প্রদর্শনী


কিছুদিন পর আমাদের ফটোগ্রাফি ক্লাব ফোকাসের ছবি প্রদর্শনী।  বেশ কয়েক বছর বাদে এবার আবারো প্রদর্শনী করছি। ২০০৬ সালে আমরা যখন ক্লাব প্রতিষ্ঠা করি প্রতি বছরই প্রদর্শনী হত। এটা ছিল অনেকটা পরীক্ষার মত। সারা বছর যা তুললাম, যা শিখলাম তাকে বাস্তব করা। তাছাড়া ছবি তোলা আর সেই ছবিকে ঠিক ভাবে প্রিন্ট করে প্রদর্শনীর যোগ্য করে তোলা – দুটো পুরোপুরি ভিন্ন ব্যাপার।  তবে গত তিন বছর হল তাতে পড়েছে। মূলত তখন এসবে সাধারণ মানুষের যত আগ্রহ ছিল এখন ততটা নেই। সামাজিক মাধ্যমের বদৌলতে সবাই ছবি দেখে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, কন্টাক্ট এসব জায়গায়। এমন কি বিভিন্ন ফটোগ্রাফির সাইট আজকাল মানুষ টানতে পারে না। ফলে অনেক সময়, পরিশ্রম আর অর্থ ব্যয় করে ছবি প্রদর্শনী করলেও দেখা যায় দর্শক হাতে গণা কয়েকজন। তাছাড়া আজকাল যেমন সবাই নেতা, সবাই লেখক, সবাই ফটোগ্রাফার। অন্যের লেখা পড়ার, অন্যের ছবি দেখার সময় কোথায়? তাই গত কয়েক বছর হল প্রদর্শনী করব কি করব না তা নিয়ে দ্বিমত ছিল। অনেকটা আমার উতসাহেই এবার হচ্ছে। লিখেছি শেষ কাগুজে প্রদর্শনী।

আমরা প্রতি বৃহস্পতিবার ক্লাবে মিলি, গল্প করি, ছবি দেখি আর সেখান থেকেই ছবি বাছাই করি ভবিষ্যৎ প্রদর্শনীর প্রার্থী হিসেবে। এ ভাবে বছর শেষে প্রত্যেকের পোর্টফলিওতে বেশ ছবি জমে। প্রদর্শনীর আগে সেখান থেকে ১০ – ১৫ তা ছবি বেছে নিই প্রিন্ট করার জন্য। এখানেই শুরু হয় আসল সমস্যা। স্ক্রীনে যা ভালো লাগে প্রিন্টে সেটা নাও লাগতে পারে। তাছাড়া প্রিন্ট করতে গিয়ে নানা সমস্যা। স্ক্রীনে দেখছি এক, কাগজে অন্য রকম। ফলে কোন কোন ছবির অনেকগুলো প্রিন্ট নিতে হয়। আর সেটা সময় সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল।

এইতো সেদিন গেলাম ছবি প্রিন্ট করতে। প্রিন্ট দেখে মনে হল কন্ট্রাস্টটা একটু বাড়ানো দরকার। ছবি এডিট করে আবার গেলাম। এবার মনে হল, লাইনগুলো একটু শার্প হলে ভালো হয়। আসলে উন্নতির কোন শেষ নেই। আমার শিক্ষক বলতেন গবেষকদের কখনই আত্মতুষ্টিতে ভুগতে নেই। সেটা হলে কাজের বারোটা বাজলো। কোন কিছুই পারফেক্ট নয়। সেটাকে আরও ভালো করার জায়গা থাকে। আর সেই জায়গা থেকেই নতুন সত্যের, নতুন সুন্দরের সন্ধান করতে হয়। গবেষণা, লেখা, ছবি – যেকোনো কাজই তাই। নেশার মত। আরও ভালো করার নেশাটা যতদিন থাকে ততদিনই ভালবাসাটাও থাকে, থাকে সামনে চলার হাতছানি। এটাই জীবন। তবে সব কিছুরই অনেক ধাপ আছে। ধাপগুলো পেরুতে হলে সাময়িক বিরতি দরকার, দরকার কোন এক পর্যায়ে প্রাপ্ত ফলাফলে সন্তুষ্ট হওয়া। তা না হলে সারাজীবন শুধু শিখেই যেতে হবে, শিক্ষাটাকে কাজে লাগানোর সময়, সুযোগ, সাহস – কিছুই হবে না। দরকার দুটোই। শিখতে শিখতে করা আর করতে করতে শেখা।

স্ফুলিঙ্গ – আপাতত তিনটে প্রিন্ট নিলাম। জানি আরও ভালো করা যায়। তবে এটাও ঠিক সমস্যাটা আমি সন্তুষ্ট কিনা তাতে নয়, আমি সন্তুষ্ট হতে চাই কিনা তাতে।  
 
        
দুবনা, ২৩ নভেম্বর ২০১৮     




Comments

Popular posts from this blog

রাজনীতি

২৪ জুনের দিনলিপি

স্মৃতি