সমস্যা
ফেসবুকে বিভিন্ন রকমের স্ট্যাটাস
দেখে আমার বার বার স্কুলের দিনগুলোর কথা মনে হয়, মনে হয় পরস্পরকে বোঝার ক্ষমতা আমাদের
তখন বেশি ছিল। হাই স্কুলে পড়ার সময় আমাদের ক্লাসে বিভিন্ন গ্রামের ছেলেমেয়েরা ছিল। ছিল
বিভিন্ন রকমের ছেলেমেয়ে। মনে আছে কাসেম, বিচিত্র, আমি – আমরা পড়াশুনায় ভালো ছিলাম,
খেলাধুলায় ভালো ছিল লুতফর, শাহাদত, খলিল, ইমরান। কেউ কেউ আবার গান গাইত স্কুলের
অনুষ্ঠানে, কেউ পড়ত কবিতা। আমরা যদি ভালো রেজাল্ট করে স্কুলের জন্য সম্মান আনতাম,
লুতফররা আনত মেডাল। এভাবেই বিভিন্ন দিকে পারদর্শী ছেলেমেয়েদের নিয়ে ছিল আমাদের
ক্লাস। ছিল পরস্পারিক বন্ধুত্ব। এখনও দেশে গেলে চেষ্টা করি সবার সাথে যোগাযোগ
করতে। এরপরেও বিভিন্ন কালেক্টিভে ছিলাম, আছি। এইতো আমাদের বাংলাদেশ প্রবাসী পরিষদ
রাশিয়া। সেখানেও বিভিন্ন রকমের লোক। কেউ গান গায়, কেউ ভালো চাঁদা তোলে, কেউ বা
সাংগঠনিক কাজে পারদর্শী। আবার আছে আমার মত কেউ কেউ যারা যে কোন কাজের আগে সন্দেহ
প্রকাশ করে, দ্বিতীয় বার ভেবে দেখতে চায়। আবার এটাও জানি, আমরা একসাথে এই সংগঠন
প্রতিষ্ঠা করলেও সবার ছিল ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য। প্রথমে বুঝিনি, পরে কাজে কর্মে
দেখেছি। এ অনেকটা ছোটবেলায় জীবনের লক্ষ্য ঠিক করার মত। সবাই ডাক্তার হতে চায়
সমাজের সেবা করবে বলে, কিন্তু ডাক্তার হয়ে সমাজ সেবা করলেও অনেকেই এটাকে দেখে সমাজে সম্মান
লাভের, অনেক অর্থ উপার্জনের পথ। এতে ভালো বা মন্দের কিছু নেই। এটাই ডাইভারসিটি। এসবই
আমরা বুঝি, কিন্তু সবাই চাই অন্যেরা আমার মত ভাবুক, আমি যেভাবে বলি সেভাবে চলুক।
আর সেটা না হলেই ঝামেলা। তখন নিজেকে প্রশ্ন করি যদি একটা দ্বীপে সবাই ডাক্তার বা সবাই
ইঞ্জিনিয়ার বা দার্শনিক হয় সেটা ভালো, নাকি যদি সেখানে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,
নাপিত, ধোপা, কৃষক সব থাকে সেটা ভালো? আমার তো মনে হয় অধিকাংশ লোকই দ্বিতীয় অপশন
চাইবে। মনে আছে, যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে আসি তখন এখানে চুল কাটাতে লাগত ৩ থেকে ৫
রুবল। এক রুবলে ভরপেট খাওয়া যেত, মাংসের দাম ছিল দুই রুবল কেজি। অর্থাৎ তিন রুবল
দিয়ে চুল কাটানো ছিল সৌখিনতা। তাই আমাদের বন্ধুদের কেউ কেউ আমাদের চুল কেটে দিত।
যে ভালো পারে সে রান্না করত। এই আর কি। ঐ দিনগুলোয় রান্না ঘর থেকে খাবার পর্যন্ত
চুরি হয়ে যেত। নিত ল্যাটিন বা আফ্রিকানরা বন্ধুরা। খারাপ লাগত, কিন্তু এর মধ্যেও
অন্য ধরণের মজা ছিল। দেশ তো আরও বড় সমাজ। তাই সেখানেও সবই দরকার। আমি ১০০% সিওর যে
যারা ধর্মে বিশ্বাসী তারা সাম্যবাদ চায় না। কিন্তু এরাও দেখি চায় সবাই তার
ধর্মাবলম্বী হোক, তার মত করে চলুক। এই যে মানুষের নিজের মধ্যে হাজার বিপরীমুখিতা,
তার চিন্তা আর কাজের মধ্যে বিরধীতা সে এ নিয়ে কখনও ভাবে না। নিজের মধ্যে হাজার
কন্ট্রাডিকশন থাকলেও সে চায় অন্যেরা কন্ট্রাডিকশন মুক্ত হোক, নিঃশর্তভাবে তার
চিন্তা ভাবনাকে সমর্থন করুক। নিজেকে চেনার, নিজেকে বোঝার অপারগতাই মানুষের সবচেয়ে
বড় সমস্যা।
দুবনা, ০৬ নভেম্বর ২০১৮
Comments
Post a Comment