গ্রুপ বিভ্রাট
বেশ কিছুদিন ধরেই আমাদের বিভিন্ন গ্রুপ নিয়ে নানা কথাবার্তা চলছে। একটা ভাইবার গ্রুপ থেকে অনেকগুল ক্লোনের জন্ম – এই সব আর কী। ফেসবুকেও দেখি গ্রুপের ছড়াছড়ি। এক গনমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়েই যে কত গ্রুপ, সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা নাই বা বললাম। মনে পড়ে, ১৯৯৪ সালে যখন দুবনা যাই চাকরি নিয়ে আর ইন্টারনেটের ইন্দ্রজালে ধরা পরি, কত যে চেষ্টা করেছি ওখানে বন্ধুদের খুঁজে পেতে। তার পর এল ফেসবুক, অদনাক্লাসনিকি আর ভকন্টাক্টের যুগ। এর আগে অবশ্য ছিল বিভিন্ন ফটো রিসোর্চ। এটা সামাজিক মাধ্যমের আগের যুগ। বিভিন্ন জায়গায় ছবি আপলোড করতাম ফিডব্যাকের জন্য, কিন্তু প্রায়ই উত্তরে “পেতাম ইস্রাইল থেকে শুভেচ্ছা” বা “পিটার থেকে শুভেচ্ছা “ এসব। তখন সামাজিক মাধ্যাম না থাকায় ছবির মাধ্যমে লোকজন যোগাযোগ রাখতো। ছবিটা ছিল নিমিত্ত মাত্র। আমিতো এখনও পেটে কোন কথা পাকালে (কূটবুদ্ধি
তো পেটেই পাকায়) তা ডাস্টবিনে যাবার আগেই ফেসবুক বা অন্য কোথাও আপলোড দেই, সাথে পুরানো দিনের অভ্যেসবশে ছবি। কেউ কেউ (যেমন শুভ) বলে ছবির সাথে তো কথার মিল দেখছি না, ভাবে আমার নিশ্চয়ই মাথায় স্ক্রু ঢিলা। আমিও ভাবি, ওদের মাথা নিশ্চয়ই টিউব লাইটের মত কাজ করে, নইলে তিরিশ বছরের বেশী সময় লেগে যায় এই সত্যটা আবিষ্কার করতে?
যাকগে ফিরে আসি গ্রুপের কথায়। জালাল লিখলো এ নিয়ে ভাইবার গ্রুপে। লিপি প্রশ্ন করলো। আর আমি ভেবে কুল পাইনা, এই যে আমরা সবাই পঞ্চাশের এদিক ওদিক দৌড়ঝাঁপ করছি, কিভাবে সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এত মুষড়ে পড়ি। ভাইবার বা ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ আছে, বন্ধু বা পরিচিতরা কোন না কোন কারণে আমন্ত্রন জানায়। চাইলে জয়েন করা যায়, না চাইলে নয়। সোভিয়েত ভিপুস্কনিকদের যে ভাইবার গ্রুপ তা মূলত আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য, একে অন্যকে চাইলে প্রিভিয়েত বলার জন্য। ওখানে খুব কম লোককেই সবাই ব্যক্তিগত ভাবে চেনে। তবুও আমরা সোভিয়েত বা রাশিয়া ফেরত – এটাই আমাদের এক করে। ওখানে সবার কথা যে ভালো লাগবে, সবাই যে আমার ব্যক্তিগত বন্ধু হবে তাতো নয়। কেউ যখন ওখানে প্রিভিয়েত বা গুড মর্নিং লেখে, সে কিন্তু তার পরিচিত আর প্রিয়জনদের মুখের কথা কল্পনা করেই লেখে। ঠিক তেমনি কেউ দেয় বিয়ের বিজ্ঞাপন, কেউ বা লেখে চুটকি। পত্রপত্রিকাতেও তো বিয়ের বিজ্ঞাপন থাকে, থাকে চুটকি। যদি বর বা কনের দরকার না থাকে, আমরা তো চোখমুখ বন্ধ করে এটা এড়িয়ে যাই, তবে এখানে পারি না কেন? এসব দেখে আমার ছাত্রজীবনের কথা মনে পড়ে। এটা
ছিল চিঠির যুগ। বাড়ি থেকে চিঠির অপেক্ষা করতাম, চিঠির অপেক্ষা করতাম ভিন্ন শহরের
বন্ধুদের। আমাদের চিঠির বক্সগুলো ছিল প্রতি রুমের জন্য, যেখানে থাকতো তিন বা চারজন
ছাত্র। কখনো কখনো চিঠিগুলো থাকতো একটা টেবিলে। খুঁজে নিজের চিঠি পেলে খুশী হতাম,
না পেলে বন্ধুরা পেল বলে ভাল লাগতো। কিন্তু বিরক্ত হইনি কখনো। তাহলে আজ কেন আমরা
যে খবর তা আমার জন্য না, সেটা এড়িয়ে যাই না, কেনই বা গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যাবার
প্রশ্ন তুলি? এভাবে চললে তো আমরা সবাই ওয়ানম্যান পার্টি হয়ে যাব। আমার অবশ্য সে ভয়
নেই। আমার নিজের মধ্যে এত বেশী স্ববিরোধীতা যে আমার ওয়ানম্যান পার্টিতেও হাজারো মতের
যুদ্ধ চলবে।
গতকাল লিপির লেখা
থেকে আরেকটা জিনিষ পরিষ্কার হোল। দেখা যাচ্ছে, এই যে অনেকগুলো গ্রুপ তৈরি হয়েছে, তার
সাথে আমিও জড়িত। এতদিন বুঝিনি। এর আগে আমি মাঝে মধ্যে আমাদের ভিপুস্কনিকদের গ্রুপে
আমার লেখার লিঙ্ক দিতাম। আমার লেখা নিয়ে তর্ক বিতর্ক হত, তাই একদিন আবিদ ভাই ফোন
করে বললো, “তুমি বরং যেসব লোক তোমার লেখা পড়তে আগ্রহী তাদের নিয়ে একটা গ্রুপ কর।
আমার তোমার লেখা ভাল লাগে, আমাকেও রাখতে পার।“ ওখান থেকেই আমার “নোটস ফ্রম দ্য পাস্ট”
গ্রুপ তৈরি, যেখানে শুধু আমার সোভিয়েত জীবনের বন্ধুরাই নয়, এর বাইরেও অনেকেই আছেন যারা
আমার লেখা পড়তে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বা আমি নিজে জাদের চাই আমার লেখা পড়াতে। তাই
যদি আপনারা গ্রুপ নিয়ে বিভ্রাটে পড়েন, বেটার দেখেন ওই গ্রুপের অ্যাডমিন কে, কনটেন্ট
কি আর তার পর নিজেই সিদ্ধান্ত নেন, ঠিক ওই গ্রুপে আপনার থাকার দরকার আছে কি না।
বর্তমানে যেটা দাঁড়াচ্ছে, সেটা আপনারা বিভিন্ন গ্রুপে নিজেদের নাম দেখে মনে করছেন
গ্রুপগুলো একে অন্যের ক্লোন, আর এই নিয়ে অযথাই চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন। আর এতে করে
বিভ্রান্তি বাড়ছে, অনেকেই অকারণে গ্রুপ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন। এতে ক্ষতি হবে
কিনা জানি না, তবে লাভ যে হবে না সেটা নিশ্চিত। কথাগুলো ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের
ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
আরেকটা কথা,
চুটকিগুলোকে হিজাব পড়ানোর দরকার নেই, তবে এই গ্রুপে পঁচিশ থেকে সত্তর পর্যন্ত সব
বয়েসের লোক আছে, আছে সেকেন্ড জেনারেশনের লোকজন। তাই ভাষার ক্ষেত্রে একটু খেয়াল
রাখলে কাউকেই অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে হবে না, আর গ্রুপ ত্যাগের প্রশ্নও আসবে না।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
মস্কো, ২২ এপ্রিল
২০১৭
Comments
Post a Comment