SAAB নির্বাচন ও কিছু কথা

সোভিয়েত অলুম্নাই এসোসিয়েসন, বাংলাদেশ (SAAB)এর সাধারণ নির্বাচন আগামী ১লা এপ্রিল। যদিও সাব এর সাথে সরাসরি জড়িত নই, তবুও একজন সোভিয়েত অলুম্নাই হিসেবে এর দৈনন্দিন জীবন আমাকে নাড়া করে, এফ বি তে এর খবর দেখে মনে মনে হলেও বন্ধুদের পাশে গিয়ে দাড়াই, উপভোগ করার চেষ্টা করি ওই সব মুহূর্তগুলো। আমি সোভিয়েত ইউনিয়নে আসি ১৯৮৩ তে - শুরু থেকেই ছিলাম মস্কোর গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে - তাই এখনকার সাব এর অনেকের সাথেই সরাসরি পরিচিত। বাংলাদেশ থেকে প্রথম ছাত্ররা রাশিয়া আসে ১৯৭২ সালে, তাই ধরে নেয়া যেতে পারে প্রথম অলুম্নাই দেশে ফিরেছিলেন ১৯৭৮ বা ১৯৭৯ সালে। তখন দেশে চলছে ভিন্ন হওয়া। যে উদ্দেশ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশী তরুনদের সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঠিয়েছিলেন, দেশ চলছে তখন তার উল্টো স্রোতে। তাই আমার আসার আগে মানে ১৯৮৩ আগে SAAB এর নাম শুনিনি - যদিও বাম রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার ফলে শোনার কথাটাই ছিল স্বাভাবিক। তবে তখনই বেশ কিছু সোভিয়েত ফেরত বিশেষজ্ঞদের জানার সৌভাগ্য হযেছিল, ওনারা ছিলেন সবাই মানিকগঞ্জ এলাকার। দেশের রাজনৈতিক কারণেই ওনারা তখন লাইম লাইটে ছিলেন না। তবে ১৯৮৪ -১৯৮৫ র দিকে যখন একদল বিশেষজ্ঞ তাদের Ph.D. শেষ করে দেশে ফেরেন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযোগ পান তখন গর্বে আমাদের বুক ফুলে উঠত। তার পর আসে অর্থনীতিবিদদের যুগ। এখন আমাদের বন্ধুরা শুধু এসব ক্ষেত্রেই নন, বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে বিশাল বিশাল পদে নিয়োজিত আছেন, আমাদের ডাক্তার বন্ধুরা খুব ই সম্মানের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়। সেদিক থেকে চিন্তা করলে SAAB এর কাজকর্ম যেমন পিকনিক, ৮ ই মার্চ বা কখনো সখনো ডিগ্রির মুল্যাযনের মধ্যে জন্য কিছু কাজ কর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ দেখি - একটু হলেও হতাশ হই। কেননা, বিরাট সংখ্যক উচ্চশিক্ষিত ও কর্মজীবনে সফল মানুষের সংগঠনের বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে যে প্রভাব থাকার কথা ছিল, সেটা আমি লক্ষ্য করিনি। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই প্রভাব তৈরী করতে না পারলে সোভিয়েত অলুম্নাইদের ব্যক্তিগত যেমন ডিগ্রির সঠিক মূল্যায়ন, চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য, নব্য প্রত্যাগত অলুম্নাইদের চাকরির ক্ষেত্রে সহযোগিতা - এসব করা সম্ভব না। আমার গত ২০১১ ও ২০১৪ তে SAAB সাথে সংক্ষিপ্ত যোগাযোগ থেকে বলতে পারি মনোভাবের (attitude) মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। আর সে পরিবর্তন আনতে পারে নতুন লোক, যারা চাকরি ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর সাথে জড়িত নন, কেননা আমলারা অনেকটাই conservative, তাদের পক্ষে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।এজন্যে দরকার এমন লোক যিনি প্রতিবাদ করতে, রিস্ক নিতে ভয় পান না, একই সাথে যার শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থানের কারণে যার প্রতি আছে আমাদের গভীর আস্থা। এরকম যোগ্য লোকের অভাব SAAB এ কখনই ছিলা না। তবে বর্তমান যে কয়জন SAAB সভাপতি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দিতা করছেন - আমার বিচারে যে লোকটি অন্যদের ছাড়িয়ে যান - তিনি অধ্যাপক আবুল বারকাত। উনি শুধু একজন নামকরা অর্থনীতিবিদই নন, একজন সমাজ সেবক, যিনি গবেষনার জন্যে বাংলাদেশের জনমানুষের সাথে মিলেমিশে গেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে তার বিশ্লেষণমূলক গবেষণা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে স্বাধীনতার চিন্তা ধারণকারী রাজনৈতিক অঙ্গনে উনি এক পরিচিত নাম। এসব দিক বিবেচনায় আনলে SAAB এর সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক আবুল বারকাত নিজে যতটা না লাভবান হবেন, তার চেয়ে বেশি লাভবান হবে SAAB আর সোভিয়েত অলুম্নাইগণ। এটা শুধু SAAB এর মর্যাদাই বৃদ্ধি করবে না, SAAB এর সামনে যে সব অমীমাংসিত সমস্যা রয়ে গেছে তার সমাধানও ত্বরান্বিত করবে। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়ন এখন ইতিহাস, এই সোভিয়েত দেশে বঙ্গবন্ধু আমাদের ছেলেদের পাঠিয়েছিলেন এদেশ থেকে শিক্ষা লাভ করে বাংলাদেশে এক গণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা ও অর্থনীতি গড়ে তুলতে সাহায্য করার জন্য। এদিক থেকে দেখলেও অধ্যাপক আবুল বারকাত সব থেকে যোগ্য প্রার্থী। আর এসব কারণে ব্যক্তিগত ভাবে না চিনলেও ওনাকে সমর্থন করতে বা ওনার হয়ে ভোট চাইতে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। তবে সাথে সাথে কিছু কথা তো থেকেই যায়। SAAB এর এক নম্বর উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক যোগসূত্র এবং ভাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক বজায় রাখা। বার্ষিক পিকনিক বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে সেটা মোটামুটি সফল ভাবেই করা হচ্ছে। তবে ডিগ্রির মুল্যাযনের ব্যাপারে এখনও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। জাতি গঠনমূলক ও জনকল্যানকর কার্য্যক্রমে ভুমিকা রাখা। আমার জানামতে আমাদের বন্ধুরা বিশেষ করে ডাক্তাররা ব্যক্তিগতভাবে অনেক সমাজসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। মনে হয় সময় এসেছে SAAB এর উদ্যোগে বছরে দুএকটা চিকিত্সা ক্যাম্প করার। তাতে করে SAAB তথা সোভিয়েত বিশেষজ্ঞদের সম্মান গণমানুষের কাছে বাড়বে বই কমবে না। বাংলাদেশের বাইরেও আমাদের বন্ধুরা বিভিন্ন দেশে সফলভাবে কাজ করছেন। যদিও SAAB এর পিকনিকে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, আমার মনে হয় SAAB আযোজিত কোনো সেমিনার বা ওয়ার্কশপে তাদর ডাকা হত সেটাও বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশের সোভিয়েত আলুম্নাইদের মধ্যে যোগাযোগ আরো দৃঢ় করত। আর সেটা করার জন্য যা দরকার, তা হলো SAAB এর তত্ববধানে মাঝে মাঝে এরকম সেমিনারের আয়োজন করা। যেহেতু আমাদের মধ্যে অনেক নামকরা অর্থনীতিবিদ আছেন, শুরুটা কোন এক অর্থনৈতিক সেমিনার দিয়েই শুরু হতে পারত।আসল কথা হলো SAAB কে বাংলাদেশের জনজীবনে আরো বেশি কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সেটা দেশের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ভেবে দেখতে হবে। আরেকটা ব্যাপার। SAAB এর সদস্য শুধুই সোভিয়েত বা সি এই এস (CIS) ফেরত বিশেষজ্ঞ। তাই যাতে প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে এসব দেশে মেধাবী ছেলেমেয়েরা পড়তে আসেন তার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে - আর এটা করা যাবে বাংলাদেশে রাশিয়ার দুতাবাসের সাথে যৌথ ভাবে বিভিন্ন প্রচারমূলক কাজ করে। তবে তার চেয়েও যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো এসব দেশে থেকে বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা যাতে চাকরি পায় তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া। অন্যথায় ১০-১৫-২০ বছর পরে SAAB এর ভিটেয় বাতি জ্বালানোর কেউ থাকবে না। তাই আমার মনে হয় SAAB এর সভাপতি যেই হোকনা কেন তাকে নতুন করে SAAB এর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হবে। রাশিয়ার সাথে বর্তমানে রূপপুর আনবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মান চুক্তি SAAB এর নতুন কমিটির পদকে শুধু লোভনিযই করে তোলে নি, করে তুলেছে দেশ ও জাতির জীবনে অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এসব পদে সত ও নিষ্ঠেবান লোকের কোনো বিকল্প নেই।

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি