন লাঞ্চের পরে অফিসে ফিরে দেখি চিরকুট, “ডঃ সাহা সী মী প্লিজ”। ওটা রেখেছিলেন হাই এনার্জি সেকশনের সেক্রেটারি। দেখা করতেই বললেন বাংলাদেশের এক ছেলে পুলিশের হাতে ধরা পরে হাসপাতালে আছে। হিউম্যান রাইটস গ্রুপ ওকে সাহায্য করতে চায়। ও যেহেতু বাংলা ছাড়া আর কোন ভাষা জানে না, আমি ওর সাথে কথা বলে সমস্যা জানতে পারি কি না? গিয়ে দেখি ১৫ – ১৬ বছরের এক ছেলে শুয়ে আছে। ইটালিতে ঢুকেই পাসপোর্ট ফেলে দিয়েছে। ফ্রান্সে ঢোকার সময় ধরা পড়েছে। তারপর শুরু হোল তার গল্প। দেশে তখন বিএনপি সরকার। তার উপরে নাকি পুলিশি অত্যাচার হয়েছে সে আওয়ামী লীগ করে বলে। তাই সে দেশ থেকে পালিয়ে এসেছে এ দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার আশায়। যেহেতু তাকে দেখে মনে হচ্ছিল স্কুলের ছাত্র তাই এটা বিশ্বাস করতে চাইছিলাম না। শেষ পর্যন্ত বললাম, ঠিক আছে তুমি যেটা বলছ তাই লিখে দেব। আমি সেটাই ইংরেজিতে লিখে অফিসে জমা দিই, পরের দিন শুনি সে হাসপাতাল থেকে পালিয়েছে। আমি এমনও শুনেছি দেশে অনেকে পুলিশকে টাকা দিত তাদের মারার জন্য। পরে ওই ছবি দেখিয়ে তারা বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইত। তাই বিদেশে দেশের বিশেষ করে সরকারের নামে নালিশ করা আমাদের জন্য বলতে গেলে ডাল ভাত। শুধু নালিশ কেন, অনেক মিটিং মিছিল হয়। এমন কী বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি অবমাননার ঘটনার কথা শুনেছি। সে খবর দেশি বিদেশি বিভিন্ন মিডিয়ায় আসে। এ নিয়ে কী এত হৈচৈ হয়? নাকি মামলা মকাদ্দমা হয়? নাকি মন্ত্রীরা কথা বলেন। সবচেয়ে বড় কথা প্রিয়া সাহা যে কথাগুলো বলেছে সেটা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এসব ঘটে, ঘটছে। বিচারের আশায় বসে থেকে থেকে মানুষ হতাশ হয়ে বাইরে গিয়ে বিচার চায়। মন্ত্রীদের কাছে জানতে ইচ্ছে করে, আচ্ছা এই যে অ্যামেরিকা সরকার আমাদের দেশের লোকজন ডেকে দেশের অবস্থা জানতে চাইল আর এতে করে পরোক্ষ ভাবে দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করল তার কি কোন প্রতিবাদ তারা করেছেন? বিদেশে কর্মরত যে শ্রমিকদের টাকায় আজ দেশে উন্নয়নের বান বইছে সেখানে যখন এই শ্রমিকরাই অত্যাচারিত বা ধর্ষিত হয় আমাদের মন্ত্রীরা কি তার প্রতিবাদ করেন? কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করেন? অনেকে প্রশ্ন করেছেন বর্তমান সরকার তো হিন্দু বান্ধব। এদের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ?
ভারতে বিভিন্ন সময়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। এখন হয়। পাকিস্তান বা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন বিধায় সাম্প্রদায়িক মারামারি হয় না, হয় মার। ভারতে বড় বড় সব দাঙ্গা হয়েছে কংগ্রেস বা অন্য জামানায়। কিন্তু তখন কিন্তু ভারতীয় মুসলিম এতটা অসহায় অনুভব করেনি যতটা সে এখন করে। কারণ সে জানতো রাষ্ট্র তাদের পাশে দাঁড়াবে, বিচার হবে। এখন যেহেতু ভক্ষক এসেছে রক্ষকের ভূমিকায় মানুষ তাই বিশ্বাস হারাচ্ছে, নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। আমাদের দেশে সে অবস্থা সব সময়ই কমবেশি বিদ্যমান। তাই নিরাপত্তাহীনতা এদেশের সংখ্যালঘুর নিত্যদিনের সঙ্গী। অনেকেই বলবেন অন্য আমলে তো অবস্থা আরও খারাপ ছিল। সেটা ঠিক। তবে আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে থাকে, সে তখন এসব সমস্যা নিয়ে সোচ্চার হয়। বামপন্থী অনেক দল এ নিয়ে কথা বললেও সেটা ততটা ভারী নয়, যেটা আওয়ামী লীগের বলায় হয়। যার ফলে মানুষ তখন ভয় পেলেও নিজেদের একাকী মনে করে না। তারা আওয়ামী লীগকে পাশে পায়। আশায় থাকে যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এর অবসান ঘটবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন কিছু ঘটলে সে পাশে আর কাউকে পায় না। বরং যখন দেখে আওয়ামী লীগেরই অনেক স্থানীয় নেতা এসবে সাথে জড়িত সে তার শেষ বিশ্বাসের, শেষ আস্থার জায়গাটুকু হারায়। ফলে বর্তমান সরকারের সময় অনেক ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ সুবিধা পেলেও নিরাপত্তার অভাব তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তাই মন্ত্রী মহোদয়গণ যদি প্রিয়া সাহাকে না ধমকিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন সেটা কী দেশ কী জাতি সবার জন্য ভাল হত না? আপনারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন না আর সেটা বললে লোকজন দেশদ্রোহী হবে সেটা তো হয় না।
প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে এত লেখালেখি দেখে আমার কেন যেন মনে হয়েছে এটা যেন রাজপথে নারী নির্যাতন বিরোধী সভায় জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে ঘরে ফিরে বউ পেটানো। আমি ৯৯.৯৯% গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আমাদের দেশের যে সব রাজনৈতিক দল ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারায় অ্যামেরিকা, চীন, ভারত এসব দেশকে এক বিশাল ফ্যাক্টর বলে মনে করে তাদের যে কেউ বিরোধী দলে থাকাকালীন ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পেলে সরকার যে কতটা স্বৈরাচারী, কতটা অগণতান্ত্রিক - এসব কথা বলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করত না। সমস্যা হল সরকারি দল তাদের সব কাজকেই গণতান্ত্রিক মনে করে, বিরোধী দল সেটা স্বৈরাচার বলে আখ্যায়িত করে। আজ আমাদের দেশে মূল রাজনৈতিক দলগুলোর গণতন্ত্রের সংজ্ঞা বদলায় ক্ষমতার সাথে তাদের সম্পর্কের উপর। ক্ষমতা সবারই আজন্ম প্রেমিকা, তবে যখন যে দল তাকে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ করতে পারে সে দলের অন্যতম কাজই হয় অন্যান্য প্রেমিকদের বাড়ির ত্রিসীমানায় আসতে না দেওয়া। অনেকের লেখা পড়ে মনে হয়েছে প্রিয়া সাহা কি বলল সেটা বড় কথা নয় কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসার মত সে কীভাবে ট্রাম্পের সাথে দেখা করল এটাই তাদের বড় প্রশ্ন। এটা কতটুকু দেশপ্রেম আর টুকুটুকু ঈর্ষা থেকে সেটাও ভাবার বিষয়।
তবে যে যাই বলুক আমার মনে হয় এসব সমস্যার সমাধান ট্রাম্পের কাছে নেই, সেটা আমাদের কাছে। প্রিয়া সাহা বলেছে দেশে হিন্দুর সংখ্যা ১৮ মিলিয়ন মানে ১ কোটি ৮০ লক্ষ। তবে এটা জোর দিয়েই বলা যায় সংখ্যাটা ১ কোটির বেশি। আর পৃথিবীর প্রায় দু শ’ দেশের অর্ধেকের বেশির জনসংখ্যা এক কোটির কম। তার মানে ৭%, ৮% বা ১০% - যাই হোকনা কেন সংখ্যাটা ফেলনা নয়। এর চেয়ে কত ছোট ছোট জন সমষ্টির সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে কথা বার্তা হয়, তাহলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের কথা উঠলে দোষের কি আছে? আসল কথা – সমস্যার সমাধান, তাই নয় কি? তবে আবার বলছি, যে কোন সমস্যার সমাধান করতে হলে আগে তার উপস্থিতি স্বীকার করতে হবে। আমরা যদি নিজেরা সেটা স্বীকার করি, প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে এককাট্টা না হয়ে নিজেরাই এই সমস্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, তাহলে খুব অল্প সময়েই সেটা সমাধান করা সম্ভব। ডেঙ্গুর হাত থেকে রক্ষা পেতে আমাদের যেমন বাড়ির পাশের ডোবাটা পরিষ্কার রাখা দরকার, ঠিক একই ভাবে পাশের বাড়ির ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন মতের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, তার নাগরিক অধিকার রক্ষা করার লড়াইয়ে নিজেকে সম্পৃক্ত করে আমরা আমাদের সমাজটাকে সুস্থ করতে পারি। মনে রাখবেন শরীরের যে কোন অঙ্গের সামান্য ব্যাথাও যেমন অসুস্থতার লক্ষণ, ঠিক তেমনি সমাজের যেকোনো অংশের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে সেটা সমাজের, জাতির অসুস্থতার কথাই বলে দেয়। সচেতনতা – এটা নিজের পাশাপাশি অন্যের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া, অন্যের প্রতি নিজের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
দুবনা, ০৮ আগস্ট ২০১৯
Comments
Post a Comment