"বাবা দিবসের" খিচুড়ি

বাবা দিবস (не бойся, это не по-русский) ভালোই কাটলো। অনেক দিন পরে কি একটা স্বপ্ন দেখছিলাম, তখন মনিকার ডাকে ঘুম ভাঙলো।
"পাপা, একটু চা দেবে?"
"নিজেই একটু ঢেলে নে।"
"ঠিক আছে।"
বুঝলাম, ও আর চা টা  ঢালবে না। তাই বললাম কেটলিটা অন  করতে। চা ঢেলে জিজ্ঞেস করলাম "কয়টা বাজে?"
"ছয়টা।"
"এতো সকালে? কোথায় যাবি ?"
"মস্কো, কাজ আছে।"
তারপর ওকে ট্যাক্সি ডেকে দিলাম। ও চলে গেলে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। যখন ঘুম ভাঙলো, দেখি প্রায় এগারোটা বাজে। অন্য ঘরে দেখি সেভা কম্পিউটার গেইমে  ব্যস্ত।
"আবার খেলা "
"আমি এই মাত্র উঠলাম।"
"খাবি?"
"হ্যা।"
পনির দিয়ে রুটি সেকে দিলাম, সাথে চা। আমিও খেলাম। করেক দিন পা ব্যাথা, তাই ঘরে বসে ছবি তোলা, বই পড়া, সেই সাথে দেখলাম "আমার রবীন্দ্রনাথ"। কিছু ছবিও এডিট করলাম, গতকালের তোলা, স্টিল লাইফ।
পরে ভাবলাম, রান্না করা দরকার। 
"কিরে, কি খাবি? খিচুড়ি?"
"কর।"
তারপর পেঁয়াজ, গাজর, আলু, টার্কি, চাল - সব এক সাথে সেদ্ধ করে হয়ে গেলো "বাবা দিবসের" খিচুড়ি।
এ দেশে বাবা দিবস পালন করে না। তাই ওদের জানার কথা না। আমিও বলিনি। দস্তয়েভ্স্কি  বলেছেন "সুখ, এটা যখন তুমি ভালোবাসতে জানো।"
বাবা দিবস আমার জন্যে  যখন ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি দেখি।

আমাদের ছোট বেলায় এসব ছিল না। সব দিনগুলো ছিল  বাবা মায়ের ভালোবাসায় ঘেরা। বাবা ব্যস্ত থাকতেন। ছোট বেলায় আমাদের দেখাশুনা করতো কাজের লোকেরা। অপেক্ষা করতাম বিকেল বেলার জন্য - যখন বাবার কোলে উঠে তার কাঁধে মাথা রাখতাম আর বাবা হাটতে হাটতে যেত রং খোলা - এটা আমাদের পুরানো বাড়ি - যেখানে তখন ছিল আমাদের রঙের কারখানা। ৫০ মিটার রাস্তার দু ধারে কদম, জাম্বুরা, গাব, তেঁতুল গাছ  আর বাঁশ ঝাড়। এর ভিতর দিয়ে যেতে যেতে কত স্বপ্নই না দেখতাম। এখন বাবা মা নেই, তবে তাদের ভালোবাসা এখনো আমাদের সাথেই রয়ে গেছে - বিপদে আপদে এখনও বাবা-মাকেই মনে করি - সব দিন, সারা বছর, শুধু বাবা দিবসেই নয়। 

দুবনা, ১৯ জুন, ২০১৬


Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি