জ্ঞানের আঁধারে


কিরে দোস্ত, কেমন আছিস?
আমার কাজই ভালো থাকা। তুই কেমন আছিস?

আমি
মাঝে মধ্যেই দেশ বিদেশের বন্ধুদের কাছ থেকে এমন কল পাই। নিজে থেকে খুব একটা কল করা হয়না কাউকে। আসলে  ফোন করার অভ্যেস আমার কখনোই তেমন ছিল না। ছাত্রজীবনে অনেক চিঠি লিখতাম, লিখতাম চিরকুট। এখন সেটাও তেমন হয়না। ফেসবুকে বন্ধুদের পোস্টে লাইক দিয়ে জানিয়ে দেই বিগ ব্রাদার না হলেও আমি তাদের দেখছি, খোঁজ রাখছি। তবে বন্ধুদের কেউ কল করলে ভালো লাগে। কিছুক্ষণ মন খুলে কথা বলা যায়। কথা হয় অনেক বিষয়ে। নিজেদের নিয়ে, ছেলেমেয়েদের নিয়ে, পুরনো বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে কথা হয়। কথার কি শেষ আছে! কখনও কখনও কারও কারও খবরাদি পাওয়া যায় যাদের কথা বিগত প্রায় দু তিন দশক একবারও মনে আসেনি।  তাছাড়া বর্তমানে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা তো আছেই।

ফেসবুকে তোর লেখাগুলো পড়ি। কী হবে এসব লিখে?  


জানি না। আসলে আমরা দেশ ছাড়লেও দেশ আমাদের ছাড়েনি। মনে পড়ে, বেশ কয়েকবার কোলকাতায় কোথাও দাঁড়িয়ে কথা বলছি, পাশে থেকে কেউ বলে উঠেছে
«আপনি বাংলাদেশের? ওখানে আমার বাপদাদার বাড়ি ছিল»। আমাদের অবস্থাও তাই। এটা ভালো বা মন্দ নয়, এটাই জীবন। অনেক সময় বাড়িতে ফোন করলে জানায় পাড়া বা গ্রামের কারও মৃত্যু সংবাদ। আমি যখন এসেছি, তখনই তারা অনেক বয়স্ক। এখন তো বয়সের ভারে নুয়ে পরা একেক জন মানুষ। যুগের পর যুগ এদের খবর পাইনি বা খবর নেইনি, তারপরেও যখন তাদের কারও মৃত্যু সংবাদ পাই, মনটা খারাপ হয়ে যায়। আসলে আউট অফ সাইট আউট অফ মাইন্ড কথাটা সব সময় ঠিক না। দেশ আমাদের রক্তে রক্তে, আমাদের নিঃশ্বাসের সাথে। আমাদের প্রত্যেকের মনেই দেশের একটা নিজস্ব চেহারা আছে, যখনই মনে হয় সেটা বিপদের সম্মুখীন এক ধরণের প্রতিবাদী অনুভূতি জাগে মনে ভেতর। তাই তো না লিখে, না বলে পারি না। তাছাড়া আমি আমার শহরে একা থাকি, দেশ নিয়ে কারও সাথে শেয়ার করার লোক নেই। হয়তো সে কারনেও ফেসবুকে লিখে নিজের মনটা হালকা করার তাগিদ বোধ করি।    

কিন্তু তাতে তো উল্টাপাল্টা কথাও শুনতে হয়। অনেক সময় দেখেছি লোকজনের উল্টাপাল্টা কমেন্ট। তুই উত্তর দিস না বা ডিলিট করিস না কেন?      

তুই নিজেই বললি উল্টাপাল্টা কমেন্ট। মানে অপ্রাসঙ্গিক। এদের উত্তর দিয়ে লাভ কি? দেখ, পৃথিবীর অবস্থাই এমন। কোন মানুষই পারফেক্ট নয়, কিন্তু তাই বলে সে এ নিয়ে কথা বলতে পারবে না তাও নয়। ধর একজন লোক ধূমপান করে। কিন্তু সে যদি কাউকে বলে ধূমপান করা খারাপ, এতে আমি কোন ক্ষতি দেখি না। কিন্তু প্রচুর লোক আছে যারা বলবে «আপনি নিজে সিগারেট খান, অন্যেরা  খেলে আপনার ক্ষতি কি?» আমরা সবাই কমবেশি মিথ্যা কথা বলি বলে «মিথ্যা বলা অন্যায়» এটা যেন উচ্চারণ করা যাবে না। যেহেতু নিজে ভুল করি তাই অন্যের ভুল ধরানো যাবে না। এটা আসলে যুগের হাওয়া। এক সময় কোন এক মন্ত্রী এক অ্যাকসিডেন্ট সম্পর্কে বলেছিলেন «ইন্ডিয়ায় আরও বেশি অ্যাকসিডেন্ট হয়»। অর্থাৎ কারও ভুল নিয়ে কথা বললে সে সেটা সংশোধন করার কথা না ভেবে আর কে কে এসব ভুল করছে সেটা খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সবাই আজ তার কাজের যৌক্তিকতা না খুঁজে অজুহাত খোঁজে। এক্ষেত্রে কি করা যায়? ব্লক করা যায়, আনফ্রেন্ড করা যায়। কিন্তু তাতে কি লাভ। আসলে সে তার অপ্রাসঙ্গিক কমেন্টের মাধ্যমে আর দুজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে, তার দু চারজন বন্ধু আমার লেখাটা পড়ছে, সেটাই বা কম কিসে। তাছাড়া এ ধরণের কাজের জবাব কিভাবে দিতে হয় তা তো ফেসবুকেই আছে। মূর্খদের সাথে তর্ক করতে নেই।  তাই আমি এদের সাথে তর্ক করি না আর এদের আনফ্রেন্ডও করি না। আমি এদের মূর্খতা এঞ্জয় করি। বিশেষ করে যারা নিজেদের জ্ঞানী বলে মনে করে তাদের মূর্খতা।
দুবনা, ১২ অক্টোবর ২০১৯          


  


Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি