ব্র্যাভো মামুন!
মামুন মারা গেলো, আব্দুল্লাহ আল মামুন। ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না, তবে নাম শুনেছি অনেক, মূলতঃ মেয়ে মার্গারিতার কল্যানে। নিজেদের ছেলেমেয়েরা যখন ছোট ছিল, ওদের বন্ধুদের কাছে আমাদের পরিচয় ছিল অমুকের বাবা বলে, আর আমাদের বন্ধুরা আমাদের ছেলেমেয়েদের জানতো অমুকের ছেলে বা মেয়ে বলে। এদিক থেকে মামুন ব্যতিক্রম, অন্ততঃ আমার কাছে। অবশ্য দেশের পত্রপত্রিকায়ও আজকাল মামুনের আগে মার্গারিতার নামটাই আসে। এমন সৌভাগ্য কয়জন বাবা-মার্ হয় বলা কষ্ট। যতদূর জানতাম, মামুন পড়াশুনা করেছে মস্কোর বাইরে, তবে ইদানিং মস্কো থাকতো, ব্যবসা করতো। হয়তোবা নিজে এ লাইনে ছিলাম না বলে যোগাযোগ হয়নি। মাত্র কয়েকদিন আগে জানলাম ও এসেছে ১৯৮৩ তে, তার মানে আমরা একই সময়ে আসি সোভিয়েত দেশে। পড়াশুনা করেছে আস্ত্রাখানে। মনে পড়লো, ২০১৫ বাংলাদেশ প্রবাসী পরিষদ রাশিয়ার নববর্ষের অনুষ্ঠানে মামুনের আসার কথা ছিল মার্গারিটাসহ, তবে মেয়ে কোন এক প্রতিযোগটায় অংশ নিতে চলে গেলে ও আর আসেনি। এবার অলিম্পিকে রাশিয়াকে নিয়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনায় রিতার অলিম্পিকে অংশগ্রহণ আমাদের মধ্যে অন্যরকম আলোড়ন সৃষ্টি করে। নিজের অজান্তেই কি করে যেন ইয়ানা আর রিতার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমরা রিতার পক্ষে চলে যাই। কয়েকদিন থেকেই চেষ্টা করছিলাম জানতে মামুন সম্পর্কে, এক আধটু জানতেও পারছিলাম। কয়েক দিন আগে শেফালীর নেয়া এক ইন্টারভ্যু দেখে কেন যেন মনে হলো ও একটু অসুস্থ। পরে রবীনের লেখা থেকে জানলাম, মামুন ক্যান্সারে ভুগছে। প্রচন্ড কষ্ট পাওয়া ছাড়া করার ছিল না কিছুই। গতরাতে দুবনা থেকে মস্কো আসার জন্য যখন ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে মহসিন ফোন করে বললো মামুন মারা গেছে। অনেকদিন এরকম শকড হয়নি। কেউ বলছেন, মেয়ের সাফল্য দেখে গেলেন, এটাই শান্তনা। তা ঠিক, তবে তার পেছনে কত শ্রম, কত ত্যাগ, তা কি আমরা জানি? ক্যান্সার একদিনে মানুষ মারে না, অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। নিশ্চয়ই অনেক দিন থেকেই প্রচন্ড কষ্টে ভুগছিলেন, মেয়ে যাতে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, তার জন্য আক্ষরিক অর্থেই জীবন বাজি রেখে বেঁচেছিলেন, কেননা না জানতেন, অলিম্পিক শেষ হবার আগে, মেয়ে চ্যাম্পিয়ন হবার আগে কোনো মতেই হারলে চলবে না। জীবন-মরণের এই যুদ্ধে জিততেই হবে। মামুনের এই বীরত্বে কেউ কোনো পদক দেবে না, তবে আমরা নিশ্চয়ই তার জন্য গর্ব করতে পারি। চ্যাম্পিয়ন হওয়া খুব কঠিন, তবে চ্যাম্পিয়ন তৈরী করা কম কঠিন নয়। ব্র্যাভো মামুন!
দুবনা, ২৭ আগস্ট ২০১৬
দুবনা, ২৭ আগস্ট ২০১৬
Comments
Post a Comment