বিশ্বায়ন



শুক্রবার একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠে দেখি সেভা তখনও ঘুমুচ্ছে এর মধ্যে রান্নাবান্না শেষ করে ভোল্গায় সাঁতার কেটে এলাম,  ও তখনও ঘুমিয়ে কি মনে করে ওর খাবারটা আর বাড়া হোল না এর পরে গেলাম ব্যাঙ্কে একটা কাজে ওখান থেকে বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যখন অফিস যাচ্ছি, ভাবলাম বাসা থেকে ঘুরে যাই এসে দেখি ও তখনও ঘুমে একটু দাঁড়িয়ে অফিস চলে গেলাম অফিসে বসে একটু অস্বস্তি লাগছিল
-    ফোন করবো একটা?
-    না, দরকার নেই উঠলেই তো বসবে কম্পিউটার নিয়ে তার চেয়ে বরং একটু ঘুমাক
অফিস শেষে বাসায় ফিরেই কিচেনে গেলাম দেখতে খেয়েছে কিনা খেয়েছে তারপরেও জিজ্ঞেস করলাম
-    খেয়েছিস?
-    হ্যাঁ
-    কি খেলি?
-    কেন ভাত আর মাংস, যা রান্না করেছিলে
টুকটাক কাজ করে সময় কাটল রাত একটু বাড়লে বললাম
-    যা, আইকাকে নিয়ে ঘুরে আয় তারপর খাবি
-    আরেকটু অন্ধকার হোক লোকজন একটু কমুক
শনিবার সকালে যখন উঠলাম, সেভা গেম খেলছিল
-    রাতে ঘুমুসনি?
-    ঘুমিয়েছি
-    যা, তৈরি হয়ে নে বাজারে যাব বেরি কিনতে
-    ঠিক আছে
এর মধ্যে আমি চা খেয়ে নিলাম নেট করলাম আর অপেক্ষা ও কখন রেডি হবে ঘণ্টা খানেক পরে সেভা এসে বলল
-    চল আমি প্রস্তুত
-    চল যাই
এ ক’দিন আর ইংরেজি বা আমেরিকা নিয়ে কথা হয়নি নিজেই বলিনি        
-    পাপ, তুমি বললে না কি করতে হবে আমেরিকা যেতে হলে?
-    ভালো পড়াশুনা ফিজিক্স, মাথেমাটিক্স আর কম্পিউটার সায়েন্সে ভালো করতে পারলে ওরাই ডেকে নেবে এখনও সময় আছে, যদি ফিজটেখ শেষ করতে পারিস, লেখাপড়া শেষ করার আগেই ওরা তোকে ডেকে নেবে   
-    আমি চেষ্টা করবো কিন্তু জানই তো এগুলো আমার খুব একটা আসে না
-    চেষ্টা করলে সব হয় ভালো করে চেষ্টা কর কিন্তু তার আগে ভালো ভাবে স্কুল শেষ করতে হবে
-    কিন্তু স্কুলে তো আমার অনেক বিষয় ভালো লাগে না
-    এটা সবারই হয় কিন্তু দেখ, তুই যদি প্রায় সব সাবজেক্টে ৫ পাস আর একটায় ২, তাহলেও কিন্তু তুই ফেলই করবি, ঐ পাঁচের কোন দাম থাকবে না হাজার রকম ভালো খাবার খেলেও তাতে যদি একটুও খারাপ কিছু থাকে, পেটে সমস্যা হবে সাফল্য খুব কষ্টে আসে, ব্যর্থতা দু’ হাত বাড়িয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের উপর সফল হবার সোজা কোন পথ নেই সাফল্য আসে কাজের মধ্য দিয়ে, পড়াশুনার মধ্য দিয়ে ভালোভাবে লেখাপড়া কর, দেখবি ঠিক একদিন আমেরিকায় চলে যাবি
-    তুমি গেছো কোনদিন আমেরিকায়?
-    না যাই নি
-    ইচ্ছে করে না যেতে?
-    এক সময় ইচ্ছা করতো সুযোগও হয়েছিলো যাইনি
-    কেন?
-    প্রথমবার বাবা বলেছিলেন ওখানে যেতে আমি কলেজ শেষ করে বসে আছি ক্লাস তখনও শুরু হয়নি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছি বাবা বললেন
“রাজনীতি বাদ দিতে হবে যদি চাও ইন্ডিয়া গিয়ে পড়তে পারো ওখানে মামারা আছেন অথবা আমেরিকায় যেতে পারো আমি খরচ দেবো অথবা তোমাদের সমাজতন্ত্রের দেশে কিন্তু দেশে থাকা চলবে না তাহলে তোমার পড়াশুনা আর হবে না
আমি বেঁছে নিলাম সোভিয়েত ইউনিয়ন
-    কেন?
-    ছোটবেলায় বাবা একটা গ্লোব কিনে দেন ওটাতে সবুজ রঙের সোভিয়েত ইউনিয়নকে দেখেই ভালবেসে ফেলেছিলাম এরপর আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন পাশে দাঁড়ায়, বিপক্ষে আমেরিকা আর চীন তখন থেকেই ওদের আমি পছন্দ করি না তাছাড়া স্কুলে রুশ সাহিত্য পড়ে আমি এ দেশকে আরও বেশি করে ভালবাসি তাই যখন সুযোগ এলো চলে আসি এই দেশে এখনও মনে পড়ে লেনিনগ্রাদে গিয়ে দস্তয়েভস্কীর নায়ক নায়িকাদের খোঁজার কথা।  
-    তারপর আর সুযোগ আসেনি আমেরিকায় যাওয়ার?
-    ১৯৯৩ সালে আমার পিএইচডি ডিফেণ্ডের আগে বিভিন্ন জায়গায় লিখি পোস্টডকের জন্য সান্তা বারবারা থেকে পিএইচডি করার ডাক পেয়েছিলাম যাইনি       
-    কেন?
-    এতদিন কাজ করে ঠিক ডিফেণ্ডের আগ মুহূর্তে সব ছেঁড়ে যেতে চাইনি তাছাড়া তখন চলে গেলে তো তোর সাথে, তোদের সাথে দেখা হতো না
-    কিন্তু আমার তো মনে হয় আমরা তোমাকে শুধু ডিস্টার্ব করি কাজে
-    কে বলল তোকে? আমাকে কেউ ডিস্টার্ব করে না বরং তোরা আছিস বলে আমি অনেক কাজ করতে পারি তোরা যখন ছোট ছিলি, যখন এক এক করে তোকে, ক্রিস্টিনাকে  আর মনিকাকে স্কুলে দিয়ে আসতাম, আমার কাজ দেখে কলিগরা বলতো,”তুমি এত কিছু কখন কর“ আমি ওদের জনক রাজার গল্প বলতাম
-    সেটা আবার কি?
-    জনক ছিলেন মিথিলার রাজা একদিন শুকদেব এসেছেন তার কাছে বললেন, “মাহারাজ, আপনি কিভাবে রাজ্য চালান যে প্রজারা সবাই সুখী“ রাজা তার হাতে কানায় কানায় ভর্তি এক বাটি তেল দিয়ে বললেন, “মুনিবর, এই নিন তেলের বাটি এটা নিয়ে সন্ধ্যার আগেই রাজধানী প্রদক্ষিন করে আমার কাছে আসবেন এসে আমাকে রাজধানীর খুঁটিনাটি খবর দেবেন আর দেখবেন,  যদি এক ফোঁটা তেল পড়ে, আপনি আপনাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করবো“ কী আর করা শুকদেব কোন মতে কানায় কানায় ভর্তি তেলের বাটি নিয়ে সন্ধ্যায় হাজির হলেন রাজার সামনে “কেমন দেখলেন রাজধানী“ রাজধানীর অপূর্ব বর্ণনা দিয়ে শুকদেব বললেন, “রাজধানী দেখেছি, তবে মন ছিল তেলের বাটিতে দেখায় যত না আনন্দ ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল ঠিক ভাবে কাজ করার তাগিদ“ “আমাকেও সেভাবেই অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হয় ছোট বড় সব কাজই করতে হয় সমান গুরুত্বের সাথে, কেন না অসমাপ্ত ছোট কাজ অনেক বড় কাজকেও আটকে দিতে পারে“ আমারও তাই যেহেতু তোরা কয়েকজন, আমার কাজের বাইরেও বিভিন্ন হবি, তাই সবসময় নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হয়, সব কাজই গুরুত্ব দিয়ে করতে হয় আমি সব করে উঠতে পারি তোরা আমাকে ডিস্টার্ব করিস না     
হাঁটছি দু’জন। চুপচাপ।  আবার সেভা বলে উঠলো         
-    কিন্তু স্কুলে তো অনেক সাবজেক্ট আছে যেটা আমার কাজে লাগবে না
-    আচ্ছা, এই ধর ফুটবল গোল কীপার বাদে সবাই কিন্তু বল ধরতে শেখে, পাস দিতে শেখে, গোলে বল মারতে শেখে তারপর কেউ ডিফেন্সে খেলে, কেউ বা অ্যাটাকে সব কাজের কিছু বেসিক জিনিষ আছে যেটা সবাইকে শিখতে হয় স্কুল শেষ করে তুই বিশেষজ্ঞ হবি না, তবে কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে হলে আগে স্কুল শেষ করতে হবে আর যদি জীবনে উন্নতি করতে চাস, তাহলে ভালো ভাবে পড়াশুনা করতে হবে দাড়া
-    কেন?
-    ঐ দেখ বাজারটা এখান থেকে ১০০ মিটার দূরে  চাইলেই পারবি এক লাফে ওখানে যেতে?
-    না
-    পারবি না যেতে হবে এক পা এক পা করে জীবনটাও তাই আমরা একটু একটু করে সামনে এগুই, লক্ষ্যে পৌঁছি কেউই রাস্তার কষ্টের কথা বলে না, বলে শুধু সাফল্যের কথা   আরেকটা কথা এই যে আমেরিকা যেতে চাস, তার জন্য শুধু লেখাপড়া করলেই চলবে না, মানুষের সাথে মিশতে শিখতে হবে স্কুল খুলবে কিছু দিন পর এখান থেকেই প্র্যাকটিসটা শুরু করতে পারিস  আর ইংরেজি শিখতে হবে
-    আমি জানি অলরেডি গেম খেলার সময় ইংরেজি প্র্যাকটিস করি বেশ কিছু বিদেশীদের সাথে আলাপ হল
-    এটা গেমের একটা পজিটিভ দিক তবে অনলাইন বন্ধুত্ব আর সরাসরি মানুষের সাথে মেশা এক কথা নয় আমরা কালেকটিভে চলি, কাজ করি তাই ভালো লাগুক আর না ই লাগুক অনেকের সাথে মিশতে হয়
-    কিন্তু ওরা সব সময় নিজেদের শো করতে চায় সিগারেট খায়  
-    তা খাক তোর পছন্দ না হলে খাস না কিন্তু যতক্ষন এক সাথে থাকতে হয়, মিনিমাম হাই হ্যালো তো করতে হবে আমার সাথেও অনেকেই সিগারেট খেত, আমাকে সাধতো খাইনি
-    তোমাদের অন্য সময় ছিল
-    দেখ তোদের এই বয়েসে সবাই সব দেশে একই রকম হয়, অজানাকে জানার,  বাধানিষেধ ভাঙ্গার এক অপ্রতিরোধ্য ইচ্ছা পেয়ে বসে আমাদের এটাকে যে ম্যানেজ করে চলতে পারে, সামনে যায় আর যদি বন্ধুদের কথায় গা ভাসিয়ে দেয় তাহলে চোরাবালিতে আঁটকে যায়
-    আমি সাধারণত সব সিদ্ধান্ত নিজেই নেই যদিও কখনও সখনো অন্যদের জিজ্ঞেস করি
-    খুব ভালো আমি তোর বয়সে গোর্কি  পড়েছিলাম ওর দাদু বলেছিলেন, “সবার উপদেশ শুনবি, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিবি নিজে, কারণ ফলটা তোকেই ভোগ করতে হবে“ তোর যদি কোন প্রশ্ন জাগে জিজ্ঞেস করিস পারলে উত্তর দেব 
বাসায় ফেরার পথে সেভা বললো
-    আমি মস্কো যেতে চাই   এখন যাওয়া যাবে?
-    দুপুরের ট্রেন চলে গেছে রাতের ট্রেনে গেলে পৌঁছুবি রাত ১১ টায় কাল দুপুরে যাস
-    ঠিক আছে
রবিবার ১ টায় ট্রেন বললাম
-    ১২ টার দিকে বেরুবো তোকে ট্রেনে  তুলে দিয়ে আসবো  
-    ঠিক আছে আমি রেডি থাকবো   
১২ টার আগেই দেখি রেডি
-    চল
-    কি ভাবে যাবো?
-    হেঁটেই চল মাত্র দু’ কিলোমিটার
-    কেন বাসে যাওয়া যায় না?
-    যাবে না কেন? তবে আমি হাঁটবো তুই বরং বাসে চলে যা আমি আসছি
-    না চল কথা বলতে বলতে যাই
-    চল
-    তুমি অমুকের নাম শুনেছ?
-    না তো! কে এ?
-    র‍্যাপ গায়ক
-    তাই বল আমার ছাত্র জীবনে র‍্যাপ ছিল না আমি শুনতাম আমাদের দেশের গান রাশিয়ান গান আর বিটলস, পিংক ফ্লয়েড এসব
-    এই র‍্যাপ শিল্পী সাদা চামড়ার, থাকতো ঘেটোতে কালোদের মাঝে সবাই অবাক হয় ওখানে ও বেঁচে ছিল কিভাবে?   
-    হ্যাঁ, এটা আমেরিকার এক বিশাল সমস্যা আমাদের দেশেও আছে পাড়াগুলো ধর্ম আর বর্ণে ভাগ করা এখানে সেটা নেই একই বাড়িতে বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন জাতির মানুষ বাস করছে এটা কিন্তু সমাজতন্ত্রের একটা পজিটিভ দিক
-    হ্যাঁ, আমি শুনেছি আমেরিকায় বর্ণবাদের কথা
-    তাই বলি কি, ভালো মন্দ সব জায়গায়ই আছে আসল কাজ নিজেকে খুঁজে বের করা সবাইকে দিয়ে সব হয় না আমি কখনও ভালো ডাক্তার হতে পারতাম না
ধীরে ধীরে হাঁটছি রেলওয়ে স্টেশনের দিকে। আবার প্রশ্ন
-    আমাদের মধ্যে কে বেশি বুদ্ধিমান?
-    তুই অনেক আগে এই প্রশ্ন করেছিলি মনে আছে কি বলেছিলাম?
-    না আবার বল
-    এই দেখ, তুই ভায়োলিন বাজাতে পারিস, আমি পারি না তাই এই প্রশ্নে তুই আমার চেয়ে বুদ্ধিমান সবাই সব জানে না একজন একটা কাজ ভালো করে, আরেকজন অন্য কাজ রনালডোর সাথে মেসির তুলনা করতে পারিস, বুফনের নয় আসল কথা নিজের জায়গায় ভালো করা
-    আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-    কর
-    তোমার সাথে মায়ের কি হয়েছিলো? 
-    কবে?
-    আমি যখন ছোট ছিলাম
-    ঘর পরিষ্কার নিয়ে কথা কাটাকাটি আমি মনিকাকে ঘর পরিষ্কারের জন্য এক হাজার টাকা দিয়েছিলাম তবে মনিকা যেভাবে পরিষ্কার করে মার সেটা পছন্দ হয়নি আসলে আমি যে অগোছালো থাকি, মার এটা পছন্দ হয় না
-    তাই তোমরা আলাদা থাকতে শুরু করলে?
-    দেখ যতই কাছের হোক, দু জন মানুষ মানেই দুটো ভিন্ন চিন্তা, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তাই চলতে গেলে মনোমালিন্য তো হবেই কেউ পারে সেটাকে কাটিয়ে সামনে চলতে, কেউ পারে না তাছাড়া মার আরেক সমস্যা ছিল – দুবনা ওর ভালো লাগতো না। মার জন্ম মস্কোর লেনিন সরনীতে। মস্কোর অন্যতম ব্যস্ত রাস্তার উপরে বেড়ে ওঠা। দুবনার নিঃশব্দ জীবন তার পছন্দ হবে কেন? তোরা যখন ছোট ছিলি, সপ্তাহে একদিন হলেও মা মস্কো যেত ওখানকার হৈচৈ আর গাড়িঘোড়ার শব্দ থেকে জীবনের খোরাক যোগাতে। এটাও হয়তো একটা কারণ ছিল আমাদের মনমালিন্যের।  
-    এখন?
-    এখন আমরা ওটাকে পেছনে ফেলে এসেছি
-    আমার কিন্তু মনে হয়েছে আমাদের জন্যই তোমরা আবার এক হয়েছ
-    সেটা ঠিক তবে প্রথম কারণ ওটা হলেও একমাত্র কারণ নয় আমরা যদি একে অন্যকে ভালো না বাসতাম, তাহলে হয়তো এক হওয়া হতো না
-    তবে যাই বল, মা খুব সোজাসাপটা কথা বলে
-    যাকগে, এ ব্যাপারে তুই মাকে জিজ্ঞেস করিস আমি শুধু আমার দেখাটাই বলব  আমাকে  সাপোর্ট করবো মারও নিশ্চয়ই কোন কারণ ছিল এমনটি  করার মনিকার জন্মের পর আমরা অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছি অভাব অনটনের শেষ ছিল না কিন্তু মনোমালিন্য হয়নি বললেই চলে যখন আমাদের ছাড়াছাড়ি হল, তখন কিন্তু অবস্থা খারাপ ছিল না সবচেয়ে বড় কথা আমরা এসব কাটিয়ে উঠে আবার এক সাথে তুই তো সেটাই চাইতি, তাই না?
-    হ্যাঁ 
সেভাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে ইউলিয়া মেনশভার সাথে ভ্লাদিমির পজনারের ইন্টার্ভিউ দেখলাম। ভ্লাদিমির পজনার রাশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত সাংবাদিক। এখন আশির ওপরে বয়েস। জন্ম প্যারিসে। মা ফরাসি, বাবা রুশ ইমিগ্রান্ট। অল্প বয়েসে আমেরিকায় চলে যান বাবা-মার সাথে  আর যৌবনে ফিরে আসেন রাশিয়ায়। এখন এই তিন দেশেরই নাগরিক। ওনাকে প্রশ্ন করা হোল
-    ঠিক কোন দেশটা আপনার জন্মভুমি?
-    খুব কষ্ট বলা। যখন মস্কো থাকি ফ্রান্স আর আমেরিকাকে মিস করি, আবার আমেরিকা গেলে রাশিয়া আর ফ্রান্সকে। তবে কেন যেন ফ্রান্সে গেলে মনে হয় এটাই আমার সত্যিকারের জন্মভুমি।
আমারও রাশিয়ায় কাটলো ৩৪ বছর, জীবনের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ।  বাংলাদেশ বললে আমি বুঝি আমার গ্রামকে, বাংলাদেশের কথা মনে হলে আমার চোখে ভেসে উঠে কালীগঙ্গা নদী আর তরা গ্রামের দক্ষিণ চক। রাশিয়াতেও দুবনাই সবচেয়ে প্রিয়। তাই অনেক আগেই গুলিয়াকে বলে রেখেছি আমার মৃতদেহ যেন পুড়িয়ে ছাইয়ের কিছুটা ভোল্গায় ভাসিয়ে দেয়, কিছুটা পাশের বনে আর কিছুটা তরা পাঠায়। এটা হয়তো আইডেন্টিটির সমস্যা। আমাদের ছোটবেলায় বিদেশ সম্পর্কে জানতাম বই পড়ে বা সিনেমা দেখে। এখন ইন্তারনেটের কল্যানে সবই আমাদের নখদর্পণে – কোন দেশে না গিয়েও সে দেশ সম্পর্কে শুধু জানাই যায় না, মনে মনে সেখানে বাসও করা যায়। সেভাও কী তাই করে? মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, ব্যবসা বানিজ্য এসব পৃথিবীকে ছোট করেছে, তবে ইন্টারনেট বিশ্বকে পরিণত করেছে এক বিশাল গ্রামে যার সব আমরা জানি, অনুভব করি – অন্তত মানসিকভাবে। বিভিন্ন সময়ে আদর্শ বা অন্য কিছুর টানে মানুষ যুদ্ধে যেত – তবে সেটা ছিল মূলত দুটো সিস্টেমের লড়াই। রাষ্ট্রীয় মদদে। কই প্যালেস্টাইনের জন্য তো কেউ তেমন একটা লড়াই করতে যায় নি? কিন্তু আজকাল যাচ্ছে মানুষ ইসলামিক স্টেটের জন্য লড়াই করতে। এটা কি শুধুই আদর্শ না কি বিশ্বায়নের বাই প্রোডাক্ট?

দুবনা, ০৯ আগস্ট ২০১৭     




Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি