গ্লোবালাইজেশন
সেভা আজকাল বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চায়।
প্রায়ই প্রশ্ন করে ব্ল্যাক হোল নিয়ে। এমনও হয় রাত দুপুরে ফোন করে জানতে চায়
ব্ল্যাক হোল বা মহাকাশের অন্য কোন ব্যাপারে। তবে এসবই গেম খেলার ফাঁকে ফাঁকে। মাঝে
মধ্যে রাজনীতি নিয়ে কথা হয়। সেদিন কথা হচ্ছিল গ্লোবালাইজেশন নিয়ে।
পাপ, এই যে লোকজন এত গ্লোবালাইজেশন গ্লোবালাইজেশন করে, তা ব্যাপারটা
কি? এটা ভালো না মন্দ?
কিছু জিনিস আছে যা আমরা ভালমন্দ দিয়ে বিচার করতে পারি না। ওগুলো ছিল, আছে, থাকবে। আমাদের ছাত্র জীবনে বলত লেনিন বেঁচে ছিলেন, বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন। আমরা শুধু নিজেদের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তাকে উপকারী বা অপকারী করে তুলতে পারি।
মানে?
মানে আবার কি? এই যে কম্পিউটার বা ইন্টারনেট। এর মাধ্যমে আমরা আজকাল অনেক তথ্য জানতে পারি ঘরে বসে। আগে চাইলেই কারো সাথে যোগাযোগ করা যেত না, অপেক্ষা করতে হত চিঠিপত্রের। আমি যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়তে আসি তখন একমাস অপেক্ষা করতাম বাড়ির চিঠির জন্য। চিঠি পেয়ে উত্তর দিতাম। সেটা ওদের পেতে আরও একমাস। এভাবে বাড়িতে আমার একমাস পুরনো খবর জানত আর আমিও ওদের ঠিক এক মাসের পুরনো খবর পেতাম। ঠিক যেমন আমরা দূরের গ্যালাক্সি, নক্ষত্র বা ব্ল্যাক হোলের খবর পাই – সেটা আসলে পুরনো খবর। এমন হতে পারে ওদের বার্তা আমাদের কাছে পৌঁছুতে পৌঁছুতে কেউ কেউ মারাই গেছে। এখন আর আমাদের চিঠির জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়না। চাইলেই ভাইবার বা মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করতে পারি। আগে কোন বই বা জার্নালের দরকার হলে অপেক্ষা করতে হত, লাইব্রেরীতে যেতে হত, এখন বাসায় বসেই তা পেয়ে যাই। এদিক থেকে ইন্টারনেট ব্যাপারটা খুব উপকারী। আবার কেউ কেউ পড়াশুনা বাদ দিয়ে গেম খেলে সময় কাটায়। সেটাকে উপকারী বলা ঠিক হবে বলে মনে হয় না।
তুমি আবার আমাকে নিয়ে কথা শুরু করলে!
নারে, আমি বলছিলাম গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়নের কথা। ইন্টারনেট এর একটা দিক মাত্র।
তুমি যখন ছোট ছিলে তখনও গ্লোবালাইজেশন ছিল?
থাকবে না কেন? আসলে মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে গ্লোবালাইজেশন ছিল।
সে আবার কি কথা?
দেখ, ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে যখন সময়ের জন্ম হয় তখন থেকেই সে সামনের দিকে চলছে আর এই চলার পথে সে আর তার সহচর স্পেস একের পর এক নতুন নতুন স্থান ও কাল দখল করছে। তাদের এই চলার পথে জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন গ্রহ, তারা, গ্যালাক্সি – কত কী! এদের কাছে বিশ্বজয়ী অ্যালেক্সান্ডার, চেঙ্গিস খাঁ বা তইমুর লং তো নস্যি মাত্র।
না না, আমি কিন্তু তোমার কসমোলজির কথা জানতে চাইনি। আমি জানতে চাইছে আমাদের পৃথিবীতে গ্লোবালাইজেশনের কথা।
আচ্ছা, যদি ধরে নিই প্রথম মানবের জন্ম আফ্রিকার কোন এক জঙ্গলে, তাহলে কিভাবে সে দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়লো? এই যে মানব জাতির দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়া, বেঁচে থাকার তাগিদে, খাদ্যের সন্ধানে নতুন নতুন জায়গা বাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা সেটাও তো গ্লোবালাইজেশন। তবে যখন মানুষ কৃষি কাজ শুরু করে, গ্রাম, নগর বা জনপদ গড়ে তোলে তখন হয়তো এর গতি একটু কমে যায়। ঠিক মহাবিশ্বের মন্দনের সাথে সম্প্রসারণের মত।
তারপর?
অন্য কোথায় কেমন সেটা বলতে পারব না, আমাদের এলাকায় গ্রাম দেবতা বলে একটা কথা আছে। গ্রামের কোন এক কোণে দেবতার পূজা করা হত। ধারণা করা হত সেই দেবতা শত্রুর হাত থেকে গ্রামকে, গ্রামের মানুষদের রক্ষা করবে। এটা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলেই ছিল। তারপর শুরু হয় ধর্মের বিশ্বায়ন। বুদ্ধের শিক্ষা ভারতের সীমানা অতিক্রম করে চীন, জাপান, রাশিয়া, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, বার্মাসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বুদ্ধ নিজে ধর্ম বলতে ঠিক যেটা বোঝায় তার প্রচারক না হলেও পরবর্তীতে তার অনুসারীরা তাঁকেই ভগবানের আসনে বসিয়ে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করে দেশে দেশে। একই ভাবে খৃষ্টান ও ইসলাম ধর্ম জয় করে বিশ্বর বহু দেশ। সেটাও তো এক ধরণের গ্লোবালাইজেশন। যদি অ্যালেক্সান্ডার, চেঙ্গিস খাঁ এদের বিশ্বজয় ছিল সাময়িক, বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কিন্তু সাময়িক নয়। আবার অন্যদিকে দেখলে সক্রেটিস, প্ল্যাটোসহ গ্রীক দার্শনিকদের শিক্ষা যে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়লো সেটাও তো গ্লোবালাইজেশন। এখনও বিশ্বের অনেক দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একই কথা বলা চলে শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত সব ক্ষেত্রেই। এই তো কোন পুরনো বিল্ডিং দেখিয়ে কেউ যখন বলে সেটা গথিক বা বারক্কো স্টাইলে সেটাও তো মধ্য যুগের ইউরোপ থেকেই আসা। তাই বলছি কি মানুষের ইতিহাস এটা গ্লোবালাইজেশনের ইতিহাস। আমার ছোটবেলায় যখন হঠাৎ করে কেউ মারা যেত আমরা বলতাম খারাপ বাতাস লেগেছে অথবা কেউ চোখ লাগিয়েছে বা বাণ মেরেছে। এখন আমরা জানি আসলে এটা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক। এটাও কিন্তু গ্লোবালাইজেশনের কারণেই জানি। আবার দেখ সেই প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন দেশের মধ্যে ব্যবসা বানিজ্য ছিল – সেটাও তো এই গ্লোবালাইজেশনই। তাই যারা গ্লোবালাইজেশনের মধ্যে নতুন কিছু দেখে তারা আসলে এটাকে হয় বোঝে না, বা নিজেদের স্বার্থে বুঝতে চায়না। এক সময় ভারত বা চীন থেকে মসলা, সিল্ক ইত্যাদি সামগ্রীর সাথে জ্ঞান বিজ্ঞানও আমদানী রপ্তানী হত দেশে দেশে। এভাবেই আরব বনিক ও চিন্তাবিদদের মাধ্যমে ভারত থেকে শূন্য পৌঁছে ইউরোপে। আরব থেকে ইউরোপ পায় আলজেব্রা। আবার অনেক আগে একটা সময় ছিল যখন আমাদের মহাবিশ্ব ছিল সৌরজগতের মধ্যে সীমাবদ্ধ যা কিনা তারাখচিত ছাদ দিয়ে ঢাকা ছিল। এমন কি মাত্র ১০০ বছর আগেও সাধারণ মানুষ তো বটেই আইনস্টাইন পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন আমাদের মহাবিশ্ব পরিবর্তনশীল নয়, বিশ্বাস করতেন আমাদের ছায়াপথই একমাত্র গ্যালাক্সি। আজ আমরা জানি আমাদের মহাবিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে। তার অর্থ হচ্ছে আমাদের জ্ঞানের সীমানা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, বাড়ছে অজানার সীমানাও। আর এসবই গ্লোবালাইজেশন। তাই গ্লোবালাইজেশনকে অস্বীকার করার কোনই উপায় নেই। আইনস্টাইন বলতেন সব কিছুই আপেক্ষিক, মার্ক্স বলতেন পরিবর্তনই একমাত্র সত্য। মনে হয় এখন এর সাথে যোগ করা যায় গ্লোবালাইজেশনই একমাত্র সত্য।
কিছু জিনিস আছে যা আমরা ভালমন্দ দিয়ে বিচার করতে পারি না। ওগুলো ছিল, আছে, থাকবে। আমাদের ছাত্র জীবনে বলত লেনিন বেঁচে ছিলেন, বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন। আমরা শুধু নিজেদের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তাকে উপকারী বা অপকারী করে তুলতে পারি।
মানে?
মানে আবার কি? এই যে কম্পিউটার বা ইন্টারনেট। এর মাধ্যমে আমরা আজকাল অনেক তথ্য জানতে পারি ঘরে বসে। আগে চাইলেই কারো সাথে যোগাযোগ করা যেত না, অপেক্ষা করতে হত চিঠিপত্রের। আমি যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়তে আসি তখন একমাস অপেক্ষা করতাম বাড়ির চিঠির জন্য। চিঠি পেয়ে উত্তর দিতাম। সেটা ওদের পেতে আরও একমাস। এভাবে বাড়িতে আমার একমাস পুরনো খবর জানত আর আমিও ওদের ঠিক এক মাসের পুরনো খবর পেতাম। ঠিক যেমন আমরা দূরের গ্যালাক্সি, নক্ষত্র বা ব্ল্যাক হোলের খবর পাই – সেটা আসলে পুরনো খবর। এমন হতে পারে ওদের বার্তা আমাদের কাছে পৌঁছুতে পৌঁছুতে কেউ কেউ মারাই গেছে। এখন আর আমাদের চিঠির জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়না। চাইলেই ভাইবার বা মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করতে পারি। আগে কোন বই বা জার্নালের দরকার হলে অপেক্ষা করতে হত, লাইব্রেরীতে যেতে হত, এখন বাসায় বসেই তা পেয়ে যাই। এদিক থেকে ইন্টারনেট ব্যাপারটা খুব উপকারী। আবার কেউ কেউ পড়াশুনা বাদ দিয়ে গেম খেলে সময় কাটায়। সেটাকে উপকারী বলা ঠিক হবে বলে মনে হয় না।
তুমি আবার আমাকে নিয়ে কথা শুরু করলে!
নারে, আমি বলছিলাম গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়নের কথা। ইন্টারনেট এর একটা দিক মাত্র।
তুমি যখন ছোট ছিলে তখনও গ্লোবালাইজেশন ছিল?
থাকবে না কেন? আসলে মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে গ্লোবালাইজেশন ছিল।
সে আবার কি কথা?
দেখ, ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে যখন সময়ের জন্ম হয় তখন থেকেই সে সামনের দিকে চলছে আর এই চলার পথে সে আর তার সহচর স্পেস একের পর এক নতুন নতুন স্থান ও কাল দখল করছে। তাদের এই চলার পথে জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন গ্রহ, তারা, গ্যালাক্সি – কত কী! এদের কাছে বিশ্বজয়ী অ্যালেক্সান্ডার, চেঙ্গিস খাঁ বা তইমুর লং তো নস্যি মাত্র।
না না, আমি কিন্তু তোমার কসমোলজির কথা জানতে চাইনি। আমি জানতে চাইছে আমাদের পৃথিবীতে গ্লোবালাইজেশনের কথা।
আচ্ছা, যদি ধরে নিই প্রথম মানবের জন্ম আফ্রিকার কোন এক জঙ্গলে, তাহলে কিভাবে সে দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়লো? এই যে মানব জাতির দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়া, বেঁচে থাকার তাগিদে, খাদ্যের সন্ধানে নতুন নতুন জায়গা বাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা সেটাও তো গ্লোবালাইজেশন। তবে যখন মানুষ কৃষি কাজ শুরু করে, গ্রাম, নগর বা জনপদ গড়ে তোলে তখন হয়তো এর গতি একটু কমে যায়। ঠিক মহাবিশ্বের মন্দনের সাথে সম্প্রসারণের মত।
তারপর?
অন্য কোথায় কেমন সেটা বলতে পারব না, আমাদের এলাকায় গ্রাম দেবতা বলে একটা কথা আছে। গ্রামের কোন এক কোণে দেবতার পূজা করা হত। ধারণা করা হত সেই দেবতা শত্রুর হাত থেকে গ্রামকে, গ্রামের মানুষদের রক্ষা করবে। এটা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলেই ছিল। তারপর শুরু হয় ধর্মের বিশ্বায়ন। বুদ্ধের শিক্ষা ভারতের সীমানা অতিক্রম করে চীন, জাপান, রাশিয়া, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, বার্মাসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বুদ্ধ নিজে ধর্ম বলতে ঠিক যেটা বোঝায় তার প্রচারক না হলেও পরবর্তীতে তার অনুসারীরা তাঁকেই ভগবানের আসনে বসিয়ে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করে দেশে দেশে। একই ভাবে খৃষ্টান ও ইসলাম ধর্ম জয় করে বিশ্বর বহু দেশ। সেটাও তো এক ধরণের গ্লোবালাইজেশন। যদি অ্যালেক্সান্ডার, চেঙ্গিস খাঁ এদের বিশ্বজয় ছিল সাময়িক, বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কিন্তু সাময়িক নয়। আবার অন্যদিকে দেখলে সক্রেটিস, প্ল্যাটোসহ গ্রীক দার্শনিকদের শিক্ষা যে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়লো সেটাও তো গ্লোবালাইজেশন। এখনও বিশ্বের অনেক দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একই কথা বলা চলে শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত সব ক্ষেত্রেই। এই তো কোন পুরনো বিল্ডিং দেখিয়ে কেউ যখন বলে সেটা গথিক বা বারক্কো স্টাইলে সেটাও তো মধ্য যুগের ইউরোপ থেকেই আসা। তাই বলছি কি মানুষের ইতিহাস এটা গ্লোবালাইজেশনের ইতিহাস। আমার ছোটবেলায় যখন হঠাৎ করে কেউ মারা যেত আমরা বলতাম খারাপ বাতাস লেগেছে অথবা কেউ চোখ লাগিয়েছে বা বাণ মেরেছে। এখন আমরা জানি আসলে এটা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক। এটাও কিন্তু গ্লোবালাইজেশনের কারণেই জানি। আবার দেখ সেই প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন দেশের মধ্যে ব্যবসা বানিজ্য ছিল – সেটাও তো এই গ্লোবালাইজেশনই। তাই যারা গ্লোবালাইজেশনের মধ্যে নতুন কিছু দেখে তারা আসলে এটাকে হয় বোঝে না, বা নিজেদের স্বার্থে বুঝতে চায়না। এক সময় ভারত বা চীন থেকে মসলা, সিল্ক ইত্যাদি সামগ্রীর সাথে জ্ঞান বিজ্ঞানও আমদানী রপ্তানী হত দেশে দেশে। এভাবেই আরব বনিক ও চিন্তাবিদদের মাধ্যমে ভারত থেকে শূন্য পৌঁছে ইউরোপে। আরব থেকে ইউরোপ পায় আলজেব্রা। আবার অনেক আগে একটা সময় ছিল যখন আমাদের মহাবিশ্ব ছিল সৌরজগতের মধ্যে সীমাবদ্ধ যা কিনা তারাখচিত ছাদ দিয়ে ঢাকা ছিল। এমন কি মাত্র ১০০ বছর আগেও সাধারণ মানুষ তো বটেই আইনস্টাইন পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন আমাদের মহাবিশ্ব পরিবর্তনশীল নয়, বিশ্বাস করতেন আমাদের ছায়াপথই একমাত্র গ্যালাক্সি। আজ আমরা জানি আমাদের মহাবিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে। তার অর্থ হচ্ছে আমাদের জ্ঞানের সীমানা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, বাড়ছে অজানার সীমানাও। আর এসবই গ্লোবালাইজেশন। তাই গ্লোবালাইজেশনকে অস্বীকার করার কোনই উপায় নেই। আইনস্টাইন বলতেন সব কিছুই আপেক্ষিক, মার্ক্স বলতেন পরিবর্তনই একমাত্র সত্য। মনে হয় এখন এর সাথে যোগ করা যায় গ্লোবালাইজেশনই একমাত্র সত্য।
গ্লোবালাইজেশন যদি এতই পুরনো ব্যাপার
হয়, তবে এখন এ নিয়ে এখন এত কথা কেন?
ব্যাপারটা হল আগে গ্লোবালাইজেশন ছিল স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কেউ সাধারণত জোর জবরদস্তি করে এটা করতে যেত না। সাধারণত বলছি এ কারণে যে ব্রিটিশরা তাদের তৈরি কাপড় জোর করেই ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল। তবে এখন যেটা হচ্ছে, তা হল বিভিন্ন পরাক্রমশালী দেশের সরকার আর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থে নিজেদের শর্তে এই প্রক্রিয়াটা অন্যদের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে, বলা যায় আদি কাল থেকে চলে আসা গ্লোবালাইজেশন প্রক্রিয়াটা তারা মনোপলি করতে চাইছে। আর তাই এর পক্ষে বিপক্ষে গড়ে উঠছে বিভিন্ন মতামত।
কিন্তু যারা বিপক্ষে বলছে তারা কি প্রকৃতির গতির বিপরীতে যাচ্ছে না?
যাচ্ছে। তবে তারা যে গ্লোবালাইজেশনের বিপক্ষে তা কিন্তু নয়, তারা জবরদস্তিমূলক গ্লোবালাইজেশনের বিপক্ষে। তাছাড়া ঐতিহাসিক কারণে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, গড়ে উঠেছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতি। গ্লোবালাইজেশন শুধু যে ভাল নিয়ে আসছে তা তো নয়, খারাপ বা কোন নির্দিষ্ট সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকর অনেক কিছুও নিয়ে আসছে। বর্তমান যুগে, যখন তথ্য সহজলভ্য, যখন চাইলেই পৃথিবীর যেকোনো দেশে চলে যাওয়া যায়, যেকোনো দেশের মানুষের সাথে মত বিনিময় করা যায়, শুধুমাত্র বাধা নিষেধের মাধ্যমে কিছু করা সম্ভব নয়। উপায় একটাই, দেশের মানুষকে সুশিক্ষিত করে তোলা, তাদের মধ্যে নিজের দেশ, নিজের সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহ জাগানো। তাদের প্রশ্ন করতে শেখানো। তাদেরকে যুক্তিবাদী হতে শেখানো। কারণ অন্ধবিশ্বাসী মানুষকে সহজেই ভুল বোঝানো যায়, কিন্তু যুক্তিবাদী মানুষকে ভুল বোঝানো কঠিন। রাজনীতিবিদরা নিজেদের তাৎক্ষনিক স্বার্থে হাসিলের জন্য মানুষকে মুক্তচিন্তা থেকে দূরে রাখে। আর এ কারণেই গ্লোবালাইজেশন ত্যাগ করে ন্যাশনালিজমের ভূত চাপিয়ে দেয় মানুষের ঘাড়ে। কিন্তু মানুষকে যদি সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা যায় তাহলে আর গ্লোবালাইজেশনের বিরুদ্ধে লড়তে হবে না, মানুষ নিজেরাই তার ভালোটুকু গ্রহণ করবে, খারাপটা পরিত্যাগ করবে। শুধু গ্লোবালাইজেশনই নয়, সমস্ত ক্ষেত্রেই আমাদের সামনে আসা সুযোগের সঠিক ব্যবহারের উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে আমরা কতটা সফল হব।
ব্যাপারটা হল আগে গ্লোবালাইজেশন ছিল স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কেউ সাধারণত জোর জবরদস্তি করে এটা করতে যেত না। সাধারণত বলছি এ কারণে যে ব্রিটিশরা তাদের তৈরি কাপড় জোর করেই ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল। তবে এখন যেটা হচ্ছে, তা হল বিভিন্ন পরাক্রমশালী দেশের সরকার আর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থে নিজেদের শর্তে এই প্রক্রিয়াটা অন্যদের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে, বলা যায় আদি কাল থেকে চলে আসা গ্লোবালাইজেশন প্রক্রিয়াটা তারা মনোপলি করতে চাইছে। আর তাই এর পক্ষে বিপক্ষে গড়ে উঠছে বিভিন্ন মতামত।
কিন্তু যারা বিপক্ষে বলছে তারা কি প্রকৃতির গতির বিপরীতে যাচ্ছে না?
যাচ্ছে। তবে তারা যে গ্লোবালাইজেশনের বিপক্ষে তা কিন্তু নয়, তারা জবরদস্তিমূলক গ্লোবালাইজেশনের বিপক্ষে। তাছাড়া ঐতিহাসিক কারণে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, গড়ে উঠেছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতি। গ্লোবালাইজেশন শুধু যে ভাল নিয়ে আসছে তা তো নয়, খারাপ বা কোন নির্দিষ্ট সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকর অনেক কিছুও নিয়ে আসছে। বর্তমান যুগে, যখন তথ্য সহজলভ্য, যখন চাইলেই পৃথিবীর যেকোনো দেশে চলে যাওয়া যায়, যেকোনো দেশের মানুষের সাথে মত বিনিময় করা যায়, শুধুমাত্র বাধা নিষেধের মাধ্যমে কিছু করা সম্ভব নয়। উপায় একটাই, দেশের মানুষকে সুশিক্ষিত করে তোলা, তাদের মধ্যে নিজের দেশ, নিজের সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহ জাগানো। তাদের প্রশ্ন করতে শেখানো। তাদেরকে যুক্তিবাদী হতে শেখানো। কারণ অন্ধবিশ্বাসী মানুষকে সহজেই ভুল বোঝানো যায়, কিন্তু যুক্তিবাদী মানুষকে ভুল বোঝানো কঠিন। রাজনীতিবিদরা নিজেদের তাৎক্ষনিক স্বার্থে হাসিলের জন্য মানুষকে মুক্তচিন্তা থেকে দূরে রাখে। আর এ কারণেই গ্লোবালাইজেশন ত্যাগ করে ন্যাশনালিজমের ভূত চাপিয়ে দেয় মানুষের ঘাড়ে। কিন্তু মানুষকে যদি সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা যায় তাহলে আর গ্লোবালাইজেশনের বিরুদ্ধে লড়তে হবে না, মানুষ নিজেরাই তার ভালোটুকু গ্রহণ করবে, খারাপটা পরিত্যাগ করবে। শুধু গ্লোবালাইজেশনই নয়, সমস্ত ক্ষেত্রেই আমাদের সামনে আসা সুযোগের সঠিক ব্যবহারের উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে আমরা কতটা সফল হব।
দুবনা, ১১ মে ২০১৯
Comments
Post a Comment