শান্তির সন্ধানে
যমালয়। কঠিন যুদ্ধে মৃত্যুকে হারিয়ে জীবন সবে মাত্র এখানে ঢুকেছে। অপেক্ষা করছে যমের সাথে সাক্ষাতের। দারোয়ান বলল
এখন তো দেখা হবে না। আপনাকে ১৫ দিনের জন্য কারেন্টেইনে থাকতে হবে। এর মধ্যে কোন উপসর্গ না পেলে তবে দেখা করতে পারবেন। সুতরাং বিশ্রাম নিন।
আবার কারেন্টেইন। আসার আগেই তো তিন মাস কারেন্টেইনে ছিলাম।
কী আর করা। এটাই নিয়ম। আর এই নিন মোবাইল ফোন। শুধু ইন কামিং মেসেজ এভেইলেবল।
শুধু ইন কামিং বলছেন। এ যে ব্ল্যাক হোলের চেয়েও কঠিন। হকিং রেডিয়েশনও নেই?
সেটাও আপনি এখন ইভেন্ট হরাইজনে আছেন বলে। এটা বলতে পারেন ট্র্যাঞ্জিশন পেরিওড। আগে ৪০ দিন ছিল। ডিজিটাল যুগে কমিয়ে ১৫ করা হয়েছে। এখানে আসার পরপর সবাই কমবেশি নস্টালজিয়ায় ভোগে কিনা, তাই একটু সময় দেওয়া হয় নতুন জীবনে আডাপ্টেশনের জন্য।
বলেন কী? এত ঝামেলা! তাহলে নেমন্তন্ন করে আনা কেন?
আমরা আর কী করব বলুন। জন্মের আগেই তো আপনাদের মৃত্যুর পরোয়ানা জারি হয়ে যায়। জন্মের আগেই আমাদের হোটেলে আপনাদের সীট বুক করে রাখেন যমরাজ। আমরা হুকুমের গোলাম। দায়িত্ব পালন করি।
এত ইন্টারেস্টিং সব ব্যাপার স্যাপার এখানে? ইস, যদি বন্ধুদের একটু জানাতে পারতাম, অন্তত ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিতে পারতাম?
সেটি আর হচ্ছে না। এখান থেকে কোন স্ট্যাটাস আর ওখানে পৌঁছুবে না। বললাম না, এখানে শুধু ওয়ান ওয়ে জার্নি, এমন কি ইনফরমেশনেরও। যাকগে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন। নিন শুয়ে পড়ুন। একটু বিশ্রাম নিন।
দারোয়ান চলে গেল। কী আর করা। জীবন সবে মাত্র লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়েছে
RIP
দু মিনিট যেতে না যেতেই আবার RIP। তারপর আবার। আবার। আবার। এ যেন সারা দিনমান মেসেঞ্জারে শুভ সকাল, শুভ সন্ধ্যা আর শুভ রাত্রির বাণী আসার মত। তখন অনেক সময় বিরক্ত হয়ে ও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিত। এখন তো আর সেটা পারবে না, তাই মনে মনে ভাবল
সামাজিক মাধ্যমের যুগে মৃত্যুও প্রাইভেসি হারাচ্ছে। লোকজন মরেও শান্তি পাচ্ছে না। শান্তিতে ঘুমানোর কামনা মৃত্যুর পরেও কাউকেই শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না।
সমস্যা হল ঐ মোবাইলটা অফ করার কোন উপায় নেই। চাই না চাই জীবনকে ওটা শুনতেই হবে। যমরাজ সত্যিই বুদ্ধিমান। এই ১৫ দিনের রিপের ধাক্কায় বিরক্ত জীবনের পৃথিবীর প্রতি সব নস্টালজিয়া কর্পূরের মত উবে যায়। ও অপেক্ষায় বসে থাকে কবে এই কারেন্টাইন শেষ হবে। কবে ও সত্যি সত্যিই মরণ লোকে প্রবেশ করবে।
Comments
Post a Comment