নুরু ভাইয়ের কাছে চিঠি
নুরু ভাই চলে গেলেন – অনেক দূরে যেখান থেকে এখনো পর্যন্ত কেউ ফিরেছে বলে
জানা নেই। পড়তেন মস্কোর ফার্স্ট মেডিক্যালে, তবে প্যাট্রিসে যাতায়াত ছিল খুব, তাই
মনেই হতো না, উনি অন্য দেশের মানুষ। শত ঝামেলায়ও মুখে থাকতো অকপট হাসি।
আমাদের ঘনিষ্ঠতা এখানে আসার পর থেকেই। বড় ভাইয়ের মত আমাদের খোঁজ নিয়েছেন,
দেখভাল করেছেন। ছুটির দিনে তাসের আড্ডায় পার্টনার হয়েছেন অনেক বার। খেলার
উত্তেজনায় কখনো কখনো হয়েছে বাকবিতণ্ডা – তাও হাঁসি মুখে, অন্তত নুরু ভাইয়ের দিক
থেকে।
মস্কোয় আমার পার্টি জীবনের শেষ দিকে আমাদের গ্রুপের দায়ভার পড়ে নুরু ভাইয়ের
হাতে। সময়টা কঠিন ছিল। মাত্র কিছুদিন আগে ছাত্র সংগঠনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মোখতার
ভাইয়ের সাথে আমার বেশ বাকবিতণ্ডা হয়েছে, মোখতার ভাই তার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে
আমাকে সতর্ক করেছেন, যেটাকে আমি অন্যায় মনে করেছি, এখনো করি। তাই আমিও গো ধরেছি “ঐ
সতর্কবানী উইথড্র করা হোক, মোখতার ভাই দুঃখ প্রকাশ করুক।“ এই নাজুক পরিস্থিতিতেই
নুরু ভাই আসেন এর একটা সুরাহা করতে। হয় নি। প্রথমে মোখতার ভাইকে রাজী করানো যায়
নি, পরে উনি নিজেই দলছুট হয়েছেন।
আমি মাস্টার্স শেষ করে দেশে আসি সাড়ে তিন মাসের জন্যে। ফেরার পর পার্টিতে
ব্যপক পরিবর্তন হয়। নুরু ভাই কয়েক বার কথা বলার চেষ্টা করেন, আমি অনড়। মোখতার ভাই
নেই, পার্টি আছে। পার্টিই ভুল স্বীকার করুক।
এরপর আর এসব ব্যপারে কথা হয় নি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ইতিহাস হয়েছে, ইতিহাস হয়েছে
এখানকার আমাদের পার্টিও। তবে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়নি। শেষ বার দেখা হয় ২০১১ সালের ২৫
ডিসেম্বর পিকনিকে। সেই আগের মতই হাসিখুশি। তারপর একদিন শুনলাম নুরু ভাই অসুস্থ।
মস্কো থেকে যেটুকু সম্ভব করার চেষ্টা করেছি। অনেকেই এগিয়ে এসেছে পৃথিবীর বিভিন্ন
প্রান্ত থেকে। এটা সাহস যুগিয়েছে আমাদের সবাইকে, কারন এ থেকে আমরা আবারও বুঝতে
পারি, আমরা একা নই, দূরে থাকলেও বন্ধুত্বের, কমরেডশীপের বাঁধন এতটুকু আলগা হয় নি। ভবিষ্যতেও
হবে না বলেই আশা রাখি।
সুখটা একান্ত ব্যক্তিগত। তবে যার মুখে এই হাঁসি সে শত দুখের মধ্যেও সুখী
হতে পারে। অন্তত আমার তাই বিশ্বাস। আপনি পারবেন। ভালো থাকবেন নুরু ভাই।
Comments
Post a Comment