কথোপকথন

অফিসে বসে আছি, হঠাৎই ফোন বেজে উঠলো

আমি তো অবাক

দোস্তের ডাক

না মানে, ও ফোন করে সাধারনত রাত দুপুরে তাই চমকে উঠলাম, কি হোল, কার গুড়ে আমি বালি দিলাম আবার

-   দোস্ত, তুমার কি খাইয়া-দাইয়া কাজ কাম নাই যে সব গরুছাগলের স্ট্যাটাসে কমেন্ট লিখতে হইবো?

-   থাকব না কেন? আছে গরুছাগলের স্ট্যাটাসে কমেন্ট লেখাও তো একটা কাজ যারা পড়ে তারা তো আর গরুছাগল না, তাই না লেখলে মানুষ ভুল শিখবো

-   তা কথাডা তুমি হাচাই কইছ তা তুমাগো পুতিন কেমন আছে?       

-   পুতিনরে নিয়াই তো যত সমস্যা একজন তো জিগাইল, ওবামা মাত্র ৮ বছর ক্ষমতায় থাকে, তগো পুতিন এতদিন থাকে ক্যান?

-   তুমি কউ নাই, ইংল্যান্ডে, জার্মানিতে ভোটে জিতলে কেউ আরও বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারে?

-   না কই নাই অইড্যা ও এমনিতেই জানে আমি কইছি, পুতিন তো মাত্র ১৭ বছর ক্ষমতায়, তাও এ দেশের নিয়ম অনুযায়ী মানুষ ভোট না দিলে একবছর পরেই সে আর ক্ষমতায় থাকবো না কিন্তু  কিছু কিছু মানুষ যে পঞ্চাশ বছর বয়সেও গাধাই রইয়া গেলো, তাগোর কি করবা তাগো তো আর ভোট দিয়া মানুষ বানান যাইবো না

-   হ দোস্ত, কথাডা তুমি ঠিক কইছ ঐ হালারা কোন দিনই মানুষ হইবো না যাক গিয়া, এবার তুমার কথা কউ দিনকাল কিতা কাটতাছে              

-   কিতা আর কাটবো দিন যায় রাত্তির হয়, রাত্তির কাইট্যা ভোর হয় আমি কাম করি, ঘুমাই তুমি বিশ্বাস কইরব্যা না, আজকাল মাঝে মধ্যে সুজ্জ্যির আমার থিক্যা আগে উইঠ্যা পড়ে কত দিন ভাবতাছি সুজ্জ্যি উঠার ছবি তুলমু, কিন্তু হেই ব্যাট্যা কিছুতেই দাঁড়ায় না আমার লিগা

-   দোস্ত, তুমি ঐ লেখাডা পড়ছিলা? ঐখানে লেখা ছিল তুমি নাকি খুব রাগী, আর তার কারন তুমার ইডা নাই ওডা নাই

-   না দোস্ত পড়ি নাই আমি কি পস্তালিওন পেচকিন নাকি যে সাইকেল নাই বইল্যা রাগ কইর‍্যা থাকমু আমার ইডা –ওডার দরকার নাই আর যা দরকার তার সব আমার আছে লেখার কাগজ কলম, পড়ার বই, ছবি তোলার ক্যামেরা – সব আরও আছে প্রিয় কাজ, বউ-বাচ্চা – আর কি চাই? আসলে ওরা মনে করে অগোর মতো গাড়ি-বাড়ি না থাকলে যেন জীবনটাই মিছে তুমি জান একজন আমাকে লিখছে, সে অনেক স্বপ্ন নিয়া  ইউরোপে না গিয়ে সোভিয়েত দেশে গিয়েছিল, আর ওখানকার চোরাকারবারিদের পাল্লায় পড়ে ক্যাপিটালিস্ট হয়ে গেছিল

-   তাই নাকি?দোস্ত আমরাও কিন্তু ভালো ভালো জায়গা থিক্যাই সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়তে গেছি তুমি লেখ নাই

-   না লিখলে অনেক অক্ষর লিখতে হয় মাত্র ঊনপঞ্চাশ অক্ষর দিইয়া ওটা লেইখ্যা শেষ করা যাইবো না তবে জান কি, ঐ লোক মুখে যাই বলুক, মনে মনে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধন্যবাদ দেয় ঐ চোরাকারবারিদের কারনেই সে আজ এত বড় মালদার লোক

-   হ, কথাটা ঠিক কইছ আইজক্যা আমরা যে যেখানে আছি তা সোভিয়েত ইউনিয়নের কারনেই   

-   আরে দোস্ত আমাদের দেশটাই তো স্বাধীন হইছে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্যে

-   আইচ্ছ্যা দোস্ত, তুমার কি মনে হয়? উরা এত সোভিয়েত বিরোধী কথা বলে কেন?

-   জানি না তবে আমরা ঐ সময় নিজেরাই কিন্তু সোভিয়েত দেশের এই সব অনিয়মের সমালোচনা করতাম তুমার মনে আছে

-   থাকব না কেন সব মনে আছে

-   আর এই সব লোকরা তখন এই অনিয়মকে কাজে লাগিয়ে বার বার বাইরে যেত, টাকার পাহাড় তৈরি করতো আজ মনে হয় বিবেকে লাগে মনে হয় তাই  দোষ দেয় সোভিয়েত ব্যাবস্থাকে, সে দেশের মানুষদের।

-   না দোস্ত, এদের অনেকেই তখন পাক্কা কমিউনিস্ট ছিল। তুমার মনে নাই আমারে কি জ্বালান না জ্বালাইছে?

-   হ্যা, মনে থাকবো না ক্যান?

-   আসলে এরা সুবধাবাদী, যখন যেখানে থাকে ঐ জায়গার সুনাম করে সুবিধা নেয় আর কাজ হইয়া গ্যালেই তাগোর সমালোচনা করে।

-   তার মানে এরা многоразовый презерватив.  সবার বদামীতে অংশ নেয় আর নিজদের পকেট ভারী করে।

-   কতাডা তুমি মিছ্যা কউ নাই।


-   হুন, তুমারে আরেকডা কতা কই। সোভিয়েত দ্যাশে যে বালো-মন্দ আচে, হে তো আমরা জাইনত্যাম। তয় মনে করচিলাম মীরজাফর খালি আমাগোরই দ্যাশীয় প্রডাক্ট। তয় এখন দেহি সোভিয়েত শিক্ষা ব্যাবস্থাও মীরজাফরদের জন্ম দেয়।  

- -  তা যা কইছ। যাকগে দোস্ত, বেলা অনেক। আমার আবার বাইরে যাইতে হইবো। কাজ আছে। পরে কথা কমু নি।

-   ঠিক আছে। ভালো থাইকো।

-   বাই।

-   বাই।


মস্কো, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৭  


Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি