প্যাঁচানো প্যাঁচাল

অফিসে এসে মেইল পেলাম। গত দু মাসে এর অস্তিত্ব প্রায় ভুলতে শুরু করেছিলাম। আবার শুরু হল। অফিসে না আসার রিকমেন্ডেশন। আগামীকাল থেকে। অথচ অনেক কাজ বাকী। সাধারণত এ রকম অবস্থায় একটা লিস্ট করে কিছু কিছু লোককে আসার সুযোগ দেয়। এবার লিস্ট চায়নি। কেউ জানে না কারা আসতে পারবে, কারা পারবে না। আগামীকাল ইনস্টিটিউটে ঢুকতে দেবে কিনা সেটাও কেউ জানে না। করোনা যে রকম মানসিক চাপে রাখছে তাতে জীবনের জান বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। না, বাসা থেকে কাজ করতে খুব যে অসুবিধা হয় তা নয়। তবে সমস্যা সব জার্নাল ওখানে ফ্রি পাওয়া যায় না। আর ক্লাস নিতে সমস্যা। মানে কুকুরগুলো এখনও ছোট। পড়াশুনার মর্যাদা বোঝে না। তাই লেকচারের মধ্যে হৈচৈ শুরু করে। ছাত্ররা অভিযোগ করে না, তবে যেহেতু এসব রেকর্ড করে রাখে তাই ব্যাপারটা একটু লজ্জাকর। আপাতত দু মাসের জন্য পাঠাচ্ছে, ১ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। এর পর কী হবে কে জানে। তবে রুশদের যতদূর জানি নববর্ষের আগে আবার একটা জানালা খুলতেই হবে যদি না বিপ্লব চায়। অবশ্য চারিদিকে যে অবস্থা তাতে করোনাকে কেউ খুব একটা কেয়ার করে বলে মনে হয় না। শান্তির মনেও শান্তি নেই। ঘরে বসে থাকতে থাকতে সেও হাঁপিয়ে উঠেছে। তাই কারাবাখে অশান্তির আয়োজন। যুদ্ধে নেমেছে আর্মেনিয়া আর আজারবাইজান। লোকজন লাইন দিয়ে নাম লেখাচ্ছে যুদ্ধ করতে। জীবনকে ভালবেসে মানুষ মৃত্যুকে বরণ করতে পথে নামছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর এরকম কত কনফ্লিক্ট যে তুষের আগুনের মত জ্বলছে দেশে দেশে। আর সুবিধাবাদীরা তাতে হাওয়া দিয়ে বেড়াচ্ছে। যুদ্ধের একটা সাংঘাতিক গুন হল তার ঘাড়ে সমস্ত ব্যর্থতা চাপিয়ে দেওয়া যায়। আর মানুষ সেটা খুব খায়। এ সময় জনগণের শীল নোড়া দিয়ে জনগণের দাঁতের গোঁড়া ভাঙ্গা যায়। আমি কখনই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যান্ডিডেটদের ডিবেটের ফ্যান নই। পরে হয় এ নিয়ে পড়ি  বা কিছু কিছু অংশ দেখি। নারীদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি এক সময় গ্রাম এলাকায় মহিলাদের মধ্যে এরকম ঝগড়া হত। যুগের পর যুগ ধরে আমেরিকায় যেসব সামাজিক সমস্যার পাহাড় গড়ে উঠেছে সেগুলোর দোষ কারও না কারও ঘাড়ে চাপানোর দরকার ছিল। তাই ট্রাম্প না চাইলেও একজন ট্রাম্পের দরকার ছিল। ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া - এসব ব্যর্থতার দায় কাউকে তো নিতে হবে! বেলারুশের অবস্থা ঝড়ের আগের শান্ত পরিবেশ বলেই মনে হচ্ছে। নাভালনির নাটক এতই জমেছে যে সেভা পর্যন্ত বিরক্ত। গত শুক্রবার মস্কো গেলাম। ও পাশে বসে জিজ্ঞেস করল নাভালনি সম্পর্কে আর নিজে থেকেই বলল এসব বানানো। নাভালনির একটা বেজ ছিল টিন এজারদের মধ্যে। এই কেসে অনেকেই বুঝে গেছে যে নাভালনি অন্যের হাতের পুতুল। ও হ্যাঁ, সেভা কথা বলতে বলতে পিঠটা ম্যাসেজ করে দিয়েছে আর বলেছে নিজের ভবিষ্যতের জন্য সব চেয়ে বড় বাজিটা ও আমার উপরের ধরেছে। নিজেকে রেসের ঘোড়া মনে হল ওর কথা শুনে। ছেলেমেয়ে থাকার এই একটা সুবিধা। ওদের নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসা যায় আর মাঝে মধ্যে ওদের ভালবাসা আর বিশ্বাস পাওয়া যায়।

দুবনা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
 

 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি