মানুষ

আন্দ্রে জিদ লা সিম্ফোনিয়া উপন্যাসে লিখেছেন নিয়ম নীতির দিক থেকে প্রকৃতি ঈশ্বরের চেয়েও মহান। বর্তমানে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে সেটাই আবার মনে হল।


বিজ্ঞান, বিশেষ করে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান প্রকৃতিকে, প্রকৃতির গতি, বিবর্তন এসব নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তাতে নিয়মানুবর্তিতা খোঁজে। আর সেটা করতে গিয়ে সে কখনও অতীতের অবদানকে  অস্বীকার করে না। তাই তো কী নিউটন, কী আইনস্টাইন - অকপটে বলেন  আমরা অনেক দূর দেখি, কারণ আমরা দৈত্যদের কাঁধে বসে আছি। কোয়ান্টাম ফিজিক্স তার সত্যতা যাচাই করে ক্ল্যাসিকে ফিরে গিয়ে, ঠিক যেমনটা করে রিলেটিভিটি। 

আমরা কী দেখতে পাই যখন রাজনীতি, ধর্ম এসবের দিকে তাকাই? আমরা দেখি এক ধর্ম আরেক ধর্মকে অস্বীকার করছে, এক সমাজ ব্যবস্থা অন্য সমাজ ব্যবস্থাকে অস্বীকার করছে। মহাবিশ্ব প্রায় ১৪০০ কোটি বছরের পুরনো। পদার্থবিদ্যা শুধু তার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারে, সেই শিক্ষাকে কাজে লাগাতে পারে, কাজে লাগিয়ে প্রকৃতিকে মানব সমাজের কাজে লাগাতে পারে। মানুষের ইতিহাসও নতুন নয়। ধর্ম বা রাজনীতির তুলনায় তার বয়স অনেক। আর  উৎপত্তির প্রথম দিন থেকেই মানুষ বিভিন্ন কিছু শিখছে, শিখেছে - যাকে আমরা বলি অভ্যাস। তাই কোন ইজম আরোপ করলেই যে সব মানুষ একদিনে সেটা রপ্ত করবে বা আদৌ রপ্ত করতে পারবে কি না সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ। আমার অবাক লাগে যখন শিক্ষিত মানুষ যিনি বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন তিনি অন্যের কথা শুনতে চান না, অন্য মত গ্রহণ না করলেও সেটা সহ্য করতে পারেন না। কেন না  খুনোখুনি নয় একমাত্র কথার মাধ্যমেই নিজের মতটা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা যায়। আমরা যাই ভাবি না কেন, বিভিন্ন ধর্ম, সামন্ততন্ত্র, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, নিও লিবারেলিজম, ফ্যাসিবাদ - এ সবই মানব সমাজের বিবর্তনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, মানুষের চরিত্রের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তাই তো যে মানুষ বাইরে গণতন্ত্রের বরপুত্র ঘরে হিটলারের সাগরেদ। প্রতিটি মানুষই পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন দোষগুনের এক বিচিত্র সমাবেশ। বর্তমান সময়ে এটা মনে রাখা মনে হয় যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি জরুরী।       

দুবনা, ০৮ নভেম্বর ২০২০ 




Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা