আসুন প্রশ্ন করি
আজ ৩ রা নভেম্বর। জাতি পালন করছে কুখ্যাত জেল হত্যা দিবস। একাত্তরের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যে সূর্য বাংলার আকাশে উঠেছিল সে সূর্য অস্ত যায় ১৯৭৫ সালের এই দিনটাতে। এ নিয়ে আজ আমরা অনেকেই অনেক কিছু লিখব। অনেককে গালিগালাজ করব। কিন্তু যেটা করব না, সেটা হল জানার চেষ্টা কেন এমন হল? কেন এমন হয়?
১৯৯৪ সালে দুবনা আসি। তখন থেকে ইন্টারনেটের সাথে বন্ধুত্ব। যেহেতু বন্ধুদের অনেকেই এরই মধ্যে চলে গিয়েছিল, তাই শুরু করি অন্তরজালে তাদের খোঁজা। তখন ফেসবুক ছিল না, অন্য কোন সামাজিক মাধ্যম ছিল না। বলা যায় ছিল শুধু বিলবোর্ড। সেখানে কোন ম্যাসেজ রাখলে কারও চোখে পড়লে কেউ উত্তর দিলে দিতেও পারত। তখন আমি কেবল ৩০ পেরিয়েছি। ক্রিস্টিয়ান নামে এক ভদ্রলোক আমার সাথে যোগাযোগ করলেন স্টেটস থেকে। পিএইচডি করছিলেন। একটা পেপারের ব্যাপারে পরামর্শ চাইছিলেন। বয়েস পঞ্চাশের ওপর। শিল্পানুরাগী। উনিই বললেন এক শিল্পী সম্পর্কে যার বাসায় স্বর্গে ইভের সাপের হাত (?) থেকে আপেল নেওয়ার ছবি ছিল আর তাতে লেখা ছিল "সাপের কোন দোষ ছিল না।" ব্যাপারটা ভাবার। কেন না আমরা কিন্তু আজীবন সাপকে দোষ দিয়েই বসে আছি। সেটা এখনও করছি।
আমরা অন্ধভাবে বিশ্বাস করি মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায়। সন্দেহ নেই যে মীরজাফর বিশ্বাসঘাতক। কিন্তু কখনও কি প্রশ্ন করি সিরাজকে নিয়ে? কেন মীরজাফর বিশ্বাসঘাতক হল তা নিয়ে? না, সিরাজকে ছোট করার কোন প্রয়াস থেকে নয়, যাতে আর কোন মীরজাফর জন্ম না নেয় সেই আশা থেকে।
গত কয়েকদিন থেকে ফেসবুকে অনেক স্ট্যাটাস দেখেছি যেখানে মোস্তাকের চরিত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে বলা হয়েছে। কীভাবে মোস্তাক ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নিজের বাসার রান্না খাইয়ে সে রাতেই তাঁকে খুন করলেন সেটা বলা হয়েছে। এবং মোস্তাক, জিয়া বা অন্যান্য আর্মি অফিসারদের কাঁধে দোষ চাপিয়ে এক ধরণের তৃপ্তিতে ভুগি। কিন্তু আমরা কি প্রশ্ন করি কেন তাজুদ্দিন আহমেদ মন্ত্রীসভা থেকে চলে গেলেন? একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যে চার নেতা শত বাধাবিপত্তি অগ্রাহ্য করে দেশ স্বাধীন করলেন স্বাধীনতার পরে কেন তাদের বদলে যে লোক একাত্তরে বিজয়ের দ্বারে এসেও পাকিস্তানের সাথে সন্ধি করতে চেষ্টা করেছিলেন তিনি হলেন বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বিশ্বস্থ মানুষ? জানি এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের হারানো নেতাদের ফিরিয়ে দেবে না, কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ প্রশ্ন হয়তো অনেকের কাছেই অবান্তর, কিন্তু যারা এখনও একাত্তরের চেতনায় বিশ্বাসী, যারা এখনও বাহাত্তরের সংবিধানকে বাংলাদেশের মুক্তির সনদ বলে মনে করেন - তারা এ প্রশ্ন করবেন, উত্তর খুঁজবেন, ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সাবধান হবেন এ আশা তো করতেই পারি।
Comments
Post a Comment