পরিচয়

- বিজন, আমি পিওতর নমোকনোভ।
বলে হাত ধরে ঝাকাতে লাগল আমার চেয়ে এক মাথা লম্বা এক ভদ্রলোক। আমি অনেকটা যান্ত্রিক ভাবেই উত্তর দিলাম
- বিজন।
- আমি জানি। আমরা ফেসবুক বন্ধু।
- ও আচ্ছা।
- আমি তোমার ছবির ফ্যান। খুব ভাল লাগে তোমার ছবি।
- ধন্যবাদ।
আসলে আমি এতটাই অপ্রস্তুত হয়ে গেছি যে কি বলব তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

আমাদের দেখা ভিসোতস্কি ক্যাফেতে। ওখানে গেছি বন্ধুদের সাথে ইউরি তুমানভকে স্মরণ করতে।

ইউরি তুমানভ জেআইএনআর মানে আমি যে ইনস্টিটিউটে কাজ করি তার নিজস্ব ফটোগ্রাফার। ছিলেন ২০১৪ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত। আজ তাঁর ৯০ বছর পূর্ণ হল। সেই উপলক্ষ্যেই বেশ কিছুদিন হয় আমাদের স্থানীয় কালচারাল সেন্টারে তাঁর ছবির প্রদর্শনী হচ্ছে। তাঁর ছবি মানে আমাদের ইনস্টিটিউটের ইতিহাস, একই সাথে দুবনার ইতিহাস। অনেক দিন যাই যাই করেও যাওয়া হয়নি। আজ তাই ভাবলাম যাই প্রদর্শনী দেখতে। ওখানেই বন্ধুদের সাথে (এরা সবাই ফটোগ্রাফার, কোন না কোন সময় তুমানভের সাথে জড়িত ছিলেন) দেখা। আসলে দুবনার প্রায় সব ফটোগ্রাফার, অন্তত যাদের বয়স ৪০ পার হয়েছে, কোন না কোন ভাবে তুমানভের সাথে জড়িত। আমি নিজেও বিভিন্ন সময়ে তাঁর উপদেশের জন্য গেছি। যদিও ১৯৯৪ সালে দুবনায় আসার পরেই এক বন্ধু আমাকে বলেছে তাঁর সাথে আলাপ করতে, ২০০৫ এর আগে সেটা হয়ে ওঠেনি। এরপর মাঝে মধ্যেই তাঁর ল্যাবরেটরিতে জেতাম ফটগ্রাফির উপর কথা বলতে। আমার কিছু কিছু ছবি পছন্দ করতেন। আমাদের বসার উদ্দেশ্য এ উপলক্ষ্যে একসাথে কিছুটা সময় কাটানো, তাঁকে স্মরণ করা। আজ আমরা বসেছিলাম ক্লাবের বাইরের বিভিন্ন জন। ভেরার সাথে দেখা হল। আমার প্রফাইলে যে ছবিটা, সেটা ওর তলা ২০০৭ সালে। বলল সময় করে যেতে। ছবি তুলে দেবে। তানিয়া অনেক আগে ওর জ্যান্ত টুপি নামে ম্যাগাজিনের জন্য ইন্টারভিউ নিয়েছিল। ছিল আলেগ সেনভ - এখন মূলত ভিডিও করে। অব্রাজ থেকে ছিল আলেগ আর ইগর। ইম্ফরমাল পরিবেশে যার যা খুশি খাওয়া আর কথা বলা। বেশ ভালোই কাটল সময়। মনে করলাম পাশা আর ইগরকে। ওরাও এখন স্বর্গের ফটোগ্রাফার। বললাম ওদের স্মরণ করেও বসা দরকার।

যখন আড্ডা শেষ আরেক ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন।
- সেরগেই, আমিও তোমার ফেসবুক বন্ধু। তোমার ছবি খুব ভাল লাগে।
- তাই?
- হুম!

একদিনে দুই দুইজন ফেসবুক বন্ধুর দেখা পেলাম। আর মনে মনে ভাবলাম "ফেসবুক যখন অমাবস্যার চাঁদ হয়ে যাচ্ছে তখনই এদের দেখা পেলাম।'

পিওতর বলেছিল কীভাবে এই বাধা এড়ানো যায়। আমিও ভাবলাম
প্রতিটি ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে, অন্তত নিউটনের তৃতীয় সুত্র তো তাই বলে। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে তা হবে না কেন। উত্তর পেয়ে গেলাম। আশা করি ফেসবুক থেকে একেবারে বিদায় নিতে হবে না, যদিও মোবাইল থেকে এখনও ধুক্তে পারছি না। বলছে কোড পাঠিয়েছে। কোথায়? আকাশের ঠিকানায় নয়তো!

দুবনা, ২৬ মার্চ ২০২২ 
 
 


 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা