পিকনিক


গত ১৪ জুলাই প্রায় আট মাস পরে আমরা সবাই একত্র হলাম  হ্যাঁ, বাড়ির সবাই ফ্যামিলি গেট টুগেদার আর কি? ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেলে এই এক ঝামেলা সবাইকে কিছুতেই একসাথে পাওয়া যায় না ডিসেম্বরে নতুন বাসায় ওঠার পর কয়েকবার চেষ্টা করেও সবাইকে জড় করা যায়নি এবার আর উপায় ছিল না কিছু অফিসিয়াল কাজ ছিল যেখানে সবার উপস্থিতি দরকার তাই বললাম, কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও চলে এস শনিবার সকালে চার ভাইবোন ট্রেনে উঠে ছবি পোস্ট করলে নিশ্চিত হলাম যে ওরা আসছে। এদিক থেকে গুলিয়া সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে চলে গেল। আমি রইলাম বাসায়। কাজ শেষে ক্রিস্টিনা ফোন করে জানতে চাইল নেক্সট গাড়ি কয়টায়। বললাম
-       চল্লিশ মিনিট পরে। তাহলে আর বাসার আসার দরকার নেই। ওখান থেকেই চলে যা।
-       না, আমি বাসায় আসছি। তুমি খাবার রেডি কর।
-       ঠিক আছে। আমরা এরপরে সাস্লিকে (বারবিকিউ) যাব, সব রেডি। যদি পারিস থেকে যা।
-       না আমার কাজ আছে। আজই ফিরতে হবে।
-       দেখ যেটা ভালো মনে করিস।
এর মধ্য আমি দোকান থেকে রেডিমেড কিছু খাবার নিয়ে এলাম আর সাস্লিকের সরঞ্জাম। সেভাকে বললাম আমাকে মিট করতে। বাসায় ফিরে দেখি ওরা চলে এসেছে। ক্রিস্টিনা বলল
-       মনিকা কাজে ফোন করে দিয়েছে। আমি রাতে বা কাল সকালে ফিরব।
স্যান্ডউইচ, কেক এসব খেয়ে মনিকা আর ক্রিস্টিনা গেল ঘুমুতে। আমি সব রেডি করে আন্তন আর সেভাকে পাঠালাম বনে। বাসা থেকে বন কাছে। দুশ’ মিটার দক্ষিণে বন, আর দুশ’ মিটার উত্তরে বয়ে চলছে ভল্গা নদী। যদি মস্কো শহরে রাস্তাঘাট আর দালানকোঠার মাঝে মাঝে উঁকি দেয় বিশাল বিশাল পার্ক, তবে দুবনা ঠিক উল্টোটা। এখানে বিশাল বিশাল বনের মাঝে এখানে সেখানে দেখা যায় কিছু কিছু বাড়িঘর।
আমি দুবনায় আসি ১৯৯৪ সালের মে মাসে। এর দু’ বছর পর গুলিয়া আসে মনিকা আর আন্তনকে নিয়ে। আমরা তখন থাকতাম একেবারে বনের ভেতরে এক বাসায়। সময় পেলেই হাটতে যেতাম। গ্রীষ্মে বন দু’হাত উজার করে দিত বিভিন্ন বুনো ফল, মাশরুম ইত্যাদি। নব্বইয়ের দশকের আর্থিক সংকটের সে দিনগুলোয় বন ছিল আমাদের খাদ্য ভাণ্ডার। সে সময় সাস্লিক করা ছিল বিভিন্ন অর্থেই এক মহাযজ্ঞ। অনেক আগে থেকেই প্ল্যান করতে হত বন্ধুদের সাথে। মাংস কিনতে হত।  যেতাম কয়েকটা ফ্যামিলি মিলে। আগের দিন রাতেই মাংস ওয়াইন বা ভিনেগারে ভিজিয়ে রাখতাম। সকাল সকাল গিয়ে জায়গা খুঁজতাম। একদল যেত কাঠের খোঁজে, আরেক দল বসে বসে ডাল দিয়ে শিক তৈরি করত।  সে এক হুলস্থূল ব্যাপার। এখন সুপার মার্কেটের কল্যাণে এসব সোজা হয়ে গেছে। রেডিমেড সাস্লিক পাওয়া যায়, সেই সাথে কয়লার প্যাকেট, শিকসহ মাংস পড়ানোর বিভিন্ন রকম সরঞ্জাম, পোর্টেবল চুল্লী। আগে আমরা মাটি খুঁড়ে চারিদিকে ইট বসিয়ে চুল্লী করতাম। সেদিক দিয়ে সাস্লিক এখন অনেক সোজা হয়ে গেছে। আগে ছেলেমেয়েরা ব্যস্ত থাকতো ডালকুটো কুড়োতে, এখন স্মার্টফোনে ছবি তুলে বা মুভি দেখে সময় কাটায়। তারপরেও সবাই যে একসাথে হতে পেরেছি তাই বা কম কিসে।
আন্তন আর সেভা গিয়ে চুল্লী জ্বালাল। আমিও চলে এলাম এরই মধ্যে। তখন অলরেডি ৫ টা বেজে গেছে। প্রথম পোরশন সাস্লিক হতে হতে আর সবাই চলে এল। গুলিয়া, সেভা আর ক্রিস্টিনা বনে ঘুরে কিছু মাশরুম কুড়িয়ে আনল, যা কিনা ঘরে ফিরে রাতে রান্না করল গুলিয়া। সাথে গীটার ছিল। প্রায় রাত ৯ টা পর্যন্ত নিজেরা সাস্লিক খেয়ে আর বনের মশাদের রক্ত খাইয়ে গানবাজনা আর পুরনো দিনের স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে কাটল আমাদের সন্ধ্যা।          
দুবনা, ১৯ জুলাই ২০১৮







Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি