মন্ত্রী হওয়ার মন্ত্র

কথা হচ্ছিল এক বন্ধুর সাথে। ব্যবসায়ী। রাজনীতি নিয়ে ভাবে।
- এম পি হওয়া তো শেষ হল। এখন মন্ত্রী হওয়ার পালা। কোন রেসিপি আছে নাকি আপনার কাছে?
- দেখুন, আমি আমার ছাত্রদের সবসময়ই বলি ভালো করে পড়াশুনা করতে আর ভালো বিশেষজ্ঞ হতে। ভালো বিশেষজ্ঞ হলে চাকরি নিজে এসে ডেকে নিয়ে যাবে। মন্ত্রী মানে তো মন্ত্রণা যিনি দেন, মানে বুদ্ধি, উপদেশ এসব। আর উপদেশ দিতে হলে আগে তো সে ব্যাপারটা জানতে হবে। এ জন্যেই দরকার বিশেষজ্ঞ হওয়ার।
- সেটা বুঝলাম, কিন্তু আমাদের দেশে তো বিশেষজ্ঞরা এম পি হয় না। যারা এম পি হয়, বিশেষজ্ঞ হোক না হোক, মন্ত্রীতো তাদের থেকেই করতে হবে। সেক্ষেত্রে?
- সেক্ষেত্রে আমাদের খেলার নিয়ম বদলাতে হবে। বলতে হবে যিনি মন্ত্রণা দেন তিনি নন, যিনি মন্ত্র পাঠ করেন তিনিই মন্ত্রী। আর এদের মন্ত্র শেখাতে হবে।
- তা যা বলেছেন। কিন্তু মন্ত্রটা কী, একটু বলে দেবেন?
- আপনি ব্যবসায়ী মানুষ। খুব ভালো ভাবেই জানেন সাপ্লাইয়ের চেয়ে চাহিদা বেশি হলে কি হয়। মন্ত্রীর পদ তো মাত্র কয়েকটা, আর সেটা চাইছে শত শত এম পি। তাই আমি মন্ত্র বললেই যে কাজে লাগবে তা কিন্তু নয়।
- তবুও বলেন। যদি কাজে লেগেই যায়?
- আপনি তো দেখছি নাছোড়বান্দা। দেখুন, মন্ত্র হল এক ধরণের স্তাবকতা। এর মূল কথা হল নিজেকে যথা সম্ভব ছোট  আর যাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন তাকে যত বেশি সম্ভব বড় করে দেখান। এটা মনে রেখে শুরু করতে পারেন। সুবিধার জন্য আমি একটা কাঠামো তৈরি করে দিতে পারি, অনেকটা স্কুলে ছুটির দরখাস্তের মত। দরকারে বাড়ানো কমানো যাবে, দরকারে দেশের নাম, যাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন তাঁর নাম, ধাম পরিবর্তন করা যাবে। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে বর্তমানে এটা এমন হতে পারে

হে বঙ্গজননী, হে গণতন্ত্রের মানস কন্যা
তোমাকে অভিবাদন
তুমি দেশকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে এসেছ    
তুমি দেশকে রাজাকার মুক্ত করেছ
তোমাকে অভিবাদন
হে বঙ্গবন্ধু কন্যা, তুমি দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করেছ
তোমাকে অভিবাদন
হে জননেত্রী, একমাত্র তোমার আশীর্বাদেই আজ আমি এম পি
তোমার অশেষ কৃপায় আমি জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি
তোমাকে অভিবাদন
হে বঙ্গমাতা, তুমি করুণাময়ী, আমাদের মত অভাগাদের একমাত্র আশ্রয়দাত্রী
তুমি আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন গ্রহণ কর
আমাকে মন্ত্রী বানিয়ে তোমার এবং দেশ ও দশের খেদমত করার সুযোগ দাও।

বাংলায় বিশেষণের শেষ নেই। এরপর ইচ্ছেমত লাইন জুড়ে সুর করে পড়লেই হবে।
কি চলবে?
চলবে না মানে? আমিও এবার সুর করে পড়ব

ব্যবসা আমায় বুদ্ধি দিলো এম পি হতে ভাইরে
মন্ত্রী হওয়ার মন্ত্র আমি দাদার কাছে পাই রে......

হা হা হা হা
হা হা হা হা
এখন কল্পনা করুন পার্লামেন্ট ভবনের আশেপাশে সব এম পি রা আজ উচ্চস্বরে এই মন্ত্র পড়ে বেড়াচ্ছে
হা হা হা হা
হা হা হা হা
দুবনা, ০৬ জানুয়ারি ২০১৯
  




Comments

Popular posts from this blog

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

পরিমল

প্রশ্ন