রাম মন্দির
আজ নরেন্দ্র মোদী অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন। এ নিয়ে চারিদিকে কথা হচ্ছে। পক্ষে বিপক্ষে দু দিকেই। কী বলা যায় এ নিয়ে? অনেকেই প্রশ্ন করছেন এখানে বাবরী মসজিদের আগে রাম মন্দির ছিল কিনা তার কোন প্রমাণ কোথায়? অনেকে আরও এগিয়ে গিয়ে বলছেন, আসলে রাম ছিল কিনা সেটাও প্রশ্নাতীত নয়। তাহলে? আমি বলব এ প্রশ্ন ঈশ্বর আছে কি নেই সেই বিতর্কের মতই লম্বা দাড়িওয়ালা আর অমীমাংসিত। কিন্তু ইতিহাস যাই বলুক, প্রত্নতত্ত্ব যাই বলুক, সারা পৃথিবীর সহস্র গবেষক কয়েক কোটি প্রমাণও যদি হাজির করেন যারা রামে বিশ্বাস করে, রাম জন্মভুমিতে বিশ্বাস করে তাদের সেই বিশ্বাস থেকে এক চুলও সরাতে পারবে না। ঠিক যেমনটা যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে শত যুক্তি দিয়েও তাদের কাছে ঈশ্বরের অস্তিত্বহীনতা প্রমাণ করা যাবে না। তাই এই পথ আমাদের কোথাও নিয়ে যেতে পারবে না। এই সমস্যা বর্তমানে ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে অনেক দূরে চলে গেছে। তবে এটা ঠিক দিনের শেষে ভারতবাসীকেই এই কর্মের ফলাফল ভোগ করতে হবে, তাই তাদেরকেই এর উত্তর খুঁজতে হবে। উত্তরটা যত শান্তিপূর্ণ হয় ততই মঙ্গল, ভারতবাসীর জন্যে, মানব জাতির জন্যেও। নতুন রক্তপাত না ভারতকে, না মানব জাতিকে – কাউকেই মহান করবে না, কোন ধর্মকেও না।
ছোটবেলায় রামায়নের, রামের গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তাম। যখন তাড়কা রাক্ষসীর হুঙ্কার শুনে চিৎকার করে উঠতাম রাম আসত সেই ভয় থেকে আমাকে উদ্ধার করতে। মা প্রায়ই গাইতেন
জয় জয় রঘুপতি রাঘব রাজা রাম
পতিত পাবন সীতারাম
ঈশ্বর আল্লাহ তেরে নাম
সবকে সুমতি দে ভগবান।
না, আমার রাম কখনোই ভগবান ছিলেন না, ছিলেন বীর ও সাহসী যোদ্ধা, প্রজা বৎসল রাজা। বড় হয়ে বিভিন্ন বই পড়ে রামের কাছে অনেক প্রশ্ন জেগেছে, তবে একটা জিনিস মনে হয়েছে যে সব কিছুর পরেও তিনি সব সময়ই প্রজাদের মঙ্গল কামনা করতেন, এমন কি অতি নগন্য প্রজার মনোরঞ্জনের জন্যে নিজের স্ত্রীকে পর্যন্ত বনবাস দিয়েছেন। রাম যদি সত্যিই থেকে থাকতেন, আমার বিশ্বাস তাঁকে নিয়ে এই হানাহানি তিনি কখনোই মেনে নিতেন না। যে রাজা একজন প্রজার যাতে মনঃক্ষুণ্ণ না হয় সে জন্যে নিজের সুখ বিসর্জন করতে পারেন তিনি কি কখনও তার কোটি কোটি প্রজার মনঃক্ষুণ্ণ হতে দিতেন?
দুবনা, ০৫ আগস্ট ২০২০
Comments
Post a Comment