ভাইরাস

 

করোনার করুণায় বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় শব্দ হচ্ছে ভাইরাস। তবে এটা সাময়িক। ভ্যাকসিনের আবিষ্কারে আজ হোক, কাল হোক আমরা এই ভাইরাসকে জয় করব তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এতেই ভাইরাসের উপস্থিতি আমাদের জীবনে শেষ হয়ে যাবে না। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা, আমরা সবাই বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত। না, এটা শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসের ভাইরাস নয়, আমরা যে যা বিশ্বাস করি সে বিশ্বাসের ভাইরাস অনবরত সমাজকে দূষিত করে চলছে।। আমরা সবাই ধরেই নিই, যে যা কিছু বিশ্বাস করি সেটাই শেষ কথা। কোত্থেকে আসে এই বিশ্বাস? জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। নিজেদের সাফল্যের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে যে বিশ্বাস আমরা তৈরি করি সেটাকেই একমাত্র পথ বলে মনে করে পথে পথে তা ফেরি করে বেড়াই। আর ব্যর্থতার উপর ভিত্তি করে যে অভিজ্ঞতা সেটা ভুল এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা হয় তাকে দূরে ছুঁড়ে ফেলি নয়তো তার বিরুদ্ধে লড়াই করি। কিন্তু এটা করতে গিয়ে আমরা কখনই ভাবি না এই সাফল্য বা ব্যর্থতার পেছনে নিজের কতটুকু অবদান, কতটুকু সমাজ বা সিস্টেমের। সাফল্য অবশ্য আমাদের একান্তই নিজের, ব্যর্থতা? হতেই পারে না। এ জন্যে শুধু সিস্টেম দায়ী। এই যে নিজের ক্ষমতা, নিজের সঠিকটা সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস, সেই বিশ্বাসের ঠুলি চোখে এঁটে আমরা আজকাল পথ চলি। এভাবেই জন্ম নেয় অন্ধ মানুষ, অন্ধ প্রজন্ম। আর এতে করে অনেক সুন্দর, অনেক প্রগতিশীল আদর্শ প্রতিক্রিয়াশীল আদর্শে পরিণত হয়।

অংকে অনেক সমস্যার সাধারণ সামাধান থাকে, তবে ইনিশিয়াল বা বাউন্ডারি কন্ডিশন সেই সাধারণ সমাধানকে কোন নির্দিষ্ট সমস্যার উপযোগী করে তোলে। সমাজ পরিবর্তনশীল। সে বদলায় সময়ের সাথে। তাই বিভিন্ন সময়ে তার বিভিন্ন ইনিশিয়াল কন্ডিশন থাকে। একই ভাবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সমাজের বাউন্ডারি কন্ডিশন ভিন্ন। এসব মাথায় না রেখে অন্ধভাবে কোন এক সমাধান সবার ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। প্রতি মুহূর্তে সমাজের নার্ভ বুঝে সঠিক দাওয়াই দেওয়াই আধুনিকতা, বিজ্ঞানমনস্কতা, আর এসব বিবেচনায় না এনে এক দেশ বা সমাজের সফল সমাধান (মডেল) অন্য সমাজে আরোপ করার চেষ্টা অন্ধত্ব। এই দোষেই আজকাল কমবেশি আমরা সবাই দোষী। নিজেদের বিশ্বাসকে প্রশ্ন করুন, বিজ্ঞানমনস্ক হোন।

দুবনা, ১২ জুন ২০২১ 
 

 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা