মধ্যরাতের অতিথি
গত সোমবার রাতে গুলিয়া এলো মস্কো
থেকে ট্রাক ভর্তি টাইলস নিয়ে। বাসায় কাজ চলছে। গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন দোকানে
বিভিন্ন রকম টাইলস বুকিং দিয়েছে, আজ গাড়ি গেছে দুবনা থেকে, সারা দিন মস্কোর
বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে সেগুলো সংগ্রহ করতে। ওরা এসে পৌছুলো রাত ১১ টার পর। সব
নামিয়ে ঘরে ফিরতে ফিরতে মধ্যরাত পেরিয়ে গেলো। প্রচণ্ড ক্লান্ত, তার ওপর আয়নাটা
দিতে পারেনি। মানে এ জন্যে আবার এক্সট্রা খরচ।
- টাকা পয়সা সব করপুরের মত উবে যাচ্ছে।
- টাকা তো উবে যাবার জন্যই। এতে নতুন কি হোল?
- জানি না বাসার কাজ কেমনে শেষ করবো।
- বা রে, আমি তো আগেই বলেছিলাম, যে টাকা আছে, সেভাবেই
বাজেট কর।
- বাসা কি প্রতিদিন ঠিক করে? তোমাকে আর মাথা ঘামাতে হবে না
এ নিয়ে।
- আমি মাথা ঘামাচ্ছি কে বললো?
- মনে হয় প্ল্যানটা চেঞ্জ করতে হবে।
- ঐ দেখো। যদি প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে প্ল্যান করাতে এমনটা
হতো না।
- বলেছে। সে জন্যে কত টাকা লাগতো জানো? আমি বিনে পয়সায় এটা করছি।
- অল্প পয়সায় করলে শেষ পর্যন্ত বেশি খরচ হয় – এটা তো
তোমাদেরই প্রবাদ।
- কে বললো বেশি লেগেছে?
- এই দেখো, তুমি এক এক প্ল্যান কর, জিনিষ পত্র কেন, আর
কদিন পড়ে প্ল্যান চেঞ্জ কর। কেনা জিনিষগুলো অকেজো পড়ে থাকে।
- মস্কোর বাসা ঠিক করার সময় কাজে লাগবে।
- ক্রিস্টিনা হওয়ার আগেও তুমি বলেছিলে, মনিকার জামাকাপড় সব
আছে, কিছু কিনতে হবে না। আর এখন ওর পিয়ানো আর ভায়োলিনের জন্য ৫ লাখ টাকার কথা বলছো।
- মেয়ে আর বাসা কি এক হোল?
- এক না, তবে এক কাজের জিনিষ অন্য কাজে লাগে না।
বাসার কাজ যখন হাতে নেই, কথা ছিল
৭ থেকে ১০ লাখের মধ্যেই হয়ে যাবে। কাজের লোকদের সাথে যখন কথা বললাম, ওরা চাইল ৭
লাখ, মানে কম করে হলেও আরও ৭ লাখ লাগবে ম্যাটেরিয়ালে।
- কি করবে? চল হাল্কার উপরে করে ফেলি।
- কোন হাল্কা পাতলা নেই। করলে ভালো করেই করতে হবে। বোনের
কাছ থেকে ধার নেবো।
- যেমন খুশি।
কাজ শুরুর পর আজ এটা কেনে তো কাল
ওটা। আমি কিছু বলি না। মাথা ব্যথা তো আমার না।
- আরও কিছু টাকা ম্যানেজ করতে হবে।
- তোমার বোনকে বল।
- আমি পারব না। যাকগে এখন ছোটোখাটো একটা ফ্রিজ কিনতে হবে,
ওয়াশিং মেশিন আর প্যানেল।
- ওগুলো আমার এখান থেকে নিয়ে গেলেই তো পার!
- হ্যা, নতুন বাসায় তোমার এই নোংরা জিনিষ উঠাই।
- আমার কাজ বলা। আমি আরও বছর তিনেক আলাদা বাসায় থাকছি। এরপর
যদি এক বাসায় থাকি, তাহলে এসব দিয়ে কি করবো?
- বাগান বাড়িতে কাজে দেবে। আমি দাচা কিনব।
- তা ফ্রিজ, ওভেন এসব কিনতে কত লাগবে?
- লাখ খানেক তো বটেই। একটা প্যানেল দেখলাম, বললো বেশি গরম
হয় না। হঠাৎ বিড়াল হেঁটে গেলেও পায়ে তেমন
লাগবে না। তবে ওর জন্য স্পেশাল হাঁড়িপাতিল কিনতে হবে।
- ভালো। তবে মনে হয় এখন যেসব হাঁড়িপাতিল বাসায় আছে, সেগুলো
ফেলার থেকে বিড়াল দুটোকে বিদায় করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাছাড়া ওদেরকে মনিকা আর
ক্রিস্টিনার সাথে রেখে আসলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।
- আমিও তাই ভাবছি।
আমি ভাবছি এই লাখ টাকা কোত্থেকে
ম্যানেজ করা যায়। তিন বছর আগে ও দাঁতের জন্য এক লাখ টাকা নিয়েছিল। চিকিৎসা কিছুটা
করে আর এগোয়নি। টাকার টিকির দেখাও আর মেলেনি। তবে নিজের দাঁতের জায়গায় এসেছে
অসংখ্য দাঁত – একপাল কুকুরের মুখে ভর করে। বছরের শুরুতেই আবার লাখ দেড়েক টাকা
দিয়েছি দাঁত ঠিক করার জন্য। এখনও যেতে পারেনি ডাক্তারের কাছে। আজ কুকুরের মাথা
ব্যথা তো কাল বাসায় মেরামতের কাজ। হাজার বলেও এখনও ডাক্তারের কাছে পাঠাতে পারিনি।
তাই বললাম
- আচ্ছা, দাঁতের জন্য যে টাকাটা দিয়েছিলাম, সেটা দিয়ে
ফ্রিজ কেনা যায় না?
- তার মানে? আমার দাঁতের দরকার নেই?
- এই দেখো, ফ্রিজ না কিনলে খাবার থাকবে না। আর খাবার না
থাকলে দাঁত দিয়েই বা কি হবে?
- আর ফ্রিজ থাকলে খাবার থাকবে, কিন্তু দাঁত না থাকলে খাবো
কি করে?
- সেটাও একটা কথার মত কথা। কিন্তু দেখো, খাবার না থাকলে
সবাই অনাহারে কষ্ট পাবে, তোমার দাঁত না থাকলে খেতে কষ্ট হবে শুধু তোমার। মানবতা
বলে একটা কথা আছে না? তাছাড়া তুমি প্রতিদিন বল কাল থেকে ডায়েট কন্ট্রোল করবে। এখন
সেটা এমনিতেই হয়ে যাবে।
- দেখো আমার শরীর নিয়ে কথা বল না। তোমার তো শরীর নয়,
হাড্ডি আর চামড়া।
- এটা আমি ইচ্ছে করেই করি, যাতে পুড়াতে কম খরচ হয়।
- আমাকে তো আর পুড়াতে হবে না। আমার খেতে তাই মানা নেই।
- তা ঠিক। তবে কফিনটা কিন্তু আমি ছোট দেখেই কিনব। আর জায়গা
না হলে পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে দেবো। দেখো, শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত ওভাবেই শুয়ে থাকতে
হবে।
- আর তুমি?
- আমি আর কি? আগুনে পুড়ে আলোর কণা হয়ে বিশ্বময় তোমাকে
খুঁজে বেড়াবো।
Comments
Post a Comment