উলিৎসা মিকলুখো মাকলায়া


১৯৯৪ সালের মে মাসে দুবনায় জয়েন করার পরই আমি মিখলুখো মাকলায়ার ২ নম্বর ব্লকের ৫১ নম্বর ঘর ছেড়ে দিই বিগত ২৫ বছরে ওদিকটায় তেমন আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি যতদূর মনে পড়ে গত ২১ মে ২০১৯ প্রথম বারের মত একদিনে দুই দুইবার  ওদিকটায় যাই সকালে গেছিলাম মেডিক্যাল চেক আপ করাতে খান থেকে দনস্কায়া যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু প্ল্যানটা শেষ পর্যন্ত ক্যান্সেল করে দিই ভেবেছিলাম বাসায় ফিরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুবনা ফিরে যাব বাসায় ফিরে মনে হল, বাচ্চাদের জন্য কিছু একটা রান্না করি এসব করতে করতে কেটে গেল বেশ খানিকটা সময় বিকেল সাড়ে ছয়টায় গাড়ির বুকিং দিয়ে বসে রইলাম সেভাকে বলাই ছিল পাঁচটা কুড়িতে বেরুবো, ও যেন রেডি হয়ে নেয় চারটের দিকে ক্রিস্টিনা এলো কাজ থেকে    
- পাপ, পাঁচটায় আমরা পাসপোর্ট অফিসে যাব

- তুই সিওর যাবি? আমার গাড়ি সাড়ে ছয়টায়
ভেবে বল তাহলে আমি বুকিং ক্যান্সেল করছি
- হ্যাঁ, যাব
তুমি ক্যান্সেল কর
ক্রিস্টিনার পাসপোর্ট বদলানর দরকার ছিল
গত বছর ৯ ডিসেম্বর, যখন ওর ২০ বছর পূর্ণ হয় কিন্তু আজ যাই কাল যাই করতে করতে দেরি  হয়ে গেছে, এখন জরিমানা দিতে হবে তবুও যেতে যখন চাইছে যাওয়াই ভালো আমি তাই বুকিং ক্যান্সেল করে নতুন বুকিং দিলাম রাত সাড়ে নয়টায় এদিক থেকে আমার সাথে ওর বেশ মিল আছে একবার আমিও আমার রেজিস্ট্রেশন উইথড্র করেছিলাম ২০১০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এভবেই ছিলাম পরে একবার ব্যাংকের ঝামেলায় নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় এখানে পাসপোর্ট ছাড়া কোন কাজই হয় না, কিন্তু ও এটা কিছুতেই বুঝতে চায় না 
রেডি হয়ে রওনা দিলাম যেতে হবে ভলগিনা, সেকেন্ড মেডিক্যাল হোস্টেলের আগের স্টপেজে স্পোরতিভনায়া মেট্রোতে উঠলাম দুজন
- ১৯৮৩ সালে আমি যখন মস্কো আসি তার কয়েকদিন পরেই বরভিতস্কিয়ে গড়ি স্টেশন মেরামতের জন্য বন্ধ করা হয়
তখন নাম ছিল লেনিনস্কিয়ে গড়ি কয়েকজন সিনিয়র স্টুডেন্ট আমাদের নিয়ে বেড়াতে এসেছিল এখানে মনে হয় এই সেদিনের ঘটনা সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেল, নতুন দেশ হল, কিন্তু স্টেশন বন্ধ ছিল এই কয়েক বছর আগেও  

দেখতে দেখতে
ইউনিভার্সিটি, ভেরনাদস্কি প্রস্পেক্ট পেরিয়ে চলে এলাম ইউগো-জাপাদনায়া স্টেশনে আমার হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে দেখে ক্রিস্টিনা হাত বাড়িয়ে দিল মনিকার সাথে কোথায় গেলে ও আমার হাত ধরে হাঁটে, ক্রিস্টিনা আজই এটা প্রথম করল ক্রিস্টিনাও বড় হয়ে গেল

- ওই যে ওই বিল্ডিঙটা দেখছিস, ওটা ছিল মিনি সুপার মার্কেট
মস্কো আসার পরে খান থেকেই হাঁড়ি, পাতিল, প্লেট, গ্লাস এসব কিনেছিলাম ওটা ছিল আন্ডারগ্রাউন্ডে, এক তলায় ছিল খাবারের দোকান আর দোতলায় ইউনিভারসাম ওর পেছনে বড় বিল্ডিঙটা তখন ছিল না     
- তুমি যখন এলে, তোমার বয়স কত ছিল?
- উনিশ


এর মধ্যেই
৭৫২, ২৫০, ২২৬ নম্বর বাস চলে এলো ২৫০ নম্বর বাসে উঠে বসলাম
- এক সময় মেট্রোর অন্য দিকে আমার এক কাকু থাকতেন আমাদের লেনিনস্কি প্রসপেক্টের বাসায় আসতেন বেড়াতে আন্তন আর মনিকা তখন ছোট, পরে আমরা দুবনা চলে যাই, কাকু দেশে ফিরে যান কখনো কখনো ওনার সাথে গল্প করতে করতে দেরি হয়ে গেলে উপরের ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটে হোস্টেলে ফিরতাম কখনো রাত একটা বা দেড়টা বেজে যেত হোস্টেলে ফিরতে
- অত রাতে হোস্টেল খোলা থাকতো?
- থাকত
না, তবে দরজার টোকা দিলে খুলে দিত ঢুকতে দিত
- এখন অনেক কড়াকড়ি

- তখনও ছিল
তবে তখন সন্ত্রাসবাদের ভয় ছিল না
- আচ্ছা

- এই যে বিল্ডিঙগুলো
দেখছিস ওর পেছনে ছিল দুটো দোকান আমরা বলতাম প্রথম ও দ্বিতীয় দোকান ওখানে আসতাম খাবার কিনতে এক দোকানে কাজ করতেন প্রচণ্ড মোটা এক মহিলা এমন লোক আগে দেখিনি তাই এখানে এলে ওনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম  
- আচ্ছা

- এই যে হাতের ডান দিকে রাস্তা দেখছিস এটা ধরে চলে যাওয়া যেত পলস্কায়া মোদায়
পোল্যান্ডের জামাকাপড়, ব্যাগ, কস্মেটিক্স ইত্যাদি বিক্রি হত সেখানে  আমি আগে মাঝে মধ্যে ওখানে যেতাম
- কিছু কিনতে
?
- ঠিক তা নয়
এর সামনে সুন্দর পার্ক মত ছিল বাচ্চারা খেলাধুলা করত আসলে আমরা যেখানে থাকতাম, সেটা শুধু ছাত্রদের জন্যই রাশিয়ার সাধারণ মানুষদের যাতায়াত সেখানে তেমন ছিল না আমরা সকালে ইউনিভার্সিটির বাসে যেতাম ক্লাসে ক্লাস শেষে বাসায় ফিরে পড়াশুনা আর আড্ডা অনেক সুযোগ ছিল এ দেশটাকে জানার শুধু এ দেশ কেন, আমাদের এখানে ১২০ দেশের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করত কিন্তু আমাদের সময় কাটত নিজেদের মধ্যে আড্ডা দিয়ে আর রাজনীতির অপচর্চা করে অপচর্চা বলছি এ কারণে যে খুব ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করে বাইরে ঘুরতে গেলেও মূলত বিভিন্ন ইন্সটিটিউটের বন্ধুদের ওখানে তাই ঘুরেফিরে আমাদের দৌড় বাঙালিদের মধ্যেই থাকতো যদিও আমি প্রায়ই আমার রুমে রুশ বন্ধুদের সাথে গল্প করে সময় কাটাতাম আমার যে রাশিয়ান ভাষায় গল্পের বই পড়া সেটা ওদের উৎসাহেই
- এটা মনে হয় সব সময়ই হয়
আমরাও তো এখন এভাবেই সময় কাটাই ক্যাফেতে বসে বা কোথাও ঘুরে     
- সামনে যে বিল্ডিং – এটা ট্যুরিস্ট বিল্ডিং
ওর নীচে ক্যাফে ছিল শনিবার আর রোববার আসতাম কফি খেতে ওদের স্মিতানাটা খুব ভালো ছিল আর ছিল ইভুশকা নামে এক কেক আমি প্রতি রোববার কিনতাম আর বন্ধুদের বলতাম আমার জন্মদিন, চলে এস
- ওরা উপহার নিয়ে আসতো?
- নারে
আমার দেশের বন্ধুরা থাকতো অন্যান্য ব্লকে এদিকে খুব একটা আসতো না এ উপলক্ষ্যে যদি আসতো, সেটাই ছিল উপহার
- ও গো (আচ্ছা)
- ডান দিকে এই বিল্ডিংএ ছিল মেলোডি বলে রেকর্ডের দোকান
আমার যে লং প্লেগুলো তার অধিকাংশই এখানে কেনা
- এখন তো সব পড়ে আছে
কি লাভ হল কিনে?
- দেখ, ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে ভালো ক্যাসেট বা ক্যাসেট প্লেয়ার পাওয়া যেত না
গ্রামোফোন রেকর্ড ভালো ছিল আমাদের বাড়িতে মার ছিল গ্রামোফোন রেকর্ড প্লেয়ার পুরনো দিনের অনেক রেকর্ড ছিল আমি আসার কিছুদিন আগে সাপ ঢুকে পড়ে ওতে কিছুতেই যখন সাপ বের হচ্ছিল না, তখন গরম জল ঢেলে সাপ মেরে গ্রামোফোন রেকর্ডটা ভেঙ্গে সাপ বের করা হয় ও হ্যাঁ, আমার তো প্ল্যান ছিল না এখানে থেকে যাওয়ার তাই ঐসব রেকর্ড ছিল সোভিয়েত দেশের স্মৃতি তাছাড়া তখন কেই বা জানত ইলেকট্রনিক্সে এমন বিপ্লব ঘটবে, ইন্টারনেট আসবে, রেকর্ড, ক্যাসেট এমন কি কম্প্যাক্ট ডিস্ক পর্যন্ত এতো তাড়াতাড়ি সেকেলে হয়ে যাবে    
- হুম
এমন কি আমাদের প্রথম দিকের টেলিফোনগুলোও ছিল একেবারে সেকেলে শুধু ফোন করা যেত, ছিল আল্যারম আর এসএমএস  
- এই যে হোটেলটা দেখছিস, পার্ক প্যালেস, এটা ছিল না আমাদের ছাত্র জীবনে
আমরা এখানে ফুটবল খেলতাম তারপর এক সময় আমাদের চোখের সামনে হোটেল তৈরি হল আর ওই যে বন, ওখানে আমি দৌড়ুতাম প্রায়ই সাথে থাকতো আমার রুমমেট শ্রীকুমার ছবিও তুলতাম ওখানে অনেক আমার তো মনে হয় এখনও ঘুরতে গেলে পরিচিত কোন পাখি বা ফুলের সাথে দেখা হয়ে যাবে বার্চগুলো আমাকে নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি  উল্টো দিকে যে চার্চ মত দেখছিস, আমাদের সময় সেটা ছিল না এটা ইদানীং কালের তৈরি, যতদূর জানি আফগান যুদ্ধে যারা মারা গেছে তাদের স্মরণে এর পেছনে আমাদের স্টেডিয়াম ওখানে স্পোর্টস ক্লাস ছাড়াও আমাদের সংগঠনের বার্ষিক খেলাধুলা হত ওর ওপারে যে বিল্ডিং – ওটা শিশু হাসপাতাল, আমার চোখের সামনে গড়ে ওঠা ওখানে আমরা দু দুবার সুব্বোৎনিক করেছি প্রথমবার স্বেচ্ছাশ্রম, দ্বিতীয়বার টাকার বিনিময়ে ওই টাকা আমরা দেশে পাঠিয়েছিলাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করতে আমাদের দেশে তখন প্রায় প্রতি বছরই বন্যা হত, অনেক লোক মারা যেত, ঘরবাড়ি ছাড়া হত অনেক এখন অবশ্য সেটা তেমন হয় না  আর এই যে আমাদের হাতের বাঁ দিকে বিল্ডিং – এটা ২ নম্বর ব্লক এর ৫১০ নম্বর রুমে আমি ছিলাম ১৯৮৫ সালের শুরু থেকে ১৯৯৪ সালের মে মাস পর্যন্ত আমার রুমমেট ছিল ইয়েভগেনি এখনও আমরা জন্মদিনে একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানাই এখান থেকেই দুবনা চলে যাই  পরের বিল্ডিঙটা পাদফাক এখানে আমার রুশ শিক্ষার হাতেখড়ি
- পাপ, দেখ ওখানে লেখা “মা, আমি ক্লাসে”
ওটা কি ক্যাফে?
- হ্যাঁ, ওটা এখন ক্যাফে
আমাদের সময় ওখানে ছিল টেইলারস আমার তখন জামা কাপড় কিনতে সমস্যা হত আমার মাপের জিনিস পাওয়াই যেত না প্রায়ই কিনতে হত বাচ্চাদের দোকান থেকে একবার অনেক খুঁজে একটা ওভারকোট কিনলাম সমস্যা হল ব্যাগ নিয়ে শীতে হাত জমে যেত আমি এক রুবল দিয়ে ওভারকোটের ভেতরে বিশাল এক পকেট সেলাই করে নিলাম মহিলারা কিছুতেই করবে না আমিও নাছোড়বান্দা অনেক বলে কয়ে, অনেক বুঝিয়ে করালাম বললাম, ইউরোপে এখন এই ফ্যাশান চলছে এতে হাত ফ্রী হল ঠিকই, কিন্তু পায়ের কষ্ট বাড়ল হাঁটতে গেলে ব্যাগের গুঁতা লাগত হাঁটুতে
- তুমি পারও

- আমার ঘরের ফ্রিজটার দরজা ছিল উল্টো দিকে
একদিন আমি আর আন্দ্রেই দুজনে মিলে দরজা খুলে উল্টো করে লাগালাম ভেবেছিলাম মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার সারাদিন কেটে গেল ওটা লাগাতে কিন্তু মজার ব্যাপার হল কেউ এলে বলতাম ফ্রিজ খুলে কিছু দিতে স্বাভাবিক ভাবেই সে ফ্রিজতা খুলতে পারত না অন্যেরা হেসে উঠত  
- তার মানে তুমি সবসময়ই এমন উল্টোপাল্টা ছিলে

- হুম
এই বিল্ডিঙের নীচে ছিল খাবারের দোকান, ষ্টেশনারী শপ, পোস্ট অফিস, ব্যাংক দেশে বা অন্য শহরে ফোন করতে হলে আমরা এখানে এসে ফোন করতাম, চিঠি পাঠাতাম আর টেইলারসের পাশে ছিল সেলুন আমরা তখন নিজেরাই নিজেদের চুল কাটতাম বন্ধুরা কেটে দিত আমি এখানে বার দুয়েক কাটিয়েছি, কিন্তু ভয় হত ভুল্ভাল কেটে দেবে বলে তখনও সব ঠিকঠাক বোঝাতে পারতাম না পরে অবশ্য কাটাতাম ট্যুরিস্ট বিল্ডিঙে, সিমনের কাছে ও পাঁচ রুবল করে নিত এটা আমাদের সেলুনের দ্বিগুন পরে ও ক্যানাডা চলে গেছে
- পাঁচ রুবল তো তখন অনেক টাকা ছিল, তাই না?
- হ্যাঁ, আড়াই কেজি মাংস কেনা যেত, পাঁচ বার পেট পুরে খাওয়া যেত ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে
ওই তো আমাদের ক্যান্টিন ওখানে আমি রাতের খাবার খেতাম এটা ক্রেস্ত আমাদের ইউনিভার্সিটির মেইন বিল্ডিং ক্রশের মত দেখতে, তাই এই নাম এখানে আর্টস ফ্যাকাল্টি এখন যে ফোয়ারা দেখছিস সেটা তখন ছিল না, ছিলনা এই সুন্দর পার্ক কেমন যেন বুনো বুনো ছিল সব মে মাসের শুরুতে ফুলের গাছ লাগাত, গাড়ি করে নতুন মাটি নিয়ে আসত আমার তো বরাবরই ঘরে গাছ লাগানোর শখ এখান থেকে মাটি নিয়ে যেতাম ওই যে বাঁদিকে  বিল্ডিং এটা পাদফাকের হোস্টেল সোভিয়েত ইউনিয়নে এসে এখানেই আমি প্রথম উঠি, ছিলাম প্রায় দশ মাস, ৩৫৩ নম্বর ঘরে এটা ৭ নম্বর হোস্টেল, আমার ডাক্তার বন্ধুরা থাকতো, আর এটা ১০ নম্বর, ইঞ্জিনিয়ারদের আস্তানা উল্টোদিকে মেডিসিন ফ্যাকাল্টি পলিক্লিনিক অবশ্য আমাদের সময়ই হয় সকালে আমি এখানেই এসেছিলাম এখন অবশ্য অনেক নতুন হোস্টেল, নতুন শিক্ষা ভবন হয়েছে এখানে যা আমাদের সময় ছিল না
- সামনের বিল্ডিঙটাও কি তোমাদের ইউনিভার্সিটির?
- না, এটা জিওলজক্যাল ইন্সটিটিউট
ওখানে আমার খুব প্রিয় এক বন্ধু পড়ত ডান দিকে বাইওকেমিস্ট্রি ইন্সটিটিউট, এর আকারটা ডিএনএ র মত আর ওই দূরে যে হলটা - ওটা ভিতিজ সিনেমা হল আমরা বন্ধুরা মিলে ওখানে যেতাম সিনেমা দেখতে তখন তো বিনোদন বলতে সিনেমা টিকেটের দামও কম ছিল 
- আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে?
- না, নেক্সট স্টপেজে নামব
চল নামি
- চল

- ওই যে সামনে দুটো বিল্ডিং দেখছিস, ওগুলো সেকেন্ড মেডিক্যালের হোস্টেল
ওখানেও থাকতো অনেক বন্ধু, প্রায়ই আসতাম বিকেলে ঘুরতে ঘুরতে আর এখন যেখানে পাসপোর্ট অফিস, ওখানে ছিল দোকান জামা কাপড়, স্যাম্পু, সাবান, পারফিউম – এসব বিক্রি হত আর এর পরের বিল্ডিঙে ছিল বিশাল লন্ড্রী তখন তো এখনকার মত ঘরে ঘরে ওয়াশিং মেশিন ছিল না আমরা এখানে আসতাম জামাকাপড় ধুতে
- চলে এসেছি

- হ্যাঁ, চল
সিরিয়াল নম্বর নিয়ে নে 
বেশ কিছুক্ষণ পরে আমাদের ডাক পড়ল ভেতরে ঢুকলাম
- আপনারা কি এক সাথে?
- আমার পাপা

- আসুন

কাজ হল না
অনেক দেরি হয়ে গেছে তাই অন্য জায়গায় গিয়ে কিছু ব্যাখ্যা লিখতে হবে আমি অবশ্য একটা কাজ করে ফেললাম দিন কয়েক আগে সেভা বলল ওর পাসপোর্ট পাচ্ছে না অনেক খুঁজেও যখন পেলাম না, আমি থানায় গিয়ে রিপোর্ট করে আসলাম পরে একদিন সেভা ফোন করে বলল জামাকাপরের ভেতরে পাসপোর্ট পাওয়া গেছে এমতাবস্থায় আমাকে কি করতে হবে সেটা জানা ছিল না এই সুযোগে সেটা জেনে আমরা বেরিয়ে পড়লাম বাসে করে যখন ক্রেস্তে আসলাম, ক্রিস্টিনাকে জিজ্ঞেস করলাম  
- শন পাপড়ি খাবি? 
আমাদের দেশের বিভিন্ন মিষ্টির মধ্যে এটাই ওদের পছন্দ

- হ্যাঁ

- চল তাহলে নামি
দুই নম্বর ব্লকে ইন্ডিয়ান দোকান আছে, ওখানে পাওয়া যায় ওই দোকানটা দিয়েছিল আমাদেরই পরিচিত কিছু ছেলে, সাউথ ইন্ডিয়ার শ্রীকুমারের কাছে প্রায়ই আসত এখন অবশ্য মালিক বদল হয়েছে  
- তাহলে দরকার নেই
আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাব
- ঠিক আছে
পরে কোন সময় আসব
বাস এগিয়ে চলল ইউগো-জাপাদনায়ার দিকে প্রায় সবই বদলে গেছে, তবে যে জিনিসটা সেই সোভিয়েত আমলের মতই রয়ে গেছে, সেটা মিকলুখো মাকলায়া আর লেনিনস্কি প্রস্পেক্টের ক্রসিংএ গাড়ির স্রোত আর জ্যাম আগের মতই এখনও এই রাস্তা পার হতে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয় এক সময় মিকলুখো মাকলায়া চোখের আড়ালে যেতে যেতে মনের ভেতরে ঢুকে পড়ল       
দুবনা, ২ মে ২০১৯
     


     

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি