গুগোলের ফাঁস
গতকাল (০৩ অক্টোবর ২০১৭) লাঞ্চের
পর ইন্সিটিউট যাচ্ছি, গেটে দেখি অসভালদো দাঁড়িয়ে। ও চেক আউট করছে। অসভালদো আমার পুরানো পরিচিত, আর্জেন্টিনায় বাড়ি।
এই শতাব্দীর গোড়ার দিকে দুবনায় ছিল অনেক দিন পিএইচডি করার জন্য। প্রায়ই একসাথে
আড্ডা দিতাম, তখন আমাদের একটা বাগানবাড়ি ছিল, যেখানে আপেল হতো। সেই আপেল কুঁড়াতে ও
সাহায্য করতো। এছাড়া ক্যাফের আড্ডা তো আছেই। এরপর ও চলে যায় নিজের দেশে, ওখানেই
কাজকর্ম করে। ই-মেইল বা ফেসবুকে মাঝে মধ্যে যোগাযোগ হয়। তাই অসভালদো দুবনা এল, অথচ
আমি জানলাম না – এটা কেমন যেন হিসেবনিকেশের বাইরে পড়ে গেল।
- প্রিভিয়েত অসভালদো! কবে এলি?
- প্রিভিয়েত বিঝান (ওর স্প্যানিস উচ্চারণে এমনটাই শোনায়
আমার নাম)। কেমন আছিস?
- ভালো। তোকে আর
বাইরে যেতে হবে না, চল আমার ওখানে । গল্প করি।
- চল।
- কবে এলি?
- এইতো গতকাল। আজ একটা সেমিনার ছিল। ওখান থেকেই বেরুচ্ছি। হোটেল
ছেঁড়ে দিতে হবে।
- তুই একাই, না কি লেরাও এসেছে (লেরা, মানে ভালেরা ওর বউ,
মস্কোর মেয়ে)?
- লেরা এখন সচিতে। আমরা ওখানে ছিলাম কয়েক দিন। সচি, আদলের,
মাইকপ। জানিস এসব জায়গা?
- হ্যাঁ। আমি সচি গিয়েছি অল্প সময়ের জন্য, মাইকপও – ওখান থেকে
কামেন্নমস্তিক গেছি লগনাকি যাবো বলে।
- তোর শরীর কেমন এখন? প্রেসার ঠিক আছে?
এখন আমার অবাক হবার পালা।
- মানে?
- গতকাল তোর নোট পড়লাম। গুগোলে ট্রান্সলেট করে। ওখানেই জানলাম
তোর প্রেসারের প্রবলেম।
- ছিল না। তবে হয়ে যাবে। আসলে প্রেসারটা বড় ব্যাপার নয়। সেভার
কথাটাই ওখানে আসল। তবে সবাই দেখছি ওটাকেই মিস করে যাচ্ছে।
- সেভা কেমন আছে? কত বছর হল ওর? মনিকা, ক্রিস্টিনা নিশ্চয়ই
অনেক বড় হয়ে গেছে।
- হ্যাঁ, সেভা ১৪ পেরিয়ে গেল। মনিকা ২৩, ক্রিস্টিনার ১৯
হবে ডিসেম্বরে।
- সময় খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়। এই তো সেদিন ওরা এইটুকু ছিল।
- ক্যাফেতে বসবি, না আমার ওখানে বসে চা খাবি?
- চল, ক্যাফেতেই বসি।
- কি খাবি? কফি?
- না, গ্রীন টি।
- আমি ব্ল্যাক।
- কেন, গ্রীন টি খাস না?
- আমি আমার রঙের চা-ই বেশী পছন্দ করি।
- তুই একটুও বদলালি না।
ক্যাফেতে বসে
মুলত কথা হল কাজ নিয়ে। হকিংএর সিঙ্গুলারিটি থিওরী, রায়চৌধুরী ইকুয়েশন, স্পিনর
ফিল্ড, স্পেস-টাইম আনিজোট্রপি এসব নিয়ে। এক সাথে কিছু করা যায় কিনা সে সব কথা।
আমারও কিছু কাজ ছিল, ওকেও যেতে হবে হোটেল থেকে চেক আউট করার জন্য। ও মস্কো যাবে,
থাকবে বিলায়েভা এলাকায়, নভেম্বরের ৭-৮ তারিখ পর্যন্ত। তাই আবারও দেখা হবে বলে
বিদায় নিলাম।
ও চলে গেলে ভাবলাম, আচ্ছা এই যে আমি বউ ছেলে মেয়েদের
নিয়ে লিখেই যাচ্ছি এই ভেবে যে ওরা বাংলা পড়তে পারে না, সেটা কি এতটাই নিরাপদ।
গুগোল ব্যাটা যদি যদি ওদের কানে কুবুদ্ধি দেয় আর আমার লেখার গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়
তখন তো ফাঁস নেয়া ছাড়া আমার অন্য কোন উপায় থাকবে না।
দুবনা, ০৪ অক্টোবর ২০১৭
Comments
Post a Comment