সুকুমারদা

মস্কোর ছাত্র জীবনে আমাদের মত অনেক দলছুট মানে যাদের বাবা, মা বা বড় ভাই সিপিবি, ন্যাপ বা অন্য কোন প্রগতিশীল দল বা সংগঠনের বড় নেতা ছিল না, ছাত্র ছাড়াও পড়তে আসতো অনেক পরিচিত নেতাদের আত্মীয়-স্বজন। আর যেহেতু এই নেতাদের অনেকেই ছিলেন আমাদের আদর্শ, আমরা তাদের ভাইবোনদেরকে ভিন্ন চোখে দেখতাম। তাদের একজন ছিল অমল ঢালী, প্রখ্যাত ছাত্র নেতা সুকুমার ঢালীর ভাই। ১৯৮৩ সালে আমি মস্কো আসার আগেই সুকুমারদা এক সুপরিচিত নাম। ঐ সময় কয়েক জন ছাত্রনেতার নাম করতে গেলেই সুকুমারদার নাম চলে আসতো। পরে উনি বিভিন্ন সময়ে মস্কো আসেন, আলাপ হয়, হয় ঘনিষ্টতা। তাছাড়া অমলের ভাই বলে একটা বিশেষ জায়গা ছিল তার আমাদের জীবনে।

গত ডিসেম্বরে যখন পার্টি অফিসে যাই রতনের সাথে, অমলকে নিয়ে কথা উঠলে চন্দন বললো, সুকুমারদা ভালো নেই। আমারও আর খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়নি, চন্দন বা রতনও খুলে বলেনি। মস্কো ফিরে অমলকে জিজ্ঞেস করলে ও ব্যাপারটা এড়িয়ে যায়। তাই ভেবেছিলাম ব্যবসা সংক্রান্ত কোন ঝামেলা হয়তো হবে। কিছু দিন আগে দেশে কার সাথে যেন কথা বলতে গিয়ে জানি সুকুমারদা ক্যান্সারে আক্রান্ত। অমলকে আবার ফোন করলাম, বললো, হ্যা একটু গাফিলতি হয়ে গেছে, তবে চেষ্টা চলছে তাকে দাড় করানোর।             

অমলের সাথে কথা হয় প্রায় প্রতিদিনই। আজও কিছুক্ষন আগে কথা হল পয়লা বৈশাখের প্রোগ্রাম নিয়ে। তখনও জানতাম না সুকুমারদা নেই। অমলও বলেনি। ফেসবুকে কিছুক্ষন আগে অমলের স্ট্যাটাস না দেখলে খবরটা হয়তো জানাই হতো না।    

কয়েক বছর আগে চলে গেলেন ফারুক ভাই, এখন সুকুমারদা। হয়তো রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলে এদের নামগুলো ঘন ঘন আসতো খবরের পাতায়, মৃত্যু সংবাদই অনেক দিন পরে তাদের সম্পর্কে একমাত্র সংবাদ হয়ে আসতো না আমাদের কাছে ফেসবুকের পাতায়।

মৃত্যু জীবনের শেষ, তবে কোন কিছুর শুরু নিশ্চয়ই, তা সে যতই অজানা হোক। এই নতুন যাত্রা শুভ হোক কমরেড।   

দুবনা, ০৫ এপ্রিল ২০১৭ 


Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা