প্রশ্ন নিয়ে প্রশ্ন

 



কথা হচ্ছিল
"'শুধু অসাম্প্রদায়িক না, পুরোপুরি অধার্মিক না হয়ে কী করে কেউ বিজ্ঞানমনস্ক হন, মুক্তচিন্তক হন, কমিউনিস্ট হন সেটা এই অশিক্ষিত অভাজনের মাথায় ঢোকে না।"

একজন স্কুল কলেজে গেলেই তেমন শিক্ষিত হয়ে যায় না, ঠিক তেমনি একজন মন্দির মসজিদে গেলেই ধার্মিক হয়ে যায় না। আসলে ধর্ম আর আর বিজ্ঞানমনস্কতা দুই ভিন্ন জগতের বাসিন্দা। ধর্ম - এটা বিশ্বাস, বিজ্ঞানমনস্কতা - এটা সন্দেহ, অবিশ্বাস। এমনকি কেউ যদি অন্ধভাবে মার্ক্সবাদে বিশ্বাস করে সেও সেই ধর্মের পথেই যায়। তবে অধার্মিক শব্দটা ব্যবহার করা ঠিক হবে না, কেননা অবিশ্বাসী আর অধার্মিক সমার্থক নয়। যেখানে ধার্মিক কারণ জানতে না চেয়ে কোন টেক্সট মেনে নেয়, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ কারণ জানতে চায়, জানতে চায় সেটাই কি একমাত্র সত্য নাকি আরও কোন সত্য আছে। আমরা অনেক কিছুই করি যতটা না যুক্তি দিয়ে, তার চেয়ে বেশি আবেগ দিয়ে। যেমন যুক্তি দিয়ে আমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতাম, সবাই সেটাই চেয়েছিল, কিন্তু আবেগ দিয়ে আমি ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ফিজিক্সে চলে এসেছি। আবার এটাও তো ঠিক অনেক সময় আমাদের নিজেদের উপরেও বিশ্বাস রাখতে হয়। ধরুন বাবা মা মনে করেন আপনার ডাক্তার হওয়া উচিৎ, সেটা মনে করার পেছনে তারা হাজারটা যুক্তি দেখান, অথচ আপনি কবি হতে চান আর শুধু আপনিই বিশ্বাস করেন আপনি কবি হতে পারবেন। তখন কি আপনি বিজ্ঞানমনস্ক? যদি আপনি এই বাজিতে জিতে যান মানে নামকরা কবি হতে পারেন, সবাই আপনার তখনকার সিদ্ধান্তকেই যৌক্তিক মনে করে। জানেন তো অনিশ্চয়তার সূত্র বলে একটা ব্যাপার আছে। তাই শুধু অসাম্প্রদায়িক, পুরোপুরি অধার্মিক হলেই যে কেউ বিজ্ঞানমনস্ক, মুক্তচিন্তক, কমিউনিস্ট হবেন তার যেমন কথা নেই, আবার কেউ ধর্মে বিশ্বাস করে কমিউনিস্ট হতেই পারবেন না সেরকম কোন কথা নেই। আসলে সমস্যা হল আমরা বিজ্ঞানমনস্কতা, মুক্তচিন্তা, কমিউনিস্ট এসবের সংজ্ঞাকেই দিন দিন খুব সংকীর্ণ করে ফেলছি, এগুলো ডগমায় পরিণত করছি। আর যেখানেই ডগমা সেখান থেই বিজ্ঞানমনস্কতা, মুক্তচিন্তা পালিয়ে যায়। ধর্মের ইতিহাস তুলনামূলক ভাবে দীর্ঘ, তাই অনেকের জীবনেই সেটা ওতপ্রোতভাবে মিশে গেছে অভ্যাস, সংস্কৃতি - এসবের অংশ হিসেবে। অনেক ধর্মীয় রীতিনীতি ধীরে ধীরে সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। একইভাবে অনেক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আজ জীবনের অংশ হয়ে গেছে, এজন্যে সবাইকে বিজ্ঞানমনস্ক হতে হয়নি। বিজ্ঞান দুভাবে কাজ করে - সে প্রশ্ন করে প্রকৃতির রহস্য জানতে চায় আবার লব্ধ জ্ঞান দ্বারা বিভিন্ন জিনিস আবিষ্কার করে মানুষের জীবনকে সহজ করতে চায়। একজন বিজ্ঞানী কিন্তু ভাবে না তার আবিষ্কার ধার্মিক না বিজ্ঞানমনস্ক না নাস্তিক - কার উপকারে আসবে? সে তার মত করে প্রকৃতিকে জানতে চায়, সৃষ্টির রহস্য জানতে চায় আর একই সাথে ধর্ম, বর্ণ, মতবাদ নির্বিশেষে মানুষের জন্য কিছু করতে চায়। সে জানে প্রকৃতি বহুরুপী, বৈচিত্র্যময়। তাই তো সে নির্দ্বিধায় সবার জন্যই মঙ্গল বয়ে আনার চেষ্টা করে।

দুবনা, ০৯ জুন ২০২১ 
 

 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা