দেবতার ঘর

 


বিগত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ভারতে কোভিড-১৯ একের পর এক রেকর্ড ভঙ্গ করে চলছে। প্রতিদিন তিন লাখের বেশি করে নতুন আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। একই সাথে গত দু তিন দিন আরোগ্য লাভের সংখ্যাও আড়াই লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

রাশিয়ায় যখন গত বছর কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ঘটে ভবিষ্যতের কথা ভেবে অনেক নতুন হাসপাতাল গড়া হয়। এ ছাড়াও মস্কো সহ বিভিন্ন শহরে অনেক স্পোর্টস কমপ্লেক্স ও ব্যবসা কেন্দ্র সাময়িক ভাবে কোভিড-১৯ চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। যাতে ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া যায় সেজন্য প্রয়োজনের চেয়েও অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন প্রোফাইলের ডাক্তারদের দ্রুত ট্রেনিং দিয়ে এসব জায়গায় নিয়োগ করা হয়। এমনকি মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটগুলোর শেষ বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের ভলেন্টিয়ার হিসাবে সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়। যদিও অনেকদিন ধরেই এখানে প্রতিদিন ৮-৯ হাজার করে নতুন করোনা পজিটিভ ধরা পড়ছে আর প্রায় সমান সংখ্যক লোক সুস্থ্য হচ্ছে তারপরেও বিভিন্ন দেশের অতিমারীর অবস্থা মাথায় রেখে ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া সাময়িক চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো জরুরি ভিত্তিতে আবার নতুন করে প্রস্তুত করা হচ্ছে পরিস্থিতি মোকাবিলায়।

ভারতে বর্তমানে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। খবরে দেখা যাচ্ছে হাসপাতালে জায়গা নেই। অনেক লোক চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে। এটা অনেকটা জলোচ্ছ্বাসের মত, যত প্রস্তুতিই থাকনা কেন, যখন আসে, সব ভেঙ্গেচুরে সামনে এগিয়ে যায়। একই ভাবে যখন রুগীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায় সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হয় অসম্ভব। ১৯৯৭ এর পরে ২০১৪ সালে যখন ইন্ডিয়া যাই, তখন রাস্তার মোড়ে মোড়ে মন্দির দেখে অবাক হই। এখনও সেখানে বিশাল সংখ্যক মানুষ ঈশ্বরের কাছ থেকে সাহায্যের বসে আছে। এমতাবস্থায় মন্দিরসহ বিভিন্ন উপাসনালয়গুলোকে যদি সাময়িকভাবে কোভিড-১৯ চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিণত করা হয় তাহলে অনেকেই বেঁচে থাকার সুযোগ পেলে পেতেও পারে আর যদি নাই বাঁচে অন্তত তাদের উপাস্য দেবতার পায়ের কাছে শুয়ে মরে একটু শান্তি পেতে পারে। দেবতারা তো আজীবন মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেল, অন্তত এখন জাতির এই দুঃসময়ে তারা যদি নিজেদের ঘরে ভক্তদের আশ্রয় দেয় তবেই তাদের দেবতা নাম সফল হতে পারে।

দুবনা, ২৮ এপ্রিল ২০২১ 
 
 

 


Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি