ব্যাক সীনে ভ্যাকসিন

রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা ভ্যাক্সিনকে বার্থ সার্টিফিকেট দিল। বেশ আগে থেকেই এ নিয়ে কথাবার্তা চলছিল। জুন জুলাইয়ে দুই টিমে প্রায় একশ লোকের উপর পরীক্ষা চালানর পর থেকে এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছিল, আগস্টেই পারমিশন দেওয়া হবে বলে জোর গুজব চলছিল। একই সাথে চলছিল পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমের বিভিন্ন প্রচার। মূল যে দুটো জিনিস নিয়ে সেখানে আপত্তি তোলা হয়েছিল - তা নিয়মানুযায়ী পরীক্ষার রেজাল্ট কোন আন্তর্জাতিক মানের পত্রিকায় প্রকাশ না করা আর কয়েক হাজার লোকের উপর টেস্ট চলিয়ে ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ ও ফলপ্রসু, মানে অ্যান্টিবডি তৈরি করে কি না সেটা আরও গুরুত্বের সাথে নির্ণয় না করা। এখানে বিভিন্ন টক শোতে এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা যেখানে ভ্যাকসিন তাড়াতাড়ি বাজারে আনার উপর জোর দেন, ডাক্তার ও ভাইরাসোলজিস্টরা একটু ধীরে চলার নীতিতে বিশ্বাস করেন। ব্যাপারটা এই নয় যে ভ্যাকসিন নিয়ে তাদের কোন সন্দেহ আছে। কিন্তু একবার বাজারে এলে গণহারে  ভ্যাকসিনাইজেশন শুরু হবে। সেখানে যদি অন্য কারণেও কেউ কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় সেটার নেগেটিভ প্রভাব দূর করতে অনেক বেশি কাঠখড় পোড়াতে হবে। তবে রেজাল্ট পাব্লিকেশনের ব্যাপারে বলা যায়, যেকোনো জার্নাল চাইলেই ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রকাশনা ডিলে করতে পারে। সমস্যা আসলে রাজনৈতিক। পশ্চিমা বিশ্ব পুতিনের আজকের ঘোষণাকে একেবারেই রাজনৈতিক হিসেবে দেখতে ও দেখাতে চাইছে। হয়তো এর মধ্যে কিছুটা সত্যতা আছে। কিন্তু তাদের এসব প্রচারও যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। অক্সফোর্ডে কাজ শুরুর সাথে সাথেই কিন্তু কোন রকম টেস্ট ছাড়াই বিশাল পরিমাণ ভ্যাকসিন আগে থেকেই তৈরি করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। চাইলে সেটা নিয়েও হৈচৈ করা যেত, করত, যদি অক্সফোর্ড ইংল্যান্ডে না হয়ে রাশিয়ায় হত। কয়েকদিন আগে এরাই তো বলেছিল রুশদের তৈরি ভ্যাকসিন আসলে অক্সফোর্ড থেকে চুরি করা ফর্মুলায় তৈরি। তাই যদি হয়  তাহলে কি তাদের নিজেদের ফর্মুলা নিয়ে সন্দেহ আছে এখন? অনেকেই করোনাকে কনস্পিরেসি থিওরি দিয়ে বিচার করতে চাইছে, অনেকে এটাকে বায়োলজিক্যাল আর্মস বলতে চাইছে। বাস্তবে যাই হোক, বিভিন্ন দেশের মধ্যে তো বটেই, এমন কি  রাজনৈতিক স্কোর করার জন্য অনেক দেশ যেভাবে করোনাকে ব্যবহার করছে, রাজনৈতিক লাভ লোকসানের গ্যাঁড়াকলে পড়ে দেশে দেশে যেভাবে সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে - তাতে কেউ করুক আর নাই করুক, করোনা নিজেই সবাইকে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত করছে। আশা করি রাশিয়ায় মুক্তি প্রাপ্ত এই ভ্যাকসিন রাজনীতির উপরে উঠে মানব জাতিকে করোনা বিজয়ের পথে এক পদক্ষেপ হলেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

অনেকেই ভ্যাকসিনের আবির্ভাবে অতিরিক্ত আশাবাদ ব্যক্ত করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। আশাবাদী হওয়া ভালো, অতি উৎসাহ অনেক সময় খারাপ রেজাল্ট বয়ে আনে। এটা সব কিছুর পরেও ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বিশেষজ্ঞরা আরেক্টু অপেক্ষা করলে খুশি হত বলেই আমার মনে হয়। রাজনীতিতে রিস্ক নেওয়া যায়, ভুল হলে জনগণকে শত্রুর কারসাজি বলে খাওয়ানো যায়, বিজ্ঞানী সেটা পারে না। তার ভুলের মাশুল নিজেকেই দিতে হয়। এখানে কোন ভাগীদার নেই।

 
দুবনা, ১১ আগস্ট ২০২০     

 

 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি