গতকালের রেড স্কয়ার আর আজকের খেলা


গতকাল বিকেলে গেলাম রেড স্কয়ারে। পরীক্ষা ছিল ছাত্রদের দিনের বেলায়, আর আজ আমার একটা মিটিং ছিল কলিগের সাথে। তাই মস্কোয় থেকে যাওয়া। ভাবলাম, রয়েই গেলাম, ঘুরে আসি বিশ্বকাপের মস্কো। ক্যামেরা নিয়ে বেরুলাম। লুঝনিকি আমার বাসার সাথে, তবুও ওদিকেই গেলাম। ইউনস্ত হোটেলের সামনে বিভিন্ন দেশের ফ্যানরা বিয়ার নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। তাই মেট্রোতে ঢুকলাম রেড স্কয়ারের উদ্দেশ্যে। লোকে লোকারণ্য। প্রায় সবাই বিদেশী। চিৎকার চেচামিচি। পেরু, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের লোকেরা। মেক্সিকোও কম নয়। প্রায় সবাই উপস্থিত, নেই শুধু রাশান ফ্যান। সব দলের লোকেরা যেখানে ঢাক ঢোল বাজিয়ে নিজেদের দেশের সমর্থনে শ্লোগান দিচ্ছে, রাশানরা নীরব। শুধু এক পাবলিক দেখলাম একটা রাশান ফ্ল্যাগ নিয়ে রেড স্কয়ারে হাঁটছে। কে জানে? জাপান আর কোরিয়ার বিশ্বকাপের সময় রাশান ন্যাশনালিস্টদের হাঙ্গামার করার পর এই কড়াকড়ি কিনা। ভার্সিটিতে খেলা নিয়ে সবাই কথা বললেও সৌদির বিরুদ্ধে জয় অনেকটা আকস্মিক বলে ধরে নিয়েছে। আজ খেলার সময় মস্কো থেকে ফিরছিলাম সেভাকে নিয়ে। ও নিজেও খেলা দেখছে না। বাসায় ফেরার পথে পাশের বাড়ি থেকে চিৎকারে বুঝলাম রাশিয়া গোল করল। বাসায় ফিরে দেখি ৩-০। সেভা নড়ে চড়ে বসলো। তখন আর ২০ মিনিট বাকি। এর মধ্যে সালেহ পড়ে গেছে। রেফারি পেনাল্টি দেয়নি, সেভা বলল, দেয়া উচিৎ, এটা পেনাল্টি। গোল হোল। ও আর গোল হবে না বলে বাথরুমে গেল। আর বলল, অবিশ্বাস্য রকম ভালো খেলছে রাশিয়ার এই দলটা। আমিও এই প্রথম অনেক দিন পরে খেলা দেখলাম, শেষের ২০ মিনিট। সেই ১৯৮৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে শুধু ভালো প্লেয়ার ছিল না, টিমও ছিল। মাঝে কখনো সখনো ভালো প্লেয়ার থাকলেও টিম ছিল না - ছিল একদল ইনডিভিজুয়াল। এই প্রথম ওদের খেলা দেখে মনে হল একটা টিম খেলছে, খেলছে গোল না খাওয়ার জন্য নয়, জেতার জন্য। এখানে বিভিন্ন টক শোতে বিশ্বকাপ সম্পর্কে বিভিন্ন কথা হত। সবার একটাই আশা ছিল, টিম যেন লজ্জাজনক ভাবে, লড়াই ছাড়া না হারে। পক্ষে ছিল, এ উপলক্ষে বিভিন্ন শহরে ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়ে উঠবে, রাস্তা ঘাট ঠিক হবে, নতুন প্রজন্মের জন্য খেলাধুলার সুযোগ তৈরি হবে, আর এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে যে প্রোপ্যাগান্ডা শুরু হয়েছে, তা শুধু কিছু পশ্চিমা মিডিয়া ভিত্তিক নয়, তাঁরা নিজেরা এসে দেখছে, রিপোর্ট করছে, ফলে রাশিয়া সম্পর্কে ধারণা বদলাচ্ছে। আর এখন যখন হাজার হাজার ফ্যান এসে রাশিয়ার পরিবর্তন সচক্ষে দেখবে, তাতে তাঁদের ধারনা আমুল বদলাবে রাশিয়া সম্পর্কে। এক কথায় সব কথা ছিল টিমকে বাদ দিয়ে। আজকে খেলা দেখে মনে হল টিম সে ধারণা ভাঙতে পেরেছে, এখন এরা টিমের কথা বলবে, টিমকে সাপোর্ট করবে। এই মাত্র আরতম জুবা তাই বলল, আমরা টিমের ফ্যানদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। এটাই বা কম কিসে। আশা করি তাঁরা অনেক দূর যাবে। ভিভা রাশিয়া।
দুবনা, ১৯ জুন ২০১৮





Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি