মানুষ হওয়া
কিচিরমিচির ব্যাপার, কা কা কাণ্ড।
গ্রামের সবচেয়ে বড় বটগাছের ডালে গোধুলি লগ্নে বসবে পাখিসভা। বক্তব্য রাখবেন বাবু
বাবুইলাল তালগাছওয়াল, জনাব দোয়েল মুন্সি, বাবু কাকেস্বর কালোনগরী, জনাব শালিক
মাহমুদ ও মিস কোকিলা গানেওয়ালা। গাছে গাছে এই পাখিসভার পোস্টার দেখে তো প্যাঁচার
চক্ষু চড়কগাছ। কী চাইছে পাখিরা? এখানেও কী বিপ্লবের কালো মেঘ?
সেদিন গোধুলি লগ্নে অনেকের মত প্যাঁচাও গেল পাখি সভায়, সবার চোখের আড়ালে ঘাপটি
মেরে বসে রইলো। শোনা যাক কী বলে নতুন প্রজন্ম। কী ওদের দাবি দাওয়া।
পাখিরা একের পর এক বক্তব্য রাখল।
শুনিয়ে গেল বিভিন্ন প্রাণীর অন্যায় অত্যাচারের কথা। কেউ কেউ আবার ঈগল শকুনের বিরুদ্ধে বলতেও ছাড়ল
না। অনেকের পরে মঞ্চে উঠল চড়াই।
বন্ধুরা, সময় এসেছে সময় বদলানোর, রুখে দাঁড়ানোর, আজীবন যারা আমাদের শোষণ করেছে,
আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায় করেছে – সময় এসেছে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার। আমি আজ
আমার মায়ের মুখে শোনা গল্প বলতে এসেছি। মা শুনেছে তার মায়ের মুখে। প্রজন্মের পর
প্রজন্ম ধরে চলে এসেছে এ গল্প আমাদের সংসারে। অনেক অনেক আগে এই যে বটগাছ দেখছেন
সেটার কোন অস্তিত্বই ছিল না। আমাদের এক পূর্বপুরুষ অনেক দূর থেকে একটা ফল নিয়ে আসে
সন্তানদের খাওয়াবে বলে। কিন্তু সেই ফল আমার পূর্বপুরুষকে ধোকা দিয়ে পালিয়ে যায়।
ফলে তার পাঁচ সন্তানের তিন জনই অনাহারে মৃত্যু বরণ করে। এখন সময় এসেছে জবাবদিহিতার,
সেই হত্যাকাণ্ডের জন্য আমি বটগাছের মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি।
“বটগাছের ফাঁসি চাই, অন্যায়ের বিচার
চাই।“ চারিদিক থেকে কলরব করে উঠলো পাখিরদল। কেউ ভাবল না এই বটগাছই এতকাল তাদের খাদ্য
আর আশ্রয় দিয়েছে। তাদের আজকের অনাবিল
জীবনের অনেকটাই গড়ে উঠেছে বটগাছকে কেন্দ্র করে। এমন কি এই যে সভা, সেটা করার জায়গা
কি তারা পেত বটগাছ না থাকলে? কিন্তু কে শোনে কার কথা। অতীত আর ভবিষ্যতের চাপে পড়ে
বর্তমান হারিয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে সুস্থ্য মস্তিষ্কে কোন কিছু ভাবার সংস্কৃতি।
পাখিকুলের তীব্র আবেগ আর উত্তেজনার শিকার হল বৃদ্ধ বট। পতন হল এক বিশাল
সাম্রাজ্যের। ভেঙ্গে পড়ল শত বছরের ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি। বটের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ
পাখিরা এবার ভাগবাটোয়ারার যুদ্ধে একে অপরকে ধ্বংস করতে নেমে পড়ল। অচিরেই সবাই হল
স্মৃতিহারা, গৃহহারা ছিন্নমূল পাখি। হঠাৎ এক বিপ্লবে সব পাখি মানুষ হয়ে গেল।
দুবনা, ০৮ জুলাই ২০২০
Comments
Post a Comment