Posts

সাদাকালো

Image
দেশে মাদকতা বিরোধী অভিযান চলছে। এ যে কোন চলা বোঝা কষ্ট। এই সরল পথে চলে তো এই অলিগলির ভেতর দিয়ে চলে।    আইন আর আইনহীনতা – এই দু’এর এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ ঘটায় উত্তর আর প্রশ্ন আজ পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। মাদকতা আমাদের দেশের কখনই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর দ্বারা সমর্থিত হয়নি, তাই এ আন্দোলনের পেছনে জন সমর্থন থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।   তবে এর পদ্ধতি, বিশেষ করে কিছু বিচার বহির্ভূত মৃত্যু নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ফলে সামাজিক মাধ্যমে তো বটেই, এমন কি রাস্তায় প্রতিবাদ হয়েছে, হচ্ছে। আর প্রতিবাদ করছে মূলত বাম ঘেঁষা রাজনৈতিক দল ও গণসংগঠনগুলো। সরকার অবশ্য বসে নেই, এই সুযোগে প্রগতিশীলদের উপর এক হাত নিয়েছে। এখন চলছে প্রতিবাদ না করতে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। তাই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে বাম বা প্রগতিশীলদের দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয় সেখানে তাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ না করাই কি বুদ্ধিমানের কাজ ছিল না? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে এক গল্প মনে পড়ে গেল। ফেসবুকেই পড়া – তার সারমর্ম এ রকমঃ               “বিশাল এক সাদা ক্যানভাসের মাঝে একটা বিন্দু কালির ছোপ দেওয়া একটি ছবি দ...

আমার কাকু

Image
গতকাল আমার কাকুর জন্মদিন ছিল, কাকু মানে দ্বিজেন শর্মার। কাকু আমাকে আমার বিজন বলতেন (এটা অবশ্য উনি সবাইকেই বলতেন), তাই আমিও আমার কাকু বলেই লিখি। আমার খুব অল্প ব্যক্তিগত সম্পদের মধ্যে এটাও একটা। জন্মদিন ব্যাপারটা একান্তই ব্যাক্তিগত। সবার জীবনেই এরকম কিছু কিছু দিন থাকে, একান্ত ব্যাক্তিগত। হোক সে জন্মদিন, প্রথম বারের মত স্কুলে যাওয়ার দিন, প্রথম ভালবাসি বলার দিন, বিয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যক্তিগত এ জন্যেই – এসব দিন সাধারণত অন্য কারো জীবনে প্রভাব ফেলে না, অনেকের ক্ষেত্রে নিজের জীবনেও নয়। এসব দিন অন্য দশটা বা ৩৬৪ দিনের মতই। তবে যারা ৩৬৪ দিনই নিজের কাজকর্ম দিয়ে বিশেষ করে তুলতে পারেন, তাদের জন্মদিন আর ব্যাক্তিগত থাকে না, অনেকের কাছেই বিশেষ দিন হয়ে ওঠে। কাকু সেটা পেরেছেন, তাই আমাদের অনেকের কাছেই দিনটা ফিরে আসে, স্মৃতি হয়ে, ভালোলাগা হয়ে, ভালোবাসা হয়ে। গতকাল ঘুম থেকে উঠেই মনে পড়ল কাকুর কথা। গত বেশ কয়েক বছর এই দিনটায় আমি কাকুকে ফোন করতাম। সাধারণত কাকী ধরতেন ফোনটা, পরে কাকুকে দিতেন। -    ও বিজন, তুমি কোথায়? কবে এলে?   -    কাকু আমি দুবনা থেকে বলছি, আজ আপনার জন্মদিন, ভাব...

দেশে ফেরা

Image
বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবের দেশে ফেরার মতই গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা। ১৯৭২ সালে এক জাতি অপেক্ষা করেছিলো তার নেতার জন্য যিনি শক্ত হাতে সামনে নিয়ে যাবেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে। ১৯৮১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সেই মানুষগুলোই অপেক্ষা করেছিলেন শেখ হাসিনার জন্য যিনি হাল ধরবেন আওয়ামী লীগের আর পিতার মতই দেশীয় স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ইতিমধ্যে হারিয়ে যেতে শুরু করা একাত্তরের মূল্যবোধগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন। নিজে রাজনীতিতে অপরিপক্ক হলেও পাশে পেয়েছিলেন তিনি একাত্তরের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ নেতা কর্মীদের, পেয়েছিলেন বাহাত্তরের সংবিধানে বিশ্বাসী একদল সহযাত্রী যারা তাকে সামনে রেখে লড়ে গেছেন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আর শেখ হাসিনা নিজেও ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা করেছেন একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে। পঁচাত্তর পূর্ববর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিব ছিলেন পরস্পরের পরিপূরক – এক ও অভিন্ন লক্ষ্যে পৌঁছান ছিল তাঁদের জীবনের ব্রত। তখন শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ দুটোই ছিল নক্ষত্রের মত, নিজের আলোয় আলোকিত। ফলে একাত্তরে শেখ মুজিব পাকিস্তানে জেলবন্দী থাকলেও আওয়ামী লীগ লড়াইয়ের মাঠ...

আমার রবিবাবু

Image
রবীন্দ্রনাথ আমার জীবনে আসেন আমাদের কালিগঙ্গা নদীর তীরে সাদা শুভ্র কাশবনের পথ ধরে। আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে ...... জানি না কেন, ঐ লাইনগুলো পড়েই মনে হয়েছিলো তিনি আমাদের খুব আপনজন, কাছের মানুষ। তখন ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের ছবি থাকত বর্ষপঞ্জীতে। রবীন্দ্রনাথকে দেখতে লাগতো আমাদের জ্যাঠামশায়ের মত। ঠিক সেই রকম শুভ্র দাঁড়ি। জ্যাঠামশাইয়ের সাথে মিল অবশ্য এখানেই শেষ। তবে ছোট বেলায় আমরা চেষ্টা করতাম রবীন্দ্রনাথের ছবির সাথে জ্যাঠামশাইয়ের মিল খুঁজে পেতে, এ নিয়ে একআধটু গর্ব বোধও করতাম। একটু বড় হলে বড় ভাইবোনদের সাথে আমারও গানের হাতেখড়ি হয় রবীন্দ্রনাথের সেই গান দিয়ে ওগো নদী আপন বেগে পাগল-পারা আমি স্তব্ধ চাঁপার তরু গন্ধভরে তন্দ্রাহারা ............... পরে অবশ্য গান শেখা বাদ হয়ে যায়। নিজে যে রবীন্দ্র সাহিত্য নিয়ে খুব পড়াশুনা করেছি সেটাও নয়। কিছু কবিতা, কিছু গল্প পড়া আর গান শোনার মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ। দস্তয়েভস্কি, কাম্যু, সারত্রে, তলস্তয়, কাফকাসহ অনেকের লেখা যতখানি সিস্টেম্যাটিক্যালি পড়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে সেভাবে কখনই পড়া হয়নি। তারপরেও চিন্ময়, হেমন্ত...

কারো শুরু কারো শেষ

Image
রাত পোহালেই সূর্যের ডানায় ভর করে আসবে ১৪ এপ্রিল। রাশিয়ায় আর যে কোন দিনের মতই একটা দিন। তবে এরই মধ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছয়লাব হবে সুদূর বাংলাদেশের রাস্তাঘাট। আমি বাড়িতে ফোন করব। দিদি ফোন তুললে যখন বলব -     শুভ নববর্ষ দিদি। -     আজ তো চৈত্র সংক্রান্তি ভাই। পয়লা বৈশাখ তো আগামী কাল। এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। মনে হবে ছোটবেলার কথা। তখন আমরা এটাকে বলতাম হালখাতা। চৈত্রের শেষের কয়েকদিন থেকেই পাশের জেলে পাড়ায় চলত চৈত্র পূজা। সারাদিন বিভিন্ন দল এসে ভুতপেত্নী সেজে নেচে যেত শিবের সাথে আর রাতে নাচ চলত মণ্ডপে। কী ভৌতিক ছিল সে রাতগুলো? চারিদিকে ভূতপেত্নীর আনাগোনা। ভয় আর উত্তেজনার মধ্য দিয়ে কাটতো নববর্ষের আগের এ দিনগুলো। এরপর চৈত্র সংক্রান্তি। ছাতু, মুড়িমুড়কি এসব ছিল এদিনের মূল উপাদান। সাথে বিভিন্ন শাঁক। যতদূর মনে পড়ে এ সময় বাড়িঘর ধুয়েমুছে প্রস্তুত করা হত নতুন বছরকে বরণ করার জন্য।     পয়লা বৈশাখ সকাল থেকে আসতে শুরু করত গ্রামের লোকজন। আমরাও যেতাম পাড়ায় পাড়ায়। কোলাকুলি, মিষ্টিমুখ এসব ছিল পয়লা বৈশাখের সকালের দৃশ্য। অনেকটা ঈদ আর বিজয়া দশমীর পরে কলাকুলির ম...