জন্মমৃত্যু
আবার ১৫ সেপ্টেম্বর। এর আগে এ দিনটির গুরুত্ব ছিল শুধু ভাইয়ের জন্মদিন হিসেবে। বাড়িতে আমাদের সব ভাইবোনের জন্মদিন পালন করা হত এমন কি যদি তারা নাও থাকত। যে ভাইয়েরা অনেক অগেই বাইরে চলে গিয়েছিল তাদের জন্মদিনেও বাড়িতে অন্যেরা আনন্দ করত। বিগত কয়েক বছর হল ১৫ সেপ্টেম্বর আমার কাছে কাকুর মৃত্যু দিবস হিসেবেও আসছে। সত্যি বলতে কী এই দিন ফেসবুকে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দেখে আমার মনে পড়ে যে কাকু নেই। যদিও মস্কোয় এসেই কাকুর সাথে দেখা আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, ঘনিষ্ঠতা হয় অনেক পরে ১৯৯১ সালে। এরপর একসাথে দূতাবাস স্কুলে কাজ করেছি, মস্কোর বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর ঘুরেছি আর তাঁর বাসায় প্রচুর আড্ডা দিয়েছি। লেখালেখির টুকিটাকি অভ্যেস স্কুল থেকেই, মস্কোয় সেটা সীমাবদ্ধ ছিল আমাদের দেয়াল পত্রিকা আর মাঝে মধ্যে একতায় লেখার মাধ্যমে। এর বাইরে যেসব লেখা ছিল সেগুলো একান্তই ব্যক্তিগত। তবে কাকু সেগুলো পড়তেন, উৎসাহ দিতেন। এখন তুলনামুলক ভাবে অনেক বেশি লেখা হয়। কোন লেখা নিজের ভালো লাগলে কাকুর কথা মনে হয়, কথা হয় আগের মতই। আগে মাঝে মধ্যে তাঁকে ফোন করতাম, কাকু ফেসবুকে আমার লেখা সম্পর্কে অনেক সময় সাবধান করতেন। আমি শুনতাম না, তবে ভালো লাগত জেনে যে তিনি কিছু কিছু হলেও আমার লেখা পড়েন। ২০১৬ সালে শেষ যখন দেশে যাই, কাকুর সাথে দেখা করি। একাত্তরের উপর লেখার অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি দিই দেখার জন্য। খুব পছন্দ হয়েছিল কাকুর। বইয়ের কথা ভাবতে বলেছিলেন। যেকোনো ব্যাপারেই সাফল্যের জন্য অনুপ্রেরণাদানকারী মানুষের দরকার। কাকু ছিলেন সে রকম। শুধু আমার নয়, যারাই তাঁর সান্নিধ্যে এসেছে সবার জন্য। আজ ফেসবুকে রবীনের স্ট্যাটাস দেখে ২০১২ সালে কাকুর মস্কো আসার কথা মনে পড়ল। আমরা একটা সম্বর্ধনার ব্যবস্থা করেছিলাম বাংলাদেশ প্রবাসী পরিষদ রাশিয়ার পক্ষ থেকে। আমি দুবনা থেকে গেছিলাম দেখা করতে। আজ মনে পড়ল কাকু একটু অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন আমার উপর। মুখ খুলে না বললেও বুঝেছিলাম। এখন বুঝলাম তাঁর অসন্তোষের কারণ। তিনি আশা করেছিলেন আমি দেখা করব, অনেক সময় দেব। আমি নিজেও প্রস্তুত ছিলাম। তবে সময় মত খবর না পাওয়ায় যাইনি। কাকুর সাথে আমার প্রচুর অমিল, তার একটা আমি আমার বন্ধুরা, আমার প্রিয়জনেরা এলো কি না এলো, ফোন করল কি না করল এ নিয়ে মাথা ঘামাই না, এ সব তাদের স্বাধীনতার উপর ছেঁড়ে দিই, কাকু চাইতেন ভালবাসা, বন্ধুত্ব যেন একতরফা না হয়। মানুষ ততদিনই বাঁচে যতদিন সে অন্যদের স্মৃতিতে শুধু জাগ্রতই থাকে না, তাদের অনুপ্রাণিত করে।
Comments
Post a Comment