দ্বৈত সত্ত্বা
চেন্নাই। এক নামকরা হাসপাতালের আউট ডোরে মধ্য বয়সী এক
বাঙ্গালী ভদ্রলোক পায়চারি করছেন। হাতে সর্বশেষ মডেলের আইফোন। পোশাক দেখেই বোঝা যায়
উনি শুধু বিত্তশালী নন, ইউরোপ অ্যামেরিকার সর্বশেষ ফ্যাশন সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন।
কয়েক মাস আগে ওনার মা ছিলেন এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য। এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। তাই
এসেছেন ডাক্তারকে ধন্যবাদ জানাতে। প্রচণ্ড কাজের চাপ, তাই চাইলেও ডাক্তার দেখা
দিতে পারেন না। এতো ডাক্তার দর্শন নয়, খোদ ভগবান দর্শন। তবুও ডঃ সেন দুই অপারেশনের
মাঝে একটু সময় করে নেমে এলেন নিচে। 
-       স্যরি মিঃ চৌধুরী, একটু দেরী
হয়ে গেলো। তা আপনার মা এখন কেমন আছেন?
-       ঈশ্বরের কৃপায় মা আমার ভালোই
আছেন ডঃ সেন। চেন্নাই একটা কাজে এসেছিলাম। ভাবলাম দেখা করে যাই। 
এরপর ভদ্রলোক কাকে যেন ফোন করলেন। এক ব্যাগ ভর্তি
বিভিন্ন উপঢৌকন নিয়ে সামনে এলো এক লোক। 
-       ডঃ সেন আমি যে আপনার কাছে কতটা কৃতজ্ঞ
বলে শেষ করতে পারব না। এখানে খুব সামান্য উপহার। জানি এসব দিয়ে আপনার ঋণ আমি শোধ করতে
পারব না। তবুও...
-       মিঃ চৌধুরী, আমি তো নিমিত্ত মাত্র,
জীবন মরণ ঈশ্বরের হাতে। উনিই আপনার মাকে সুস্থ করে তুলেছেন। আমার কাজের পারিশ্রমিক
তো আমি পেয়েইছি। তাই বলি আপনি বরং এক কাজ করুন। বাইরে মন্দির, মসজিদ, গির্জা,
প্যাগোডা সবই আছে। আপনার বিশ্বাস অনুযায়ী এই উপহারগুলো ওখানে কোথাও রেখে যান। কথায়
বলে না, সিজারকে সিজারের ভাগ আর ঈশ্বরকে ঈশ্বরের ভাগ দিতে হয়। আবারও ধন্যবাদ দেখা
করার জন্য। আপনার মায়ের অন্য অসংখ্য শুভ কামনা। 
মিঃ চৌধুরী কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভাবলেন, কি অমায়িক লোক!
কি ধর্মভীরু! নিজে নিলেন না, ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করতে বললেন। 
ডঃ সেন অপারেশন থিয়েটারে যেতে যেতে ভাবলেন, আধুনিক পোশাক
পড়া, অথচ সেই মধ্য যুগেই রয়ে গেছেন মিঃ চৌধুরী। এখন আর ঝাড়ফুঁকে কাজ হয় না, বিজ্ঞান
মানুষকে রোগমুক্ত করে। এরা নিজেরাও নিজেদের চেষ্টায় সফল হয়েছে জীবনে, মাথার ঘাম
পায়ে ফেলে পেরিয়ে এসেছে এতটা পথ। অথচ এত লেখাপড়া করে, আধুনিক পোশাক পড়ে, আধুনিক
ডিভাইস হাতে ঘুরে বেড়িয়ে নিজের অজ্ঞাতসারে মনটাকেই ফেলে এসেছেন সেই শিল্প বিপ্লব
পূর্ব মধ্য যুগে।
দুবনা, ০৯ জুন ২০১৮             

Comments
Post a Comment