ঈদের শুভেচ্ছা

প্রতি বছরের মতো আবারো ঈদ এলো - খুশির ঈদ। বাঁকা চাঁদ হাঁসি ঠোঁটে ফিরে এলো ঈদ ....

১ জুলাই ২০১৬ একটা স্ট্যাটাস লিখেছিলাম,

----------------------------
ধর্মনিরপেক্ষ হত্যা

"...ঝিনাইদহে আবারও মন্দিরের সেবায়েত হত্যা, একই কায়দায়। এটা কি সাম্প্রদায়িক হত্যা?" - প্রশ্নটা ছিল লিপির।

কি যে বলো। অসাম্প্রদায়িক আর ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা আসবে কোত্থেকে? এটা স্বাভাবিক মৃত্যু, সাধারণ মৃত্যু সাধারণ এক সেবায়েতের। সাধারণ মানুষ অসাধারণ ভাবে মরে না, ওরা মরে বেঘোরে। আর দশটা মৃত্যুর মতো এটাও বেঘোরে মৃত্যু - স্রেফ একটা বিচ্ছিন্ন মৃত্যু।এদেশে ধর্ম যার যার মৃত্যু সবার।
অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ মৃত্যু।
----------------------------

জানিনা তখন থেকেই মনটা কেমন যেন করছিলো। একদিকে মনে পড়ছিলো সেই ফেলে আসা দিনগুলোর কথা, যখন ঈদের অপেক্ষায় থেকে মন ভরে যেত আনন্দে, অন্যদিকে এবার একের পর এক মানুষ কোরবানি দেখে এক এক ধরণের ভয় আর বিষন্নতায় ভারাক্রান্ত লাগছিলো নিজেকে। হ্যা, রক্তের হোলি খেলে ওরা নিজেদের ঈদকে কতটুকু রঞ্জিত করলো জানি না, তবে অনেকের মুখের হাঁসি  যে কেড়ে নিলো তাতে সন্দেহ নেই।

স্কুলে পড়ার সময় সত্যই  খুব অপেক্ষা করে থাকতাম এই দিনটির জন্য। ব্যক্তিগত ভাবে এটা যতটা না ঈদের জন্য - তার চেয়ে বেশি আনুষঙ্গিক অনেক কিছুর জন্য। এর আগে চলতো একটানা একমাস রোজার ছুটি। বিকেলে ফুটবল খেলার শেষে বন্ধুদের নিয়ে পেঁয়াজো  আর মুড়ি দিয়ে ইফতার খাওয়া। তখন সাধারণ গ্রামের সাধারণ মানুষ অতি সাধারণ ভাবেই ইফতারি করতো। তবে আরো যে কারণটা ছিল তা হলো স্কুল বন্ধ থাকায় আমার দিন কাটতো বেশ এক ঘেয়েমিতে। আমার কোনো কাজ ছিল না বাড়িতে - শুধু পড়া আর পড়া। স্কুলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা হতো, গল্প হতো, রোজার ছুটিতে সবাই কাজে ব্যস্ত - মানে বাবা-মাকে বাড়ির কাজে সাহায্য করতে। তাই ছুটির কয়েক দিনের মাথায়ই আমি হাপিয়ে উঠতাম ছুটি কাটিয়ে। তাছাড়া ঈদের দিনে আমাদের মুসলিম বন্ধুরা নির্ভয়ে মার্বেল, চারা  বা এই জাতীয় অনেক খেলা খেলতে পারতো। সেদিক থেকেও ঈদের দিনটা ছিল লোভনীয়। তা ছাড়া এই দিন বাড়ীর  কাজের লোকেরাও নতুন পোশাক পেতো। আমার  ছোট বেলার একটা বিশাল অংশ যেহেতু বদু ভাই, হজরত ভাই আর আর জনা ১৫ লোক যারা আমাদের জমিজমা চাষ করতো আর সুতা রং করতো, ওদের কোলে-পিঠেই কাটতো, তাই ওদের এই খুশিতে নিজেও খুশিতে ভরে উঠতাম। ধর্মের গন্ডি ছেড়ে ঈদ হয়ে উঠতো এক সার্বজনীন উৎসব।

তবে এ সবই অনেক আগে, বাংলার মানুষ যখন বাঙালী ছিল, মাথার উপর ছিল নীলাকাশ - যখন সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা বাংলার কোমল মন আরবের মরু সংস্কৃতির রুক্ষতায় ঢাকা পরে নি, পেট্রো ডলারের স্রোতে মারা যায়নি পদ্মার রূপোলি  ইলিশ। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই পরমত সহিষ্ণুতা  হয় কারাবন্দী  নয়তো নির্বাসিত হয়েছে আমাদের দেশ থেকে। কোরবানীর বাজারে দেশী গরু-ছাগলের জায়গা যেমন আজকাল বিদেশি উটেরা দখল করেছে, এবার ঈদের প্রাক্কালে বলী হবার  একচ্ছত্র অধিকারটা তেমনি স্থানীয় ধর্মীয় সংখ্যালঘু, মুক্তমনা ব্লগাররা হারিয়েছে বিদেশি জিম্মিদের কাছে। মালয়েশিয়া থেকে শুরু করে ঢাকা, মদিনা হয়ে খোদ আমেরিকা পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোতে ঈদ খুশির বদলে হয়ে উঠছে কান্নার উৎসব - কান্না ভেজা খুশীর উৎসব।

যারা ঈদকে আর ইসলামকে জিম্মি করে রেখেছে নিজেদের ইহজাগতিক রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক স্বার্থের কারায় - ওরা এটাই চায়।

আমাদের উত্তর শুধু একটাই - আগের মতোই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঈদকে সবার উৎসব করা - ঈদে সবার মুখে হাঁসি  ফোটানো।

ঈদের শুভেচ্ছা সবাইকে।

দুবনা, ০৬ জুলাই, ২০১৬

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি