মগজ ধোলাই

কয়েক দিন আগে  রানা ওর "Felicita . ফেলিচিতা" নামক নোটে  লিখেছে
"রাশিয়ায় পড়তে যাওয়ায় আমার জীবনটা বদলে গেছে একটা বিশেষ কারণে। আমি ঠিক জানিনা ১৯ বছর বয়সে আমেরিকা মহাদেশে চলে গেলে আমার জীবন সেভাবে উন্নত হত কিনা, বিশ্ব নাগরিক হওয়ার সুযোগ হত কিনা।"
এই ব্যাপারটা আমাকেও অনেক সময়ই ভাবায়। আমারও  মনে হয় রাশিয়ার থাকার ফলে, এখানে লেখাপড়া করার কারণে লেখা পড়ার বাইরেও অনেক কিছুই পেয়েছি আমরা। বিশেষ করে যারা পড়ার সুযোগ পেয়েছি সোভিয়েত দেশে। এখন আধুনিক রাশিয়ায় এটা সম্ভব নয়। কারণটা মূলত অর্থনৈতিক। ওই সময়ের মতো শুধু মাত্র পড়াশুনা করে জীবন কাটানো সত্যি কঠিন। জীবনের তাগিদে অনেককেই বাইরে কাজকর্ম করতে হয়।  তাছাড়া যত সহজে আমরা এদেশের বিভিন্ন জায়গার সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারতাম, অর্থনৈতিক কারণেই সেটা আর সম্ভব নয়। মুক্ত অর্থনীতি অর্থিনীতেকেই মুক্ত করেছে, আর মুক্ত করেছে অর্থনীতির কিছু দিকপালদের অঢেল সম্পদ লেভার বাধা থেকে, তবে সেই সাথে অর্থমুক্ত করেছে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে। তাই যত সহজে সোভিয়েত  আমলে আমরা পুঁথিগত বিদ্যার বাইরেও আরো অনেক কিছুই জানতে পারতাম, আজ তা অনেকটাই অসম্ভবের পর্যায়ে। তবে এটাও ঠিক এমনকি ক্লাসরুমেই আমাদের স্পেশালিটির বাইরেও অনেক কিছুই শেখানো হতো।  ফিলোসফি তাদের অন্যতম।  মানুষযে শুধু  ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য কোনো বিশেষজ্ঞ নয়, এর বাইরেও সে একজন পরিপূর্ণ মানুষ - সেটা শেখানো হতো। 

তখন দুবনায় কাজ করি। এক কনফারেন্সে বাইরে থেকে আসা দুই প্রফেসরের সাথে আলাপ, আমেরিকায় পোস্ট ডক  করা, নামকরা গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করেন।  মস্কো ঘুরে বেরাতে চাইলে  তাদের বাসায় নিয়ে এলাম।  আর ঘরে দেয়াল ভর্তি দস্তয়েভস্কি, তলস্তয়, হেসে, সার্ত্রে, কাম্যু, হেমিংওয়ে সহ অনেকের বই দেখে বললেন উনি ডিকেন্সের দুই শহরের কাহিনী পড়েছিলেন, তবে আর কিছু পড়া হয়ে উঠেনি। আমি পরে অনেককেই দেখেছি ওরা সব সময় শুধু নিজেদের স্পেশালিটির পড়াশুনা নিয়েই ব্যস্ত, এসব গল্প পড়ার সময় তাদের নেই। অথচ সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলতে বসলে কখন যে গল্প পদার্থবিদ্যার সমসাময়িক সমস্যা থেকে রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতির নানা শাখা প্রশাখায় ঢুকে যায় টেরই পাইনা। এটা  হয়তো ওদের শিক্ষা ব্যবস্থার বিশেষত্ব। ছাত্র জীবনে প্রায়ই মনে হতো, হবো তো পদার্থবিদ, কি হবে এই ফিলোসফি, ইতিহাস বা সাহিত্য পড়ে।  বিশেষ করে খারাপ লাগতো, যদি এসব বিষয়ের জন্য খুব সকালে ক্লাসে যেতে হতো।  কিন্তু দেখে মনে হয়, ওটা ছিল এক ধরণের ব্রেইন ওয়াশ - জীবনের বিভিন্ন দিকের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলা।

দুবনা, ০৩ আগস্ট ২০১৬ 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি