SAAB এর নির্বাচন এবং



দুদিন আগে SAAB এর নির্বাচন নিয়ে একটা নোট লিখেছিলাম, যেখানে SAAB এর কাজকর্ম নিয়ে আমার চিন্তা ভাবনা আর স্বপ্নের কথা লিখেছিলাম| লিখেছিলাম বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে SAAB এর অবস্থান কি হতে পারে সে কথা| যদিও লেখাটা আমার, অনেকের সাথে কথা বলে জেনেছি SAAB  নিয়ে অনেকেই এমনটাই ভাবে, তাই বলা যায় ওটা ছিলো একটা কালেক্টিভ ভাবনা| আর যেহেতু লেখাটা নির্বচনকে সামনে রেখে, তাই স্বাভাবিকভাবেই এসেছিলো কি ধরনের নেতৃত্ব SAAB কে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সে কথা| ওই দিনকার প্রার্থী তালিকায় যে নামগুলো ছিলো, তাতে আমার মতে অধ্যাপক আবুল বারকাত ছিলেন যোগ্যতম, তাই তার নামটাও এসেছিলো ওখানে| পরে দেখলাম উনি প্রতিদ্বন্দিতা থেকে সরে দাড়িয়েছেন| এটা অবশ্য তার অধিকার, চাইলে উনি দাড়াতেও পারেন আবার সরে দাড়াতেও পারেন| এ ব্যাপারে মোকসেদুল হামিদ লিখেছিলেন, “শ্রদ্ধেয় আবুল বারকাত ভাই নিজেকে প্রমূল্যায়ন না করে বন্ধুদের অনুরোধে নিজের অঙ্গিকারে অটল থাকতে পারেন নি। তাঁর সম্পর্কে আমার মত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মানুষের মন্তব্য করা সমীচীন নয়। তবুও আমি নিরাশাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আশাবাদী হয়ে থাকতে চাই।” কথাটা ঠিক, তবে আমরা যারা বিজ্ঞ নই তাদেরও তো কিছু বলার বা লেখার স্বাধীনতা আছে| আমরা পদার্থবিদরা এখানে যখন কোনো প্রসঙ্গে আলোচনা করি, কোনো ব্যাপারে যখন একমত হতে না পারি, আমি প্রায়ই বলি, “Мы каждый понимаем реальность по мере своей глупости” তাই  অধ্যাপক আবুল বারকাতের সিধান্ত আমি আমার অজ্ঞতা দিয়েই বুঝি, তবে আমার মতো করে| আর তা হলো, উনি আমাদের অনেককে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, আবার নিজেই সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলেন| আমি তাকে uncompromising  বলে মনে করতাম, এখন দেখলাম, উনিও compromise  করেন| এতে ভালো বা মন্দের কিছু নেই – তবে ক্ষেত্র বিশেষে বেদনাদায়ক – এই যা| তবে অধ্যাপক আবুল বারকাতকে আমি দেখিনি, কোনভাবে কোনো যোগাযোগ নেই, তাই এখানে তার সমালোচনা করা বোকামি না হলেও বুদ্ধিমানের পরিচয় না| তাই আমি একটু অন্য ব্যাপারে বলতে চাই – কেননা সব সময় সব কথা বলা যায় না|
তার আগে একটা গল্প বলে নেই| ১৯৮৩ তে মস্কো আসার পর থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত আমি আমাদের ছাত্র সংগঠনে সক্রিয় ছিলাম, তার পর কিছু ব্যক্তিগত কারণে নিজেকে গুটিয়ে নেই| ১৯৯৪ তে দুবনা যাবার পর থেকে ২০০৯ পর্যন্ত মস্কোর বাঙ্গালী সমাজের সাথে যোগাযোগ ছিলো না বলেই চলে, তবে ২০০৯ এ যখন আবার মস্কো যাতায়াত শুরু হয় আর কয়েক জন বন্ধু কোনো সংগঠন করা যায় কিনা জিগ্যেস করে আমি নির্দ্বিধায় তাদের এগিয়ে যেতে বলি| ২০১০ এ আমরা বাংলাদেশ প্রবাসী পরিষদ, রাশিয়া গঠন করি, যা ধীরে ধীরে হলেও সামনের দিকে চলছে| তবে এটা শুরু হয় ২০১০ এ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের মধ্য দিয়ে| বাংলাদেশ প্রবাসী পরিষদ, রাশিয়া গঠনের পরে Ex-BSU র প্রয়োজন না থাকলেও  আমরা আরো কয়েক বছর ওই প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করি| স্বল্প পরিসরে, কোনো রকম সাংগঠনিক ফর্মালিটি এড়িয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলার জন্য ওটা ছিলো খুবই ফলপ্রসু ইউনিট| ওখানে আমি আর অমল মূলত কাজ করতাম| এক সময় অমল বললো, “আমরা আর কতদিন ক্ষমতায় থাকবো, চলেন, অন্য কারো উপর দ্বায়িত্ব দেই|” “এটা কি ক্ষমতা? এটা কিছু কাজ করার জন্য একটু অধিকার| যাকগে, যদি মনে করো, দেখো কাউকে বলে|” দ্বায়িত্ব দেয়া হলো, তবে এর পর থেকে সেই লোক আর কোনো দিন আমাদের ডাকেনি, ফারুক ভাই মারা গেলেন, আমরা একটা সভা করতে পারলাম না, কেননা, ওই লোক না ডাকলে তো কিছু করা যায় না, আবার অন্য কাউকে দ্বায়িত্ব  দেবার জন্য জন্যে যে সভা ডাকা, তাও তাকেই ডাকতে হবে, নইলে প্রশ্ন আসতে পারে, অন্যেরা কোন অধিকারে সভা ডাকছে| এটাকে বলে патовая ситуация.
না, কাউকে সমালোচনা করার জন্য গল্পটা করা না| আসলে আমরা অনেকেই বলি, কাজ করবো, কিন্তু দ্বায়িত্ব নিতে পারবো না| আমি ছাত্র জীবনেও এমন দেখেছি| তবে ওই সময় একটা high command  ছিলো, কারো হাতে দ্বায়িত্ব দিলেও সবাই মিলে করা যেত| তবে সব সময়ই যে সেটা থাকবে তার মানে নেই, আর এতে করে অনেক সময়ই ইচ্ছে থাকা সত্বেও কিছু করা যায় না| তারপর, যারা সক্রিয় এবং সংগঠন নিয়ে ভাবেন, তাদের সংগঠনের মূল দ্বায়িত্বে না গেলেও সহ-সভাপতি, সদস্য এসব পদে গিয়ে নিজেদের চিন্তা ভাবনাগুলো বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করা দরকার বলে আমি মনে করি| সবাই কথা বলে না, সবাই কথা বলতেও পারে না, আবার সবার কথা সবাই ততটা গুরুত্ব দিয়ে শোনেও না| এসব দিক চিন্তা করেও আমার মনে হয় আরো অনেকেই, যাদের আমি SAAB এর বিভিন্ন কাজে সক্রিয় দেখেছি, কার্যকরী কমিটিতে আসার চেষ্টা করতে পারতেন| সংগঠন – এটা গ্রামে পুল দেয়া নয় বা রাস্তা ঠিক করা নয়, যে চাইলেই পাচ জনকে ডাক দিয়ে করালম| সংগঠন – এটা জটিল প্রক্রিয়া যা কিছু নির্দিষ্ট আইন-কানুনের মধ্যে চলে, চলে কিছু নীতি আর কৌশলের মধ্য দিয়ে, যেটা ঠিক করা হয় এই সব সভায়| তাই আমার বিশ্বাস আমরা যদি SAAB কে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে প্রভাব রাখতে পারে এমন একটি সংগঠনে পরিণত করতে চাই, তাহলে আমাদের অনেককেই “আমরাতো আছিই, শুধু পদটা নিতে পারছি না” এই মনোভাব ত্যাগ করতে হবে|             

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি