ছাউনার আড্ডায়
প্রায় দু মাস পরে আজ আবার গেলাম সাতার কাটতে। জলে নেমে দেখি
হাড্ডিতে জং ধরে গেছে। তাই মাত্র ২০০ মিঃ সাতার কেটে দৌড়ে চলে গেলাম ছাউনায়। চারিদিকে
সব পরিচিত মুখ। নীচে জায়গা না থাকায় চলে গেলাম উপরে যেখানে গরম সবচেয়ে বেশি। ১০০ ডিগ্রি
সেন্টিগ্রেডের উপরে। বসে আপন মনেই বললাম
- প্রায়
বাড়ির মত
- বাড়ি মানে? দেশে
গিয়েছিলি নাকি?
হঠাৎ আমাদের ল্যাবের ডাইরেক্টর বলে উঠলো
- বেচারা, দেশে
গিয়ে জমে গেছে। ওকে গরম হতে দে।
চারিদিক থেকে শুরু হল নানা প্রশ্ন।
- দেশে কেমন কাটলো?
- খুব ভালো।
এখানে বলে রাখি, রিসার্চ ইন্সটিটিউটগুলোতে মোটামুটি ১০
বছরের ছোট বড় সবাইকে নাম ধরে আর তুই-তুমি বলার রেয়াজ এ দেশে। কে কোন পোস্টে সেটা
বড় ব্যাপার নয়। আমাদের থিওরিটিক্যাল ল্যাব তো আরো এক কাঠি সরস, পারলে সবাই সবাইকে
এ ভাবে ডাকে। ঘটনা হচ্ছে ওখানে সবাই নিজ নিজ থিওরিতে চলে, নিজে তো বটেই, নিজের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডও।
ফলে সবাই নিজেকে মনে করে সে যেন এক ছোটোখাটো ভগবান। আর যদি কারো দু-চারটে চ্যালা-চামুণ্ডা
থাকে, তাকে আর পায় কে?
যেহেতু ছাউনার অধিকাংশ মানুষ লেখাপড়ার সাথে জরিত তাই
দেশে পড়াশুনার কথাই জিজ্ঞেস করলো বেশি। বললাম
- পড়াশুনার ক্ষেত্রে
ধর্মের প্রভাব বাড়ছে, বিশেষ করে ইসলামের।
- তাতে কাজ হয়?
- জানো, আমাদের
দেশে লোকে যত্রতত্র থুথু ফেলে, হিসু করে। তাই একবার কিছু লোক দেয়ালে আরবী ভাষায় কিসব লেখে। যেহেতু আরবী কোরানের ভাষা,
তাই মানুষ ওখানে হিসি করা বন্ধ করে দেয়।
- তার মানে
তোদের পড়াশুনা আরবী ভাষায় হয়, তাই কি?
- না না, তবে সব
জায়গাতেই ধর্মীয় ভাব থাকে। এমনকি এবারের বাংলা বইয়েও হিন্দু আর নাস্তিক বলে ভাষার
দিকপালদের লেখা বাদ দিয়ে ধর্মের বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের গুনগান করে এসব লেখা দেয়া
হয়েছে।
- তাতে পড়াশুনার
মান বেড়েছে?
- জানি না, কেবল
মাত্র নিরীক্ষা শুরু। তবে বিভিন্ন সময়ে ভালো রেজাল্ট করা ছেলেমেয়েদের জ্ঞানের যে
চিত্র দেখি, ভালো হয় পয়সা খরচ করে বই না ছেপে ওদের হাতে সাদা বই তুলে দিলে। ওরা
বরং নিজেরাই লিখুক যা খুশী আর যা পারে। যদি তাতে কিছুটা শেখে।
- এই নিয়মটা
শুধু তোদের দেশে কেন, সারা বিশ্বেই করা দরকার। এখানেও ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার যে
হাল। আচ্ছা লিখতে যে বলছিস, তা সেটা জানতে তো হবে।
- এটা আবার
সমস্যা নাকি? ইন্টারনেট ওদের শিখিয়ে দেবে।
কথা হচ্ছিলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। এর মধ্যে কে যেন জিজ্ঞেস
করলো
- তোদের দেশে
রাশিয়া থেকে যায় কেউ?
- যায় মানে?
হাজার হাজার, লাখ লাখ।
- বুঝলাম না!
- এখন তো আমাদের
দেশ সাইবেরিয়ান পাখি দিয়ে ভর্তি। আমি ওদের সাথে দেখা পর্যন্ত করতে গিয়েছিলাম।
- তাই নাকি? কি
কি পাখিরে?
- ঐরে, নাম তো
জিজ্ঞেস করা হয় নি। তবে হাঁস, পাতিহাঁস এসব ছিল।
- অনেকদিন থাকে?
- যতদুর জানি,
ওদের ৯০ দিনের সিঙ্গল এন্ট্রি ভিসা দেয় আমাদের সরকার। রিনিউ করে বলে শুনিনি।
আমার ভিসার কথা শুনে গম্ভীর ডাইরেক্টর পর্যন্ত হেসে উঠলো
উচ্চস্বরে।
- ঠিক আছে,
তোমরা ভিসার সুরাহা কর, আমি চললাম।
আমারও আবার জলে নামার সময় হয়ে এল। আমিও চলি।
দুবনা, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
Comments
Post a Comment