সমান্তরাল বাস্তবতা

সবার দৃষ্টি আজ আমেরিকার দিকে। নির্বাচন শেষ। তবে বাস্তবতাটা এই যে সাধারণ নির্বাচন শেষের পরেই সেখানে শুরু হয় আসল নির্বাচন। অপেক্ষা। অন্তহীন অপেক্ষা। না, আমার কোন অপেক্ষা নেই। আমি দূরের গ্রহে অবস্থানকারী এক সামান্য দর্শক। দেখি আর চেষ্টা করি কিছু শিখতে। 


অনেকেই অনেক রকম মন্তব্য করছেন নির্বাচন নিয়ে। কিন্তু ঘটনা এমন যে স্বয়ং ঈশ্বরও পারবেন না এখানে নিরপেক্ষ থাকতে। একদিকে তার ধনী সন্তানেরা, অন্য দিকে গরীব, বঞ্চিত,লাঞ্ছিত, অবহেলিত মানুষ। কোন দিকে যাবেন তিনি? ধনীর পক্ষ নিয়ে তিনি আর দয়ার সাগর থাকতে পারেন না, আবার গরীবের পক্ষ নিলে নিজের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। বয়স তো কম হল না? আজকাল গরীবের সংসারে থাকার চেয়ে বড়লোক সন্তানের পয়সায় বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেওয়া অনেক কম রিস্কের। শধু ভক্তি আর ভালবাসায় তো পেট ভরে ন। 

এক বন্ধু লিখেছে - "আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে বি টিমের কাউকে চিনি না, আমার বন্ধু, কলিগ, ছেলেমেয়েদের বন্ধু, তাদের বাবা-মা, তাদের শিক্ষক - এদের একজনও বি টিমের নয়। কোত্থেকে তাহলে এত ভোট পড়ছে? প্যাথেটিক।" 

আমার ধারণা এমন পোস্ট অনেকেই করছে, করবে আর সেটাই প্যাথেটিক। আমার মনে পড়ল আশির দশকের প্রথম দিকের কথা। নিজে ছাত্র ইউনিয়ন করি, পার্টির সাথে জড়িত - চারিদিকে যাদের দেখি সবাই প্রগতিশীল। আর ভাবি বিপ্লব কেন হয় না। আজ বুঝি কতটাই না সীমিত ছিল আমার দৃষ্টি। চারপাশে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ আর বিএনপির লোকজন চোখে পড়ত না। লাল কাপড়ে চোখ এমনই শক্ত করে বাঁধা ছিল যে চারিদিকে আর কিছুই দেখতাম না। 

না, আমি আমার বন্ধুকে সীমিত দৃষ্টির মানুষ বলছি না। উল্টো সে তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, সংস্কৃতি মনা একজন পরিপূর্ণ মানুষ। তাহলে? আমার খারাপ লাগছে গণতন্ত্রের জন্য, গণতান্ত্রিক আমেরিকার জন্য। কারণ এতে আমি মুক্ত বাতাস দেখতে পাচ্ছি না,  বাক্স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষকে দেখছি কান বন্ধ করে বসে থাকতে। আমি খুব বেশি কোথাও যাইনি, ইংল্যান্ড আমেরিকা তো নয়ই। তবে যেটুকু শুনেছি সেখানে বিভিন্ন বর্ণের লোকেরা বিভিন্ন পাড়ায় বাস করে। এক সময় আমাদের গ্রামেও হিন্দু  আর মুসলমান আলাদা আলাদা পাড়ায় বাস করত। যদি আমেরিকায় শুনি এক পাড়ার লোক অন্য পাড়ায় যেতে ইতস্তত বোধ করে আমাদের তেমন ছিল না। শুনেছি এক সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় এমন ছিল। আপেরথাইড সিস্টেমে বিভিন্ন বর্ণের লোক বিভিন্ন পাড়ায় বাস করতে বাধ্য হত। আমেরিকায় হয়তো আইন করে সেটা করা হয়নি, তবে মানুষ নিজেরাই এমন এক প্রথা তৈরি করে নিয়েছে। তবে নতুন যেটা বুঝলাম সেই আপেরথাইড সিস্টেম এখন বসবাসের এলাকা পেরিয়ে মনোজগতে ঢুকে গেছে। যার ফলে আমার এ টিমের ফেসবুক বন্ধুরা যেমন বি টিমের অস্থিত্ব টের পায় না, তেমনি বি টিমের ফেসবুক বন্ধুরা টের পায়না এ টিমের অস্তিত্ব। দু দল দই প্যারালেল জগতের বাসিন্দা। একটা দেশের জন্য এর চেয়ে খারাপ সংবাদ আর কী হতে পারে?  

দুবনা, ০৪ নভেম্বর ২০২০ 




Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা