এস ইঁদুর মারি
মধ্যরাত। বউয়ের কনুইয়ের ধাক্কা
- এই, শুনছ?
না, ঘুমোই নি। আমি অনেক রাতে ঘুমোই। কি যেন পড়ছিলাম, তাই ঐ ধাক্কা।
- কি হল আবার?
- ইঁদুর!
- ইঁদুর! কোথায়?
- ঐ তো শব্দ করছে। তুমি শুনতে পাচ্ছ না?
- ওটা তোমার কুকুরদের কাজ।
- কুকুররা তো তোমার পায়ের কাছে ঘুমোচ্ছে। এগুলো ইঁদুরের শব্দ।
- তাতে কি? ওরা তোমার কী ক্ষতি করল?
- আমার ভয় লাগছে।
এই এক আশ্চর্য
ব্যাপার। বিশেষ করে মেয়েদের সাথে এটা বেশি ঘটে। কুকুর, বিড়াল, বাঘ, ভাল্লুক, হাতি, ঘোড়া – এসবে ভয় পাবে
না, অথচ মাছি, মৌমাছি, তেলেপোকা, ইঁদুর, টিকটিকি
– এসব দেখলেই বাড়ি মাথায় তুলবে। জীব জগতের কোয়ান্টাম প্রানীদের প্রতি এদের
কেন যে এই বিরূপ মনোভাব সেটা কিছুতেই বুঝতে পারি না।
এভাবে কাটল কয়েকদিন। এরমধ্যে বউ আমার যন্ত্রপাতি মানে স্ক্রু ড্রাইভার, সল্ডারিং আয়রন, হাতুড়ী – এসবের মধ্য দুটো মৃত ইদুরের বাচ্চা আবিষ্কার করল। এ দেশে সারস পাখিরা নাকি শিশুদের নিয়ে আসে বাবা মার জন্য। ইঁদুরের বাচ্চা কে আনে সেটা জানা নেই। এ নিয়ে আর মাথা ঘামালাম না। তবে ঘরে যে ইঁদুর আছে সেটা না বিশ্বাস করার কোন উপায় রইল না।
দু’ দিন পর বউ রান্নাঘরের টেবিলে ইঁদুর তার উপস্থিতির যে অকাট্য প্রমাণ রেখে গেছে সেটা দেখিয়ে আরেক হাত নিল। আমি নিশ্চুপ। এরপর বউ মস্কো গেলে বাথরুমে দেখলাম এই ইঁদুর হাত পা নেড়ে কি সব বক্তৃতা ঝাড়ছে। আমাকেই দেখেই দৌড়। নিজের চোখকে তো আর অবিশ্বাস করা যায় না। তবে ব্যাপারটা চেপে গেলাম। জানি বউ জানলে বাড়ি মাথায় তুলবে। যতক্ষণ না বাথরুম থেকে ইঁদুর তাড়াচ্ছি শান্ত হবে না।
এভাবে কাটল কয়েকদিন। এরমধ্যে বউ আমার যন্ত্রপাতি মানে স্ক্রু ড্রাইভার, সল্ডারিং আয়রন, হাতুড়ী – এসবের মধ্য দুটো মৃত ইদুরের বাচ্চা আবিষ্কার করল। এ দেশে সারস পাখিরা নাকি শিশুদের নিয়ে আসে বাবা মার জন্য। ইঁদুরের বাচ্চা কে আনে সেটা জানা নেই। এ নিয়ে আর মাথা ঘামালাম না। তবে ঘরে যে ইঁদুর আছে সেটা না বিশ্বাস করার কোন উপায় রইল না।
দু’ দিন পর বউ রান্নাঘরের টেবিলে ইঁদুর তার উপস্থিতির যে অকাট্য প্রমাণ রেখে গেছে সেটা দেখিয়ে আরেক হাত নিল। আমি নিশ্চুপ। এরপর বউ মস্কো গেলে বাথরুমে দেখলাম এই ইঁদুর হাত পা নেড়ে কি সব বক্তৃতা ঝাড়ছে। আমাকেই দেখেই দৌড়। নিজের চোখকে তো আর অবিশ্বাস করা যায় না। তবে ব্যাপারটা চেপে গেলাম। জানি বউ জানলে বাড়ি মাথায় তুলবে। যতক্ষণ না বাথরুম থেকে ইঁদুর তাড়াচ্ছি শান্ত হবে না।
অফিস যাব
বলে রেডি হচ্ছি, ওদিকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে গেছে। বউ বাইরে থেকে বাথরুম বন্ধ করে
বলছে
- ইঁদুর! ইঁদুর!
- কোথায়?
- বাথরুমে।
হ্যাঁ। সত্যিই
তো। কি আর করা, হাতের কাছে লাঠি না পেয়ে ঘর মোছার ব্রাশ দিয়ে ওকে পরলোকে পাঠিয়ে দিলাম।
ব্রাশটা ধুতে গেছি, বউ বাগড়া দিল।
- ফেলে দাও।
- মাথা খারাপ। এক হাজার রুবল দিয়ে মাত্র কিছু দিন আগে কিনলাম।
- তাহলে ব্যালকনিতে রেখে দাও।
কি আর করা?
আদেশ শিরোধার্য। এরপর বউ নেটে বসলো বিড়ালের খোঁজে।
- নতুন বিড়ালের কি দরকার। মস্কো থেকে কতিয়া বা রিসকে নিয়ে এলেই
হয়। (কতিয়া মনিকার আর রিস ক্রিস্টিনার বিড়াল)
- তোমার মাথা খারাপ। ওরা বিড়াল ধরবে? ওরা কি মানুষ না নাকি?
- তাহলে চল এক নির্বিষ সাপ কিনে আনি। ও ইঁদুরগুলো খেয়ে শেষ
করলে ফেরত দিয়ে আসব।
- ভীমরতি আর কাকে বলে?
- তাঁর মানে ইঁদুর তাড়ানোর মত নিম্নমানের কোন কাজে বিড়াল, ঘর
মোছার ব্রাশ এসবও দেখছি আমার চেয়ে দামি।
যা হক। এভাবে
বসে থাকলে তো হবে না। বৃহস্পতিবার ক্লাবে বন্ধুদের বললাম। একেক জন একেক প্রস্তাব দিল।
আমি সহজ পথটা বেছে নিলাম। ফেরার পথে দোকান থেকে ১৫০ রুবল খরচ করে তেল কিনে আনলাম। ওই
তেল জল ভরা বোতলে ঢালতে হবে। তেলের গন্ধে ইঁদুর এলে জলে ডুবে মরবে। ইঁদুর যদিও মরেনি,
আমি বেশ কিছু সিদ্ধান্তে এসেছি – “একমাত্র মানুষ, বিশেষ করে আমাদের রাজনীতিবিদগণই তৈলমর্দনে
বিশ্বাসী। অন্য কোন প্রাণী, বিশেষ করে ইঁদুর তেল মাখামাখি পছন্দ করে না।“
এরমধ্যে আমার
খাওয়া দাওয়া শিকেয় উঠলো। মানে রান্না করলেই মনে হয় ওখানে নিশ্চয়ই ইঁদুর নাক গলিয়েছে।
তাই তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারি না। তবে বলে না, ভালো বিনে মন্দ নেই। ইঁদুরের ভয়ে আমি রান্নার
সময় চুল্লী ছেড়ে যাইনা কোথাও। ফলে এখন আর কেউ আমাকে ফাঁকি দিতে পারে না। যাকে বলে নো
পোড়া পুড়ি। এভাবে চললে আমার চাল ডাল আমার প্রতি যে বিশ্বাস হারাবে তাতে সন্দেহ নেই।
পরের সপ্তাহে
বন্ধুদের বললাম যে ইঁদুররা তেলে মারা পছন্দ করে না। এলো নতুন বুদ্ধি। একজন বলল স্কেলের ডগায় পনীর রাখতে। ওটা থাকবে টেবিলের
উপর সুক্ষ ব্যালেঞ্চে। ইঁদুর পনীর খেতে এলে স্কেল পড়ে যাবে নিচে রাখা জলের বালতিতে।
হবে সলিল সমাধি। আরেকজন আমাকে বন্দুক দেওয়ার প্রস্তাব করল কাঠের গুলিসহ। আমার লাইসেন্স
নেই, তাছাড়া বন্দুক চালাতে জানি না। ওটা নিলে সাথে সৈনিক ভাড়া করতে হবে। তাই পথে ২০০
রুবলের পনীর কিনে ইঁদুরের মোচ্ছব করব বলে ঠিক করলাম। শত হলেও মানুষ। এমন কি ফাঁসির
আসামীকে মরার আগে ভালমন্দ খাওয়ায়। ওরা কী দোষ করল যে একটু ভালো পনীর পাবে না। সবই করা
হল। সকালে উঠে দেখি পনীর বালতির নিচে, স্কেল এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে জল থেকে মাথা বের
করে, ইঁদুর নেই। বউ বলল
- বালতি ছোট। স্কেল ডুবেনি, তাই ইঁদুর লাফিয়ে পালিয়ে গেছে।
পরের দিন
বালতির জায়গায় এলো গামলা। সকালে একই কাণ্ড। পনীর জলে হাবুডুবু খাচ্ছে আর স্কেল সাঁতার
কাটছে। ইঁদুর নেই। বউ বলল
- স্কেল তো নয়, ইঁদুরের ভেলা।
দোকানে গিয়ে
দু’ টো স্কেল কিনলাম – প্লাস্টিকের আর মেটালের। সারা রাত অপেক্ষা। সকালে দেখি পনীর
রয়ে গেছে। স্কেলও। ইঁদুর নেই। “ইঁদুরেরা ঘুষ খায় না। ওরা আর মানুষ হল না” – এটা আমার
নতুন পর্যবেক্ষণ। অফিসে বসে আছি, বউয়ের ফোন
- ইঁদুর মারার যন্ত্র কিনে এনো।
- কোথায় পাব সেটা?
- আমি কোত্থেকে জানি? তোমার ইঁদুর তুমিই ভাব।
এদিক ওদিক
জিজ্ঞেস করে পেয়ে গেলাম। আগে ছিল কাঠের, এখন প্লাস্টিকের। দেখতে ঠিক কম্পিউটারের মাউসের
মত। মনে মনে ভাবলাম, মরার আগে ডিজিটাল যুগের
সাথে একটু পরিচিত তো হবে। রাতে তিন তিনটে ইঁদুর ধরার মেশিন বসালাম। সকালে উঠতে ভয় লাগছিল।
আসলে কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিলাম না ওই ইদুরগুলো দিয়ে কি করব। ওদের মেশিন থেক ছাড়াতে গেলে
যদি কামড় দেয় বা পালিয়ে যায়। সারারাত কত যে বুদ্ধি ফেঁদেছি। সকালে বউ রিপোর্ট করল একটা
ইঁদুর ধরা পড়েছে। আমি যেন ওটা সরাই। আমি ঘাপটি মেরে শুয়ে আছি তো শুয়েই আছি। শেষ পর্যন্ত
উঠে ভাবলাম ওটাকে একটা বয়মের মধ্যে পাচার করব। বউ একটা প্যাকেট দিয়ে বলল সেখানে ফেলতে। তিনটে মেশিনের দুটোতে কোন ইঁদুর নেই। পনীরও নেই।
অন্যটাতে মরা ইঁদুর আর পনীর। সিদ্ধান্ত
“ঘুষখোররা প্রচণ্ড চালু, তা সে ইঁদুরই হোক আর মানুষই হোক। নেবে, কিন্তু সহজে ধরা পড়বে না। “ যে ইঁদুরটা বেঘোরে মরল, ও নিশ্চয়ই আমার মতই বোকা। না পারল খেতে, না পারল বাঁচতে।“
বউ অবশ্য আমার দোষ দিল। আমি নাকি ঠিক মত পনীর লাগাতে পারি না। নেটে ঢুকে ইঁদুর ধরার ফাঁদ তৈরির একগাদা ভিডিও বের করে দিল আর বলল আজ যেন ছালা মানে শুয়োরের চর্বি কিনে আনি ইঁদুরদের জন্য। এঁকেই বলে ইঁদুরের ভাগ্য।
“ঘুষখোররা প্রচণ্ড চালু, তা সে ইঁদুরই হোক আর মানুষই হোক। নেবে, কিন্তু সহজে ধরা পড়বে না। “ যে ইঁদুরটা বেঘোরে মরল, ও নিশ্চয়ই আমার মতই বোকা। না পারল খেতে, না পারল বাঁচতে।“
বউ অবশ্য আমার দোষ দিল। আমি নাকি ঠিক মত পনীর লাগাতে পারি না। নেটে ঢুকে ইঁদুর ধরার ফাঁদ তৈরির একগাদা ভিডিও বের করে দিল আর বলল আজ যেন ছালা মানে শুয়োরের চর্বি কিনে আনি ইঁদুরদের জন্য। এঁকেই বলে ইঁদুরের ভাগ্য।
দুবনা, ১৬
জানুয়ারি ২০১৯
Comments
Post a Comment